Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Bihar Election 2020

মেরুকরণের সঙ্গে তাস ‘জঙ্গলরাজ’, বিহার-সুর কি বঙ্গেও

মোদীর এ দিনের বক্তব্যের রেশ ধরে রাজনৈতিক মহলের জল্পনা, বিহার ভোটে প্রচারের শেষ লগ্ন থেকেই কি বাংলার বিধানসভা ভোটের প্রচারে ঝাঁপানোর প্রস্তুতি সেরে রাখছেন তিনি?

বিহারে প্রচারে নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

বিহারে প্রচারে নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২০ ০৪:৫২
Share: Save:

বিহারে ভোট-প্রচারের বোলেই যেন বাংলার জন্য লয় বাঁধছে বিজেপি!

মঙ্গলবার পড়শি রাজ্যে ভোট প্রচারে এসে প্রত্যাশিত ভাবেই লালু প্রসাদ যাদব-রাবড়ি দেবীর ‘জঙ্গল রাজের’ জমানাকে নিশানা করলেন নরেন্দ্র মোদী। সেই আমলের দুর্নীতি, খুন-জখম, নিরাপত্তার অভাব, সামাজিক অস্থিরতার কথা তো তুললেনই, সেই সঙ্গে মনে করালেন তখনকার রক্তাক্ত ভোটের স্মৃতি। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “যে বিহারে ভোট মানে এক সময়ে শুধু প্রাণহানি, রক্তারক্তির খবর আসত, সেখানে এই করোনা-কালেও ভোট হচ্ছে নির্বিঘ্নে।…ভুলে যাবেন না, তখন এমন শান্তিপূর্ণ ভোটের কথা ভাবাই যেত না। বুথ লুট করে, ভয় দেখিয়ে ভোটদানের অধিকার থেকেই বঞ্চিত করা হত অনেক সাধারণ মানুষকে।”

বিরোধী শিবিরের কটাক্ষ, প্রধানমন্ত্রী গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ নিয়ে ভোটের আগে অনেক কথা বলেন। অথচ গত কয়েক বছরে একাধিক রাজ্যে হারের পরেও বিরোধী বিধায়কদের কিনে সেখানে গদি দখল করেছে তাঁর দল! উদাহরণ হিসেবে কর্নাটক এবং মধ্যপ্রদেশের উদাহরণ তুলছেন তাঁরা। এই অভিযোগে বিদ্ধ করার পাশাপাশি মোদীর এ দিনের বক্তব্যের রেশ ধরে রাজনৈতিক মহলের জল্পনা, বিহার ভোটে প্রচারের শেষ লগ্ন থেকেই কি বাংলার বিধানসভা ভোটের প্রচারে ঝাঁপানোর প্রস্তুতি সেরে রাখছেন তিনি? কারণ, বাংলায় ‘জঙ্গলরাজ’ চলছে বলে সম্প্রতি বারবার অভিযোগ তুলেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। রাজ্যের বিজেপি নেতাদেরও অভিযোগ, গত পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে তাণ্ডব চালিয়ে গ্রামের বহু মানুষকে ভোট দিতে দেয়নি তৃণমূল। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে তার মাসুল দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। ফলে প্রশ্ন, এর পরে প্রচারে এসে কি বিহারের ‘জঙ্গলরাজ’ প্রসঙ্গ বাংলাতেও তুলবেন মোদী-সহ বিজেপির জাতীয় স্তরের নেতারা?

আরও পড়ুন: বিহারে রাহুলের হাতিয়ার পরিযায়ী, চাষি ও রুজি​

এ দিন বিহারের প্রচারে ‘জঙ্গলরাজ’ প্রসঙ্গ তোলার পাশাপাশিই মেরুকরণের তাসও খেলেছেন মোদী। তাঁর কথায়, “বিহারে ‘জঙ্গলরাজ’ ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি তার (কংগ্রেস) ঘনিষ্ঠরা চান, যাতে আপনারা ‘ভারতমাতা কি জয়’ স্লোগান তুলতে না-পারেন। ভাবুন, আমাদের দেশ, আমাদের ভারত মাতা। কিন্তু এমন লোকও আছেন, যাঁদের ওই জয়ধ্বনি শুনলে, গায়ে জ্বর আসে।…আপনারা ‘জয় শ্রী রাম’ বলুন, তা-ও ওঁরা চান না।…যদি ভারত মাতার জয় বলতে কারও সমস্যা থাকে, তা হলে বিহারের জনতারও তাঁদের নিয়ে সমস্যা আছে।”

বিহার ভোটের ঢাকে কাঠি পড়ার আগেই গলওয়ানে বিহার রেজিমেন্টের প্রসঙ্গ তুলে বিহারি আবেগকে উস্কে দেওয়ার জন্য মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছেন মোদী ও তাঁর দলের নেতারা। সেই জাতীয়তাবাদ আবেগের সঙ্গেই মেরুকরণ জুড়ে দিয়ে বিহারের ব্যালট-যুদ্ধ জিততে চাইছেন মোদী। আর সুকৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছেন মূল্যবৃদ্ধি-বেকারির মতো প্রসঙ্গগুলোকে। রাজনৈতিক মহলের মতে, বাংলাতেও মেরুকরণের এই তাস খেলার কৌশল নেওয়ার সম্ভাবনা ষোলো আনা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দলকে সংখ্যালঘু তোষণকারী হিসেবে দাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা বিজেপির তরফে দীর্ঘদিনের। অনেকেই বলছেন, বাংলায় ভোট যত এগিয়ে আসবে, মেরুকরণ তীব্র করতে আক্রমণের ধার তত বাড়াবে বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গের মাটিকে সন্ত্রাসবাদীদের নিরাপদ ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হতে দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ তুলে রাজ্য সরকারের দিকে আঙুল তুলবে তারা।

তার ইঙ্গিতও মিলছে। সম্প্রতি গুজরাতে এক অনুষ্ঠানে মোদী বলেছিলেন, “যখন (পুলওয়ামায়) বীর জওয়ানদের প্রয়াণে সারা ভারত দুঃখী ছিল, তখন কয়েক জন ওই দুঃখে শামিল হননি। তাঁরা নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ সন্ধান করছিলেন।’’ সেই সঙ্গে বলেছিলেন, পুলওয়ামা-কাণ্ডের পরে যে বিরোধী নেতারা অন্তর্ঘাতের ছায়া দেখেছিলেন, পাক সংসদে প্রাক্তন মন্ত্রীর স্বীকারোক্তির পরে এখন তাঁদের মুখে কুলুপ। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, এই তিরের অভিমুখ ছিল মমতার দিকেও। এবং পশ্চিমবঙ্গের ভোট প্রচারে এই প্রসঙ্গ বার বার ওঠারই সম্ভাবনা। যদিও তৃণমূল নেতৃত্ব প্রথম থেকেই দাবি করেছেন, সীমান্তে সুরক্ষার প্রশ্নে বরবার কেন্দ্রের পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন মমতা। তার পরেও এমন বিরূপ মন্তব্যের জবাব যথা সময়ে দেবেন বাংলার মানুষ।

আরও পড়ুন: বিরোধীদের প্রশ্ন এড়িয়ে কংগ্রেসকে কটাক্ষ মোদীর​

প্রধানমন্ত্রী এ দিন ফলাও করে বলেছেন, এক বার ব্যবহারের উপযুক্ত প্লাস্টিক ব্যাগ বন্ধের উদ্যোগে কতখানি উপকৃত হয়েছে চট শিল্প। কী ভাবে একশো শতাংশ আনাজ চটের বস্তায় বন্দি করার সুফল পাবেন বিহারের পাট চাষি, চটকল কর্মীরা। পশ্চিমবঙ্গে ভোট প্রচারের সময়ে যে ওই একই কথা এ রাজ্যের জন্য বলা হবে, তা প্রায় নিশ্চিত। ইতিমধ্যে তার ইঙ্গিতও দিয়েছেন স্মৃতি ইরানি, প্রকাশ জাভড়েকড়রা। যেন ‘বিহারের হল সারা, বাংলার হল শুরু’!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE