সাড়ে তিন দশকেরও বেশি সময় পরে ভারত ফের মাঝারি মাপের যাত্রিবাহী বিমান তৈরি করবে। সাধারণ যাত্রী পরিবহণের জন্য এসজে-১০০ তৈরি হবে ভারতে। এর জন্য রুশ সংস্থা ‘ইউনাইটেড এয়ারক্র্যাফ্ট কর্পোরেশন’ (ইউএসি)-এর সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (মউ) স্বাক্ষর করেছে ভারতের ‘হিন্দুস্তান এরোনটিক্স লিমিটেড’ (হ্যাল)। সমঝোতা অনুসারে, ভারতীয় উড়ান সংস্থাগুলির জন্য এসজে-১০০ বিমান তৈরি করার স্বত্ব পেয়েছে হ্যাল।
এর আগে ১৯৬১ সালে যাত্রিবাহী বিমান ‘অভ্র এইচএস-৭৪৮’ তৈরি শুরু করেছিল হ্যাল। তবে ১৯৮৮ সালে তা আবার বন্ধও হয়ে যায়। মাঝে ৩৭ বছরের ব্যবধানের পরে ফের রুশ সংস্থার সহযোগিতায় ভারতে মাঝারি মাপের অসামরিক বিমান তৈরি শুরু হচ্ছে। এসজে-১০০ বিমানগুলি সাধারণত স্বল্প দূরত্বের যাত্রার জন্য তৈরি। এগুলি বোয়িংয়ের ‘ড্রিমলাইনার’-এর মতো বড় বিমান নয়। অন্তর্দেশীয় উড়ান পরিষেবায় সাধারণত যে মাপের বিমান ব্যবহার হয়, এগুলিও সেই রকমই।
এখনও পর্যন্ত ২০০টিরও বেশি এসজে-১০০ বিমান তৈরি হয়েছে। ১৬টিরও বেশি উড়ান সংস্থা এই বিমানগুলিকে ব্যবহার করে। হ্যাল এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, স্বল্প দূরত্বের যাত্রার জন্য এসজে-১০০ ‘গেম চেঞ্জার’ হয়ে উঠতে পারে। ভারতে অন্তর্দেশীয় বিমান যোগাযোগকে আরও নিবিড় করতে ‘উড়ান’ প্রকল্প শুরু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই প্রকল্পের আওতায় দেশে স্বল্প দূরত্বের বিভিন্ন রুটে বিমান চলাচল চালু করতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র। বিমানবন্দরের সংখ্যাও বৃদ্ধি করতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় ‘উড়ান’ প্রকল্পের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট ‘ন্যারো-বডি’ এসজে-১০০ বিমান তৈরি করতে উদ্যোগী হল হ্যাল।
সোমবার রাশিয়ার মস্কোয় দুই সংস্থার মধ্যে মউ স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ বিষয়ে বিবৃতিতে হ্যাল উল্লেখ করেছে,“হ্যাল এবং ইউএসি-র মধ্যে এই সহযোগিতা দুই সংস্থার পারস্পরিক আস্থার ফল। এই প্রথম ভারতে সম্পূর্ণ যাত্রিবাহী বিমান তৈরি করা হবে। এর আগে এই ধরনের শেষ উদ্যোগ ছিল হ্যাল-এর অভ্র এইচএস-৭৪৮। ১৯৬১ সালে সেগুলি তৈরি শুরু হয়েছিল এবং ১৯৮৮ সালে বন্ধ হয়ে যায়।” তারা আরও জানিয়েছে, আগামী ১০ বছরের মধ্যে অন্তর্দেশীয় উড়ানের জন্য ভারতের ২০০টিরও বেশি বিমানের প্রয়োজন রয়েছে। এ ছাড়া ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্বল্প দূরত্বের বিদেশি পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে যাতায়াতের জন্য আরও ৩৫০টি বিমানের প্রয়োজন রয়েছে।
আরও পড়ুন:
বর্তমানে বিশ্বে মূলত দু’টি সংস্থাই যাত্রিবাহী বিমান তৈরির ক্ষেত্রে বাজারে আধিপত্য তৈরি করে রেখেছে— মার্কিন সংস্থা বোয়িং এবং ইউরোপীয় সংস্থা এয়ারবাস। এ বার ভারতেও ফের মাঝারি মাপের অসামরিক বিমান তৈরি শুরু হবে। অনুমান করা হচ্ছে, বোয়িং এবং এয়ারবাসের উপর নির্ভরশীলতা কমানোর জন্যই এই পদক্ষেপ করা হচ্ছে। মউ স্বাক্ষরের পরে বিবৃতিতে হ্যাল আরও জানিয়েছে, এসজে-১০০ বিমান তৈরি করা দেশীয় বিমান পরিষেবা ক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করছে। এই উদ্যোগ ভারতের অসামরিক বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রকে ‘আত্মনির্ভর ভারত’ হিসাবে তুলে ধরার দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে দেবে বলে দাবি হ্যালের।