Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

নেটওয়ার্ক ধরতে যদি চাও তো মগডালে যাও

পছন্দসই ডালে গুছিয়ে বসে কাগজটা বার করবেন সুনীল। এ বার ওই তালিকা মিলিয়ে চলবে ‘কাজ’— গান কি সিনেমা ডাউনলোড, চাকরির ফর্ম ভরা।

অশ্বত্থের মগডালে নেটওয়ার্ক-শিকারিরা। ঝাড়খণ্ডের সরযূ গ্রামে।— নিজস্ব চিত্র।

অশ্বত্থের মগডালে নেটওয়ার্ক-শিকারিরা। ঝাড়খণ্ডের সরযূ গ্রামে।— নিজস্ব চিত্র।

আর্যভট্ট খান
রাঁচী শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:২৩
Share: Save:

নাস্তা সেরে মগডালে চললেন সুনীল। বগলে ল্যাপটপ। পকেটে একটা লিস্ট। এখন দিনটা কাটবে অশ্বত্থ গাছের টঙে।

পছন্দসই ডালে গুছিয়ে বসে কাগজটা বার করবেন সুনীল। এ বার ওই তালিকা মিলিয়ে চলবে ‘কাজ’— গান কি সিনেমা ডাউনলোড, চাকরির ফর্ম ভরা। ঝাড়খণ্ডের লাতেহার জেলার সরযূ গ্রামে সুনীল কুমারের একটা মোবাইলের দোকান আছে বটে। কিন্তু বেশির ভাগ সময়েই তাঁকে পাওয়া যাবে ওই মগডালে।

উপায় কী! এ গ্রামের গাছে গাছে শুধু পাখি নয়,বাসা বাঁধে ইন্টারনেটও। কিন্তু পাখির মতো মাঝে মাঝে মাটিতেও নেমে আসাটা ধাতে নেই সেই সিগন্যালের। তার দেখা মেলে শুধু গাছেই। অকপট সুনীল বলে ফেলেন, ‘‘গ্রামের অনেকেরই হাতে স্মার্টফোন চলে এসেছে। অল্পবয়সি ছেলেমেয়েরা মোবাইলে গান, সিনেমা নামাতে চায়। চাকরির ফর্ম ভরা, অনলাইন শপিংও করে দিতে হয়!’’

অতএব— ‘নেট চাও তো গাছ বাও’!

জেলা সদর থেকে মাত্র ২৫-৩০ কিলোমিটার দূরে সরযূ। ক’দিন আগে পর্যন্ত যে গ্রামের বাসিন্দারা জানতেন, মাথা খুঁড়ে মরলেও তাঁরা ইন্টারনেট পাবেন না। অথচ ঝাড়খণ্ডের প্রতি গ্রামে ক্যাশলেস লেনদেন চালুর স্বপ্ন দেখছেন মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস। প্রতিটি দোকানে ‘পয়েন্ট অফ সেলস’ (পিওএস) মেশিন বসানোর কথাও বলছে সরকার। কিন্তু ওই পর্যন্তই। নেটের কাজকর্ম থাকলেই সরযূবাসীকে পাড়ি দিতে হতো লাতেহারে।

আরও পড়ুন: দিল্লির হাসপাতালে ভর্তি অসুস্থ সনিয়া

হঠাৎ এক দিন কে যেন পেলেন আলাদিনের প্রদীপ। দেখলেন, গ্রামের দু’টো বিশাল বট-অশ্বত্থ গাছের মাথায় উঠলেই পাওয়া যাচ্ছে ইন্টারনেট! বিশাল এক তেঁতুল গাছেও ইন্টারনেটের বাসা।

ব্যস! এখন রোজ সকাল থেকে বিকেল, সরযূ গ্রামে গেলেই এই তিনটি মহাবৃক্ষের মগডালের বসা কিছু তরুণকে চোখে পড়বেই। সবাই ব্যস্ত। কারও হাতে ল্যাপটপ, কারও স্মার্টফোন। আর গাছে চড়তে অসুবিধে হলে সুনীলরা তো আছেনই।

হাতে স্মার্টফোনটা দেখিয়ে গ্রামের মেয়ে নীতা কুমারী বললেন, ‘‘কিছু ভোজপুরি ছবির গান নামাতে চাইছিলাম। সুনীল ভাইয়া বটগাছে উঠে গান ডাউনলোড করে দিলেন।’’ সুনীলের মতোই ‘সার্ভিস’ দিচ্ছেন সরফরাজ আনসারি। ‘‘যার যা দরকার, একটা তালিকা নিয়ে গাছে উঠে যাই। তার পর গাছের ডালে ধরে ফেলি নেটওয়ার্ক’’— বললেন তিনি।

তরুণ রণধীর কুমার আবার গাছে চড়ায় তেমন পারদর্শী নন। তাই ল্যাপটপের সঙ্গে কেনা ‘ডঙ্গল’ লম্বা দড়িতে বেঁধে ছুড়ে দেন মগডালে। ‘ডঙ্গল’ গাছে আটকে গেলে গাছতলায় বসে পড়েন। কাজ শেষে সাবধানে দড়ি টেনে ডঙ্গল নামিয়ে বাড়ি ফেরেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র স্বপ্নের চারাগাছ আক্ষরিক অর্থেই কী ভাবে বটবৃক্ষে পরিণত, জেলা প্রশাসনের কর্তারা তা শুনেছেন। অস্বস্তিতেও পড়েছেন। লাতেহারের এসপি ধনঞ্জয় কুমার সিংহ বলেছেন, ‘‘সরযূবাসীদের আর বেশি দিন মগডালে চড়তে হবে না। জলদিই ওই এলাকায় টাওয়ার বসে যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Internet surfing Tree Ranchi Network
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE