আমেরিকার সেনা দিবস উদ্যাপনে যোগ দিতে পাকিস্তানি সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির সে দেশে যাচ্ছেন বলে গোয়েন্দা সূত্রে খবর। অন্য দিকে আমেরিকান আইনসভা সেনেটের শুনানিতে শীর্ষ আমেরিকান সেনা কর্তা জেনারেল মাইকেল ই কুরিল্লা জানিয়েছেন ভারত ও পাকিস্তান, উভয় দেশই আমেরিকার প্রয়োজন। কারণ, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাকিস্তান ‘বড় মাপের অংশীদার’। পহেলগাম হামলা ও ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পরে ভারত যখন গোটা বিশ্বে সন্ত্রাসে পাক মদতের কথা তুলে ধরছে তখন এই ঘটনা দিল্লির পক্ষে অস্বস্তিকর হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করছেন কূটনীতিকেরা।পহেলগাম হামলার পিছনে পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। বস্তুত ঘটনার কিছু দিন আগে তাঁর একটি উত্তেজক বক্তৃতা প্রকৃতপক্ষে জঙ্গিদের সঙ্কেত দিয়েছিল বলে ধারণা দিল্লির।‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষবিরতি তাঁরই প্রশাসনের মধ্যস্থতায় হয়েছে বলে দাবি করেছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার পর থেকে তাঁর প্রশাসন ভারত ও পাকিস্তানকে একই পংক্তিতে আনা শুরু করেছে বলেও মত কূটনীতিকদের। যা ভারতের পক্ষে সমস্যাজনক বলে মনে করেন তাঁরা। তবে ভারত সরকারের দাবি, পাক সেনার ডিজিএমও সংঘর্ষবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিলেন।গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ১৪ জুন আমেরিকার সেনা দিবসের উৎসবে যোগ দিতে সে দেশে যাবেন জেনারেল মুনির। সূত্রের মতে, এই সফরের সময়ে আমেরিকার তরফে আফগানিস্তান ও ভারত-বিরোধী জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পাকিস্তানকে চাপ দেওয়া হতে পারে। সূত্রের মতে, চিন-পাকিস্তান আর্থিক করিডর-সহ নানা প্রকল্পের ফলে বেজিং ও ইসলামাবাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা ক্রমশ বাড়ছে। যার ফলে পাকিস্তানের নিরপেক্ষতা নিয়ে আমেরিকার মনে সংশয় তৈরি হয়েছে। সূত্রের আরও দাবি, আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সক্রিয় তেহরিক ই তালিবান পাকিস্তান জঙ্গি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আমেরিকার কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আদায়ের চেষ্টা করবে পাকিস্তান। পাশাপাশি নানা বিষয়ে আমেরিকার মধ্যস্থতা চাইতে পারেন মুনির। তবে এ নিয়ে আমেরিকার অবস্থান বদলানোর সম্ভাবনা কম বলেই ধারণা ভারতীয় সূত্রের।মুনিরকে আমন্ত্রণের পাশাপাশি আমেরিকান সেনেটের শুনানিতে সেনা কর্তা জেনারেল মাইকেল ই কুরিল্লার বক্তব্যেও ইসলামাবাদকে বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ওই শুনানিতে আইএস-খোরাসান জঙ্গি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাক সেনা ও আসিম মুনিরের ভূমিকাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন কুরিল্লা। তাঁর কথায়, “এ জন্য আমাদের পাকিস্তানকেও প্রয়োজন। আমি মনে করি না ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক থাকলে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা যাবে না।” কুরিল্লার দাবি, আফগানিস্তানে সক্রিয় আইএস-খোরাসান গোষ্ঠী আমেরিকার মূল ভূখণ্ডেও হামলা চালানোর চেষ্টা করছে। আমেরিকার দেওয়া ‘সীমিত গোয়েন্দা তথ্য’-এর ভিত্তিতেই পাকিস্তান ওই জঙ্গি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছে। তাতে ওই গোষ্ঠীর বেশ কয়েক জন জঙ্গি নিহত হয়েছে। ধরা পড়েছে পাঁচ জন জঙ্গি নেতা। কুরিল্লার কথায়, “২০২১ সালের অগস্টে আফগানিস্তান থেকে আমেরিকান সেনা প্রত্যাহারের সময়ে কাবুল বিমানবন্দরে আত্মঘাতী হামলার চক্রী মহম্মদ শরিফুল্লাকে প্রত্যর্পণ করেছে পাকিস্তান। জেনারেল মুনির আমাকে ফোন করে বলেন, আমরা শরিফুল্লাকে ধরেছি। তাকে প্রত্যর্পণ করতে চাই। দয়া করে আপনার প্রতিরক্ষাসচিব ও প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলুন।” কুরিল্লা জানান, আফগান তালিবানের অভিযানের ফলে এখন আইএস-খোরাসান গোষ্ঠীর জঙ্গিরা পাক-আফগান সীমান্তে আশ্রয় নিচ্ছে। ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় সন্ত্রাস-দমনে পাকিস্তানের গুরুত্ব বাড়বে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)