অঞ্জি নদীর সেতু। নিজস্ব চিত্র
দুর্গম হিমালয়ের পীর পঞ্জাল পর্বতশ্রেণির মধ্যে দিয়ে ১১১ কিলোমিটার পথে রেললাইন নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ হলেই সমতলের সঙ্গে ব্রডগেজ রেলপথে জুড়ে যাবে কাশ্মীর উপত্যকা। আগামী বছর ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে ওই কাজ সম্পূর্ণ করা হবে বলে শনিবার শ্রীনগরে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব।
২০০২ সালে জাতীয় প্রকল্পের মর্যাদা পাওয়া শ্রীনগর-উধমপুর-বারামুলা রেল লিঙ্ক প্রকল্পের দৈর্ঘ্য মোট ২৭২ কিলোমিটার। এর মধ্যে দক্ষিণে জম্মু থেকে কাটরার মধ্যে ২৫ কিলোমিটার এবং উত্তরে কাজীগুন্ড থেকে শ্রীনগর হয়ে বারামুলা পর্যন্ত ১৩৬ কিলোমিটার পথে নির্মাণকাজ ২০০৫ সাল থেকে ধাপে ধাপে সম্পূর্ণ হয়েছে। ওই অংশে রেল পরিষেবা খুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ভৌগোলিক প্রতিকূলতার কারণে কাটরা থেকে বানিহাল পর্যন্ত ১১১ কিলোমিটার রেললাইনের নির্মাণকাজ এত দিন সম্পূর্ণ করা যায়নি। ওইটুকু পথের মধ্যে ৭২ কিলোমিটার সুড়ঙ্গ দিয়ে যাবে এবং ১২ কিলোমিটার সেতুর উপর দিয়ে যাবে। যা নির্মীয়মান অংশের প্রায় ৯২ শতাংশ।
প্রকল্পটি অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামরিক দিক থেকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ইতিমধ্যেই প্রায় ৩৮ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হয়ে গিয়েছে। পার্বত্য কাশ্মীর উপত্যকার সঙ্গে সমতলের রেল যোগাযোগের বিষয়টিকে সামনে রেখে আগামী বছর লোকসভা নির্বাচনের আগে ওই প্রকল্প সম্পূর্ণ করার বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। চলতি বাজেটে ওই প্রকল্পের খাতে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ করেছে কেন্দ্র। আগামী বছর প্রকল্প সম্পূর্ণ হলে পাহাড়ি পথে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ছোটানোর কথাও এ দিন আগেভাগে শ্রীনগর স্টেশনের এক অনুষ্ঠানে শুনিয়েছেন রেলমন্ত্রী।
ওই প্রকল্পের অধীনে চন্দ্রভাগা (চেনাব) নদীর উপনদী অঞ্জি নদীর উপরে নির্মীয়মান ঝুলন্ত রেলসেতুর একটি খণ্ডাংশ উত্তোলনের কাজ হয় এ দিন। নদীখাত থেকে ৩৩১ মিটার উচ্চতায় ওই সেতু ভারতের একমাত্র ঝুলন্ত রেলসেতু। ইস্পাতের তৈরি ১৪০ টন ওজনের ওই খণ্ডাংশ ১০ মিটার দীর্ঘ। ৪৭৩ মিটার দীর্ঘ ঝুলন্ত সেতুর ৪৭টি খণ্ডাংশের মধ্যে ৪২টি বসানোর কাজ ইতিমধ্যেই মিটে গিয়েছে। আগামী মে মাসের মধ্যে বাকি পাঁচটি খণ্ডাংশ বসিয়ে সেতুর কাজের বড় অংশ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোঙ্কন রেলের আধিকারিকেরা।
নদীখাত থেকে প্রায় ১৩৪তলা বাড়ির সমান উচ্চতা দিয়ে রেলসেতুতে ট্রেন ছোটানোর জন্য বিশেষ প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। নবীন ভঙ্গিল পর্বতে সেতু নির্মাণের অজস্র প্রতিকূলতার মুখোমুখি হওয়া ছাড়াও বিশেষ সতর্কতা নিতে হচ্ছে ভূমিকম্প এবং আবহাওয়ার কথা ভেবে। অঞ্জি নদীর উপরে নির্মীয়মান সেতুটি ভূমিকম্প প্রবণ ‘সাইসমিক জ়োন ৪’-এর অংশ। ফলে সঙ্কীর্ণ খাতে সেতুর ভার রাখতে ১৯৬ মিটার উঁচু স্তম্ভ তৈরি করা হয়েছে। মোট ৪৭টি কেবল্ সেতুর ভার ধরে রাখবে। মাটির গভীরে চুনাপাথরের খাঁজে প্রায় ৪০ মিটার গভীর ভিত তৈরি করা হয়েছে ওই স্তম্ভের। প্রায় সাড়ে আট হাজার টন ইস্পাত ব্যবহার করা হয়েছে ওই সেতুতে। ঘণ্টায় ২১৩ কিলোমিটার গতিতে ঝড় হলেও অক্ষত থাকবে ওই সেতু। তবে ওই উচ্চতায় ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার গতিতে হাওয়া বইলেই আপনা থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। এ ছাড়া, প্রতি মুহূর্তে সেতুর স্বাস্থ্যের হাল হকিকত জানতে বিশেষ যন্ত্র বসানো হচ্ছে। তাপমাত্রার পরিবর্তনে সেতুর ধারণ ক্ষমতার কোনও বদল ঘটছে কি না, তা-ও লক্ষ রাখা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy