Advertisement
E-Paper

কেরলের বন্যা মানুষের তৈরি?

সব দেখে মাধব গ্যাডগিল মন্তব্য করেছেন, ‘‘এই বিপর্যয় আসলে মানুষের তৈরি। জরুরি ভিত্তিতে আগাম ব্যবস্থা না নিলে কেরলের জন্য হয়তো ভবিষ্যতে আরও বড় বিপর্যয় অপেক্ষা করছে। তার জন্যও প্রকৃতি নয়, দায়ি হবে মানুষই।’’

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৮ ১৫:০১
পাহাড়ের ঢালে গড়ে উঠেছে পর্যটনকেন্দ্র, আবাসন। ছবি: পিটিআই।

পাহাড়ের ঢালে গড়ে উঠেছে পর্যটনকেন্দ্র, আবাসন। ছবি: পিটিআই।

শতাব্দীর ভয়াবহতম বিপর্যয়ের মুখোমুখি এখন কেরল। ১৪টির মধ্যে ১৩টি জেলাই এখন জলবন্দি। বন্যার জলে বন্দি লক্ষ লক্ষ মানুষ। প্রতি দিনই বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। ক্ষতির পরিমাণ ছাড়িয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা।

কিন্তু এই বিপর্যয় কেন? উত্তর খুঁজতে গেলে প্রথমেই আসছে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কথা। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এই মরসুমে কেরলে গত ১৫ অগস্ট পর্যন্ত প্রায় ৩০ শতাংশ অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই অতিরিক্ত জল ধরে রাখার ক্ষমতা কেরলের জলাধারগুলির ছিল না। অগত্যা কোনও উপায় না পেয়ে বাঁধ কর্তৃপক্ষ জল ছেড়েছেন আর ভেসে গিয়েছে গ্রাম, রাস্তা, শহর, সেতু, বিমানবন্দর।

তবে কি এটা মানুষের তৈরি বিপর্যয়?

পরিবেশবিদেরা কিন্তু বলছেন বৃষ্টি নয়, এই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী মানুষ। মানুষই নাকি নিজের হাতে এই বিপর্যয়কে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এই বিপর্যয়ে কেরলের যে অঞ্চল সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, উত্তর ও মধ্য কেরলের সেই এলাকাগুলিকে ২০১১ সালেই পরিবেশগত ভাবে সংবেদনশীল এলাকা বলে চিহ্নিত করেছিল ‘ওয়েস্টার্ন ঘাট ইকোলজি এক্সপার্ট কমিটি’। এই কমিটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের গবেষক মাধব গ্যাডগিল। তাঁর করা সুপারিশগুলি মেনে নিলে আজ এই বিপর্যয়ের হাত থেকে পশ্চিমঘাট পর্বতমালা বা কেরলকে বাঁচানো সম্ভব হত বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

গ্যাডগিল কমিটির সুপারিশ

গ্যাডগিল কমিটির প্রস্তাব ছিল পশ্চিমঘাট পর্বতমালার এক লক্ষ চল্লিশ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে তিনটি ভাগে ভেঙে দেওয়া। সংবেদনশীলতার মাত্রা অনুযায়ী কোনও অঞ্চলে খনি ও খাদান নিষিদ্ধ, কোথাও বা আবার বহুতল তৈরিতে বিধিনিষেধের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। কোথাও আবার জঙ্গল কেটে রিসর্ট বানাতে আপত্তির কথা জানানো হয় গ্যাডগিল কমিটির রিপোর্টে। পাহাড়ের যে অংশে ঢাল বেশি, সেখানে মানুষের বসতি থাকা বিপজ্জনক রিপোর্টে এই কথাও বলা ছিল। তাই এই বসতি বা গ্রামগুলিকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত বলে সুপারিশ ছিল কমিটির। শুধু তাই নয়, স্থানীয় পঞ্চায়েতের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে খুব কম খরচেই প্রস্তাবগুলি বাস্তবায়িত করা সম্ভব বলে জানিয়েছিলেন মাধব গ্যাডগিল।

পরিবেশবিদ মাধব গ্যাডগিল। তাঁর কমিটির সুপারিশ মানেনি কেরল সরকার। ছবি: সংগৃহীত

রাজ্য সরকারের ভূমিকা

কিন্তু গ্যাডগিল রিপোর্টকে পত্রপাঠ বিদায় করেছিল কেরল রাজ্য সরকার। একটি প্রস্তাবও মানা হয়নি। উল্টে জঙ্গল কেটে একের পর এক রিসর্ট তৈরির অনুমতি দিয়েছে প্রশাসন। শহরগুলির বর্জ্য দিয়ে বোজানো হয়েছে নদীখাত। তারপরে সেই নদীখাতে গড়ে উঠেছে পর্যটনকেন্দ্র, হোটেল, রেস্তরাঁ। স্বাভাবিকভাবেই নদীর জলধারণ ক্ষমতা কমেছে। পাহাড়ের ঢালেও তৈরি হয়েছে বসতি, পর্যটনকেন্দ্র। উল্টে কিছুদিন আগে জলাজমি বুজিয়ে ধানজমি করার একটি আইন পাশ করে কেরল সরকার। যা কফিনে শেষ পেরেক বলেই মনে করছেন পরিবেশবিদদের একাংশ।

আরও পড়ুন: পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর, দেখুন বন্যা বিধ্বস্ত কেরলের ছবি

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা

এখন দেখা যাচ্ছে,গ্যাডগিল কমিটির চিহ্নিত করা সেই সংবেদনশীল এলাকা গুলিইসব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। যেখানে অবৈধ খনি ও খাদান এলাকা, সেখানেই ধসের প্রকোপ বেশি। আর অধিকাংশ মৃত্যুই হয়েছে ধসের কারণে। আর আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি বেশি নদী ও তার পাশে গড়ে গজিয়ে ওঠা নতুন নতুন শহর ও পর্যটন কেন্দ্রগুলিতেই। বাঁধ থেকে নেমে আসা জল ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে সব কিছুই।

কেরলে জলমগ্ন নদীর পাড়ে গজিয়ে ওঠা শহর। ছবি: পিটিআই।

সব দেখে মাধব গ্যাডগিল মন্তব্য করেছেন, ‘‘এই বিপর্যয় আসলে মানুষের তৈরি। জরুরি ভিত্তিতে আগাম ব্যবস্থা না নিলে কেরলের জন্য হয়তো ভবিষ্যতে আরও বড় বিপর্যয় অপেক্ষা করছে। তার জন্যও প্রকৃতি নয়, দায়ি হবে মানুষই।’’

আরও পড়ুন: কেরলে বন্যা পরিস্থিতি দেখলেন প্রধানমন্ত্রী, ৫০০ কোটির ত্রাণ ঘোষণা

দেশজোড়া ঘটনার বাছাই করা সেরা বাংলা খবর পেতে পড়ুন আমাদের দেশ বিভাগ।

Madhab Gadgil Kerala Flood Western Ghats
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy