Advertisement
E-Paper

জোশীমঠের বিপর্যয়ে কাঠগড়ায় প্রধানমন্ত্রীই

১৯৭৬ সালেই জোশীমঠ নিয়ে সতর্ক করা হয়েছিল। সে সময়ে মিশ্র কমিটির তরফে বলা হয়েছিল, কোনও ভাবেই বড়সড় নির্মাণকাজ করা যাবে না এ শহরে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:২৪
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

হিমালয়ের গায়ে তৈরি হওয়া এক জনপদ ক্রমে পাহাড়ের গহ্বরেই তলিয়ে যাচ্ছে। উত্তরাখণ্ডের বিজেপি-শাসিত সরকার আজ ঘোষণা করে দিয়েছে, জোশীমঠ আর বাসযোগ্য নেই। তড়িঘড়ি দিল্লিতে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বসেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দফতর। তৈরি করা হয়েছে সাত সদস্যের বিশেষ কমিটি। শহরবাসীকে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন মোদী স্বয়ং। নিয়মিত টেলিফোনে খোঁজ নিচ্ছেন তিনি। যদিও তাতে প্রশ্ন থামছে না। কাঠগড়ায় খোদ প্রধানমন্ত্রীই।

১৯৭৬ সালেই জোশীমঠ নিয়ে সতর্ক করা হয়েছিল। সে সময়ে মিশ্র কমিটির তরফে বলা হয়েছিল, কোনও ভাবেই বড়সড় নির্মাণকাজ করা যাবে না এ শহরে। গাছ না-কাটা, জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি বন্ধ রাখার মতো দাওয়াই দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যাবতীয় সব সতর্কবার্তা উপেক্ষা করা হয়েছে এত দিন। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর চার ধাম প্রকল্প, পাহাড় কেটে জাতীয় সড়ক চওড়া করার কাজ, একাধিক জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ চলছে জোশীমঠে। বিশেষজ্ঞদের মতে, উন্নয়নের ডঙ্কা বাজাতে গিয়ে পরিবেশগত সমস্ত আপত্তি উড়িয়ে দেওয়ার খেসারত দিতে হচ্ছে জোশীমঠকে। অভিযোগ উঠেছে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত একাধিক জাতীয় প্রকল্প ঘিরে।

প্রশ্নের মুখে উত্তরাখণ্ডের বিজেপি নেতৃত্বও। গত কয়েক মাসে রাজ্য সরকারকে বারবার সতর্ক করেছিলেন বাসিন্দারা। গত মাসে তিন বার চিঠি লিখে অভিযোগ জানিয়েছিলেন তাঁরা। বাসিন্দাদের অভিযোগ ছিল, একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার প্রকল্পের জন্য বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মাটিতে সুড়ঙ্গ তৈরি করা হচ্ছে। বিস্ফোরণের জেরে শহর জুড়ে মাটি কাঁপছে। ফাটল ধরছে বাড়িতে। কিন্তু কোনও অভিযোগই গ্রাহ্য করা হয়নি। জেলাশাসক এক বার শহর ঘুরে দেখে গিয়েছেন। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি।

জোশীমঠ নিয়ে আজ দিল্লিতে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক বসে। বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি পি কে মিশ্র। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয় ৭ সদস্যের বিশেষজ্ঞ দল তৈরি করা হবে। এরা জোশীমঠের পরিস্থিতি বিচার করে রিপোর্ট দেবেন। এ ছাড়াও বর্ডার ম্যানেজমেন্ট সচিব ও জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষের (এনডিএমএ) বিশেষজ্ঞেরা সরেজমিনে জোশীমঠে গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেবে কেন্দ্রকে।

সাত সদস্যের বিশেষজ্ঞ দলে থাকছেন, এনডিএমএ-র বিশেষজ্ঞেরা, ভারতীয় ভূতত্ত্ব সর্বেক্ষণ সংস্থা (জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া), রুরকি আইআইটি, হিমালয়ের ভূতত্ত্ব বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘ওয়াদিয়া ইনস্টিটিউট অফ হিমালয়ান জিওলজি’, জলবিদ্যা সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হাইড্রোলজি’ এবং নির্মাণ সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সেন্ট্রাল বিল্ডিং রিসার্চ ইন্সটিটিউট’। দ্রুত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে বিশেষজ্ঞ দলটিকে।

ইতিমধ্যে, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর একটি দল ও রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের চারটি দল জোশীমঠে পৌঁছে গিয়েছে। কেন্দ্র জানিয়েছে, এরা আপাতত এই পাহাড়ি শহরেই থাকবে। বিশেষজ্ঞ দল নিজেদের কাজ করবেন, তার পাশাপাশি কেন্দ্রের তরফেও জোশীমঠকে বাঁচানোর জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। যদিও বিরোধীদের দাবি, এখন আর এ সব করে লাভ নেই। অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।

এক দিকে বদ্রীনাথের প্রবেশদ্বার এই শহর, অন্য দিকে রয়েছে শিখ তীর্থক্ষেত্র হেমকুণ্ড সাহিব। চিন সীমান্ত থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই শহর রণকৌশলগত ভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। তা সত্ত্বেও জোশীমঠের বেহাল পরিস্থিতির জন্য রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা যশপাল আর্য আঙুল তুলেছেন বিজেপি সরকারের গা-ছাড়া মনোভাবের দিকে। তাঁর বক্তব্য, গত ১৪ মাস ধরে স্থানীয় বাসিন্দারা সরকারি কর্তাদের কাছে বারবার আবেদন জানাচ্ছিলেন। কেউ তাঁদের কথা শোনার প্রয়োজন বোধ করেননি। এখন পরিস্থিতি যখন হাতের বাইরে চলে গেছে তখন বিশেষজ্ঞ দল পাঠানো হচ্ছে। আর্যও অভিযোগ জানান, চার ধাম প্রকল্প, জাতীয় সড়কের চওড়া করার কাজ, একাধিক প্রকল্প ঘোষিত হয়েছে পরিবেশবিদদের আপত্তি সত্ত্বেও। যার খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

বিরোধীদের তোপের মুখে নীরব দর্শক ধামী। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত জাতীয় প্রকল্প নিয়ে চুপ থাকাই হয়তো সঙ্গত মনে করছেন তিনি।

Joshimath Disaster Narendra Modi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy