Advertisement
E-Paper

ইন্টারনেট আনছে অবসাদ! রোগীর সংখ্যা এইমস-এ বেড়ে দ্বিগুণ

একাকিত্ব ও মানসিক অবসাদে উত্তরোত্তর বেড়ে চলা ইন্টারনেট-আসক্তি যে কিশোর ও যুব সম্প্রদায়ের কাছে অভিশাপ হয়ে উঠেছে, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এইমস)-এর বিহেভিয়্যারাল অ্যাডিকশান ক্লিনিক।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৮ ১৮:৩১
ছবি- সংগৃহীত।

ছবি- সংগৃহীত।

দূরকে এক লহমায় কাছে আনার সেরা হাতিয়ার ইন্টারনেট কি আমাদের উদ্বেগ, আশঙ্কারও কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে? কিশোর, যুবদের মানসিক স্থিতাবস্থায় আঘাত হানছে? একাকিত্ব ও মানসিক অবসাদে উত্তরোত্তর বেড়ে চলা ইন্টারনেট-আসক্তি যে কিশোর ও যুব সম্প্রদায়ের কাছে অভিশাপ হয়ে উঠেছে, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এইমস)-এর বিহেভিয়্যারাল অ্যাডিকশান ক্লিনিক। চালু হওয়ার পর গত দু'বছরে ওই ক্লিনিকে রোগীর সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।

এইমস-এর বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, রোগীদের বেশির ভাগই স্কুল, কলেজের ছাত্রছাত্রী। যাদের অর্ধেকেরই বয়স সবে ১৪ বছর পেরিয়েছে। আর রোগীদের দুই-তৃতীয়াংশের বয়স ২০ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে। তীব্র ইন্টারনেট-আসক্তির জন্য অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরা 'ভয়াবহ আচরণগত ও মানসিক সমস্যায়' ভুগছে। আর কিশোর, যুবদের মধ্যে এই সমস্যা উত্তরোত্তর বাড়ছে।

সেই মানসিক অবসাদ ছড়াচ্ছে কী ভাবে?

দেশের যুব সম্প্রদায়ের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে হালে একটি সমীক্ষা হয়েছে সরকারি স্তরে। সেই ন্যাশনাল মেন্টাল হেল্থ সার্ভের রিপোর্ট বলছে, ১৮ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে থাকা ছেলেমেয়েদের মানসিক ভাবে অবসাদগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা ৭.৩৯ শতাংশ বেড়েছে। এইমস-এর সাইকিয়াট্রির বিভাগীয় প্রধান ও ন্যাশনাল ড্রাগ ডিপেন্ডেন্স ট্রিটমেন্ট সেন্টার (এনডিডিটিসি)-এর শীর্ষকর্তা অধ্যাপক আর কে চাড্ডা জানাচ্ছেন, তা সে অবসাদই হোক বা বদমেজাজ অথবা অযথা টেনশন, দেশের যুব সম্প্রদায়ের ২০ থেকে ২৫ শতাংশই কোনও না কোনও ভাবে মাসিক বৈকল্যের শিকার হয়ে পড়ছেন।

ইন্টারনেট-আসক্তি বলতে কী বোঝায়?

ইন্টারনেট-আসক্তি বলতে বোঝায়, স্কুল, কলেজের ক্লাস, প্রাইভেট টিউশন, পড়াশোনায় ফাঁকি দিয়ে, বই পড়ার নেশাকে 'বাই বাই' জানিয়ে, বাড়ির অন্যান্য কাজে অনীহা দেখিয়ে দিন-রাত শুধুই ইন্টারনেটে ডুবে থাকা। বিভিন্ন গেমিং কনসোল, জুয়া বা পর্নোগ্রাফিক সাইটগুলিতে আকণ্ঠ ডুবে থাকা। অল্পবয়সী ছেলেদের সঙ্গে সঙ্গে মেয়েরাও এই ভাবে আসক্ত হয়ে পড়ছেন ইন্টারনেটে।

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের এই ভাবে ইন্টারনেটে আসক্ত হয়ে পড়ে বিপথগামী হওয়ার জন্য তাদের মা, বাবা, অভিভাবকরাও দায় এড়াতে পারেন না।

আরও পড়ুন- জোর করে চুমু খেয়ে অভিজিৎ বলল, কী ভাব আমাকে! # মিটু বিতর্কে অভিযোগ বিমানসেবিকার

আরও পড়ুন- ‘বললাম, সুস্থ ভাবে দাঁড়াতে পারছ না? ওরা বলল, এটা মেট্রো, হতেই পারে...’​

এইমস-এর ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট রচনা ভার্গব বলছেন, "মা, বাবা, অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানদের ওপর নিয়মিত ভাবে নজর রাখলে এটা হত না। তাঁরাও তাঁদের নিজেদের জগতে, কর্মক্ষেত্রে এত বেশি মেতে থাকছেন যে, সন্তানদের যতটা নজরে নজরে রাখা উচিত তাঁদের, তাঁরা তা করছেন না। তাই অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরাও নিজেদের কোনও বাঁধাধরা রুটিনের মধ্যে ধরে রাখতে ভুলে যাচ্ছে। যদিও অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের বেড়ে ওঠার জন্য একটা নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চলার প্রয়োজনকে কোনও ভাবেই অস্বীকার করা যায় না।"

কী কী করা উচিত মা, বাবা, অভিভাবকদের?

রচনার পরামর্শ, মা, বাবা, অভিভাবকরা আরও বেশি সময় দিন তাঁদের অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের। বয়ঃসন্ধির সময় তাঁদের ছেলেমেয়েরা কী কী করছে, তার ওপর তাঁদের কড়া নজর রাখা উচিত। অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের আরও বেশি আনন্দে মজিয়ে রাখার বিকল্প উপায়ের কথা মা, বাবা, অভিভাবকদেরই চিন্তাভাবনা করে খুঁজে বের করতে হবে। কারণ, অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের ভাবনা-চিন্তা, কৌতূহলের আলাদা আলাদা বিষয় থাকে. ক্ষেত্র থাকে। সেটা মা, বাবা, অভিভাবকদের বুঝতে হবে। অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের সমাজের মূল স্রোতে আনার জন্য, পরিবার-পরিজনের সঙ্গে মেলামশা বাড়ানোর জন্য মা, বাবা, অভিভাবকদেরই উদ্যোগী হতে হবে।

ভার্চুয়াল দুনিয়ায় ডুবে যাওয়ার সুযোগ বেড়েছে...

বিশেষজ্ঞদের বেশির ভাগেরই বক্তব্য, ইন্টারনেটের নেশায় বাস্তবটাকে উত্তরোত্তর ভুলে যাচ্ছে অল্পবয়সীরা। কারণ, ওই বয়সটা কল্পনার বয়স। তখন ইন্টারনেটের ভার্চুয়াল দুনিয়াতে ডুবে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। তার কারণ, ইন্টারনেটে অ্যাকসেস করাটা এখন জলের মতো সহজ হয়ে গিয়েছে। দামে সস্তা হয়েছে বলে এখন ঘরে ঘরে কম্পিউটার। ব্রডব্যান্ডের সুবিধা ও গতি বাড়ছে উত্তরোত্তর। আর তার খরচও কমছে, অনেক সংস্থাই এখন ব্রডব্যান্ডের সুযোগসুবিধা দিচ্ছে বলে। প্রতিযোগিতায় ব্রডব্যান্ড পরিষেবার ব্যয় কমছে। অন্য দিকে, পেশাগত ও অন্যান্য কারণে, মা, বাবা, অভিভাবকরাও এখন আগের চেয়ে অনেক কম সময় দেন তাঁদের সন্তানদের।

মদ, সিগারেট আর ইন্টারনেট-আসক্তি

ফলে, অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যে একাকিত্ব বেড়েই চলেছে, বলছেন মনস্তত্ত্ববিদরা। তা কাটানোর একটা প্রধান উপায় যদি হয় সিগারেট, মদ খাওয়া বা অন্যান্য মাদকের নেশায় ডুবে থাকা, তা হলে আর একটা উপায় হল ইন্টারনেটে আকণ্ঠ ডুবে থাকা। যাকে বলে, ইন্টারনেট-আসক্তি।

এইমস-এর সাইকিয়াট্রি বিভাগের অধ্যাপক প্রতাপ সারণের কথায়, "পারিবারিক বা সামাজিক সম্পর্কগুলির বেড়ি-বাঁধন এখন আগের চেয়ে অনেক আলগা হয়ে গিয়েছে। ফলে, অল্পবয়সীদের মধ্যে একাকিত্বের জন্ম হচ্ছে। তার জন্য তারা অবসাদে ভুগতে শুরু করেছে। সেই অবসাদটা ক্রমশ বাড়ছে ও তা দ্রুত এক জনের থেকে অন্য জনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। সংক্রামিত হচ্ছে। এতে ঘনঘন তাদের মেজাজ বিগড়ে যাচ্ছে। তারা খিটখিটে হয়ে পড়ছে।"

একাকিত্বের জন্য অবসাদ যেমন একটা দিক, ঠিক তেমনই ইন্টারনেট-আসক্তির দরুন পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হলেও অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ছে অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরা। তার মানে, অবসাদ যেমন অল্পবয়সীদের আরও বেশি করে টেনে আনছে ইন্টারনেট-আসক্তির দিকে, তেমনই ইন্টারনেট-আসক্তি অল্পবসীদের তীব্র অবসাদের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

অধ্যাপক সারণের কথায়, "এই সমস্যা থেকে বের করে আনার জন্য বুঝে-শুনে ইন্টারনেট ব্যবহারের ভাল দিকগুলি অল্পবয়সীদের সামনে তুলে ধরতে হবে। ইন্টারনেট-আসক্তির খারাপ দিক ও তার জন্য আগামী দিনের অন্ধকার জীবনের আশঙ্কাগুলি বুঝিয়ে বলতে হবে অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের।"

AIIMS Internet Addiction Behavioural Addiction Clinic এইমস
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy