Advertisement
০৪ মে ২০২৪

ডিটেনশন ক্যাম্প নিয়ে তদন্ত

একতরফা রায়ে ধৃত সন্দেহভাজন বাংলাদেশিদের ডিটেনশন ক্যাম্পের নামে জেলে বন্দি রাখার বিষয়টি মানবাধিকার কমিশনে গড়াল। হিন্দু লিগ্যাল সেলের আবেদনে তার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। বরাক উপত্যকার ডিভিশনাল কমিশনার ডি সি দাস আজ শিলচরে আবেদনকারীর বক্তব্য শোনেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলচর শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৬ ০২:৫২
Share: Save:

একতরফা রায়ে ধৃত সন্দেহভাজন বাংলাদেশিদের ডিটেনশন ক্যাম্পের নামে জেলে বন্দি রাখার বিষয়টি মানবাধিকার কমিশনে গড়াল। হিন্দু লিগ্যাল সেলের আবেদনে তার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। বরাক উপত্যকার ডিভিশনাল কমিশনার ডি সি দাস আজ শিলচরে আবেদনকারীর বক্তব্য শোনেন।

হিন্দু লিগ্যাল সেলের উপ-সভাপতি রত্নাঙ্কুর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘একতরফা রায়ে বাংলাদেশি বলে ঘোষিতদের গ্রেফতার করেই পুলিশ জেলে পাঠাচ্ছে। অন্য বন্দিদের সঙ্গে রাখা হয় তাঁদের। একই রকম খাওয়া-দাওয়া, একই ধরনের থাকার ব্যবস্থা।’’ তিনি জানান, ২০১৫ সালে বরাক উপত্যকায় ধৃতদের ১০০ শতাংশই ট্রাইব্যুনালে নিজেদের ভারতীয় হিসেবে প্রমাণ দিয়ে মুক্তি পেয়েছেন। জেলে আটকে রাখা হচ্ছে শাস্তির মেয়াদ পেরনো বাংলাদেশি নাগরিকদেরও। দু’দেশের মধ্যে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি না থাকায় তাঁদের ভারত সরকার দেশে ফেরত পাঠাতে পারছে না।

তিনি জানান, এ সব ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, জেলের বদলে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখতে হবে সকলকে। একতরফা রায়ে ধৃতদেরও সেখানেই রাখার কথা। কিন্তু ডিটেনশন ক্যাম্পের বদলে তাঁদের অমানবিক ভাবে জেলে আটকে রাখা হচ্ছে। উদাহরণ টেনে রত্নাঙ্কুরবাবু উল্লেখ করেন, অর্চনা বিশ্বাস নামে এক বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে জেলের চার দেওয়ালে বড় হচ্ছে তাঁর দুই শিশুসন্তান গোপাল-গোবিন্দ। জেলে তাদের শৈশব ধ্বংস হয়েছে, কৈশোরও হারাচ্ছে তারা।

নিজের বক্তব্য পেশ করে ১২ জন সাক্ষীর তালিকা পেশ করেন রত্নাঙ্কুরবাবু। তার মধ্যে ডিটেনশন ক্যাম্পে চার দিন বন্দিজীবন কাটানো সুচন্দ্রা গোস্বামীর কথা শোনেন ডিভিশনাল কমিশনার। তাঁর সঙ্গে কী ভাবে অমানবিক আচরণ করা হয়েছিল, বিস্তৃত বলেন সুচন্দ্রাদেবী। মানবাধিকার কমিশনকে জানান, একে তাঁর নাম শচীন্দ্র গোস্বামী নয়। কিন্তু শচীন্দ্র বলে ধরে আনা হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, তাঁর কাছে বৈধ ভারতীয় হিসেবে সমস্ত নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তা কেউ দেখতে চাননি। তৃতীয়ত, তাঁকে প্রথমেই জেলে ঢোকানো হয় এবং রাখা হয়েছিল মানসিক রোগীদের সঙ্গে। তাঁদের শৌচাগার ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। জেলের ভিতরে যা খেতে দেওয়া হয়েছিল, তা বলার মতো নয়। জেল সুপার হরেন কলিতার উপস্থিতিতেই এ সব কথা পরিষ্কার শুনিয়ে দেন ভারতীয় বলে প্রমাণিত সুচন্দ্রা গোস্বামী।

জেলে বন্দি থাকা দিনগুলির অমানবিক আচরণের নানা কথা তুলে ধরেন বিধান দেব এবং মানিক দাসও। তাঁদেরও ট্রাইব্যুনাল পরে ভারতীয় বলে রায় দিয়েছে। আজ মোট ৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। বাকিরা হলেন সমাজকর্মী মিহিরকান্তি সোম এবং হিন্দু লিগ্যাল সেলের সঞ্জয় ঠাকুর ও রাজীবকুমার নাথ। আরও ৬ জনকে আগামী ২০ মে বিকেল সাড়ে ৩টেয় উপস্থিত হতে বলা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বন্দিজীবন কাটানো রাতাবাড়ির বন্দনা রানি দাস, হিন্দু লিগ্যাল সেলের রাজ্য আহ্বায়ক ধর্মানন্দ দেব, সমাজকর্মী সাধন পুরকায়স্থ ও বাসুদেব শর্মা, হাইলাকান্দির আইনজীবী পৃথ্বীশকান্তি দাস ও সাংবাদিক অরিজিৎ আদিত্য ।

কমিশনার ডি সি দাস আজ শিলচরের ডিটেনশন ক্যাম্প নামক জেলটিও সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। হিন্দু লিগ্যাল সেলের রাজ্য কমিটির আহ্বায়ক ধর্মানন্দ দেব জানান, তাঁরা মূলত জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে মামলা করেছিলেন। তাঁরা তা পাঠায় রাজ্য মানবাধিকার কমিশনে। পরে ডিভিশনাল কমিশনারকে সাক্ষ্যগ্রহণ করে রিপোর্ট পেশ করতে বলা হয়েছে। ধর্মানন্দবাবু আশা করছেন, মানবিক দৃষ্টির সঙ্গে বিষয়টি বিবেচনা করবে কমিশন। দ্রুত এ ব্যাপারে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

investigation detention camp
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE