অভিযুক্ত বায়ুসেনা অফিসার রঞ্জিত কেকে।
এই প্রথম নয়। সুন্দরী বান্ধবীর ‘টোপ’ গিলে রঞ্জিতের আগেও অনেক সেনা অফিসার পাক গুপ্তচর সংস্থা (আইএসআই)-এর ফাঁদে পা দিয়েছেন। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর গোপন খবর সংগ্রহ করতে গত কয়েক বছর ধরে তুখোড় এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মহিলাদের ব্যবহার করছে আইএসআই। ভারতীয় সেনা গোয়েন্দাদের তেমনটাই দাবি।
২০১০-এ রাজস্থানের ৮২ আর্মার্ড রেজিমেন্টে কর্মরত এক লেফ্টেন্যান্ট কর্নেল এ ভাবেই আইএসআই-এর মহিলা বাহিনীর ফাঁদে পড়েছিলেন। কী ভাবে? প্রবীণ এক সেনা গোয়েন্দা জানাচ্ছেন, সেই সময় অভ্যন্তরীণ নজরদারিতে সন্দেহজনক ওয়েব ট্র্যাফিক ধরা পড়ে। সেই ওয়েব ট্রেল ট্র্যাক করে শেষ পর্যন্ত ওই লেফ্টেন্যান্ট কর্নেল অবধি পৌঁছন গোয়েন্দারা। জানা যায়, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে এক মহিলার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল। পরিচয়ের কয়েক মাসের মধ্যেই তাঁদের মধ্যে রাত জেগে কথাবার্তা শুরু হয়। তার পর সাধারণ কথার মোড়ক সরিয়ে সেই জায়গা নেয় যৌন উত্তেজক আলাপ আলোচনা। এর পরে মহিলা সফল ভাবে যৌনতাকে ব্যবহার করে ওই সেনা অফিসারের কাছ থেকে বাহিনী সম্পর্কে বিভিন্ন গোপন তথ্যাদি হাতাতে শুরু করেন। গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়ার পরে কোর্ট-মার্শাল হয় ওই লেফ্টেন্যান্ট কর্নেলের। শেষে চাকরিও যায়। গোয়েন্দারা কিন্তু এখানেই থেমে থাকেননি। তাঁরা ওই মহিলার অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে জানতে পারেন, তিনি আইএসআইয়ের হয়ে আধা সামরিক বাহিনীর এক কম্যান্ডোকেও ফাঁদে ফেলেছেন।
এই ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ব্যবহারের ক্ষেত্রে সেনা অফিসারদের কড়া নিষেধাজ্ঞা আছে। কিন্তু, প্রায়ই দেখা যায় অফিসারেরা সেই নিষেধাজ্ঞা মানেন না। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে তাঁদের অনেকেই বেনামে বুঁদ হয়ে থাকেন। গত বছর উত্তরপ্রদেশের বরেলি থেকে রাজ্য পুলিশ আইএসআই চর সন্দেহে আসিফ আলি নামে এক জনকে গ্রেফতার করে। তাকে জেরা করে পাক গুপ্তচর সংস্থার অভিনব ওই কৌশলের কথা জানা যায়।
কী সেই কৌশল?
আসিফরা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় মাসের পর মাস ধরে রেকি করে। এর পর অফিসারদের একটা খসড়া তালিকা তৈরি হয়। এই তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে অফিসারদের ক্ষমতা এবং দায়িত্বের কথা মাথায় রাখা হয়। এমনকী, তাঁরা কে কতটা সময় কাটান সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে, দেখা হয় তা-ও। এর পর সেই তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেয় আসিফরা। কখনও কখনও অফিসারদের ছবিও পাঠানো হয় তালিকার সঙ্গে। এর পর আইএসআইয়ের টেকনিক্যাল রিসার্চ উইং তালিকাভুক্ত অফিসারদের সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে সব রকমের গতিবিধি বিশ্লেষণ করে। অনলাইন কার্যকলাপের সবিস্তার রিসার্চের পরে তারা তাদের মহিলা ব্রিগেডকে কাজে লাগায়। আসিফকে জেরা করা এক গোয়েন্দা কর্তার কথায়, ‘‘ওই গুপ্তচর সংস্থা কাজের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত পেশাদারিত্ব বজায় রাখে। নিশানায় থাকা অফিসারদের সামগ্রিক গতিবিধি নিয়ে প্রবল গবেষণা করে তারা। এর ফলে তারা ওই অফিসারদের সবচেয়ে দুর্বল জায়গা কী, সেটাও জেনে নেয়। সেই মতো তারা ওই অপিসারকে টোপ দেয়।’’
আসিফকে জেরা করতে গিয়ে গোয়েন্দারা আশ্চর্য তথ্য জানতে পারেন। সন্দেহ এড়াতে ওই মহিলা বাহিনীর সদস্যদের সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট পাকিস্তান থেকে অপারেট করা হয় না। এমন কোনও দেশ থেকে করা হয়, যে দেশের নিরপেক্ষতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। আসিফের কথা অনুযায়ী, মেরঠ ক্যান্টনমেন্টে তারা এক অফিসারকে নিজেদের কব্জায় নিয়ে এসেছিল। মহিলা বাহিনী সযত্নে তাঁর কাছ থেকে গোপন তথ্য বের করে নেয়। আসিফ ওই অফিসারকে একটা ল্যাপটপ পৌঁছে দিয়েছিল।
প্রথমে ফেসবুকের ‘বান্ধবী’ ওই অফিসারকে একটা ল্যাপটপ উপহার দিতে চায়। অপিসার রাজি হওয়ায় বান্ধবীর এক পরিচিত লোক ওই অফিসারকে ক্যান্টনমেন্ট সেই উপবার পৌঁছে দেয়। পরিচিত ব্যক্তিই আসিফ। আসিফ গোয়েন্দাদের জানায়, এর ফলে দুটো কাজ হয়। এক, ওই অপিসারের সঙ্গে সামনাসামনি পরিচয়। দুই, কোনও তথ্য এবং ম্যাপ হাতে হাতে নিয়ে নিতেও সাহায্য করে এই ধরনের যাতায়াত। মহিলা বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিতে ফরিদ কোটে আইএসআইয়ের একটা ট্রেনিং সেন্টারও আছে বলে গোয়েন্দাদের জানিয়েছিল আসিফ। অবাক হওয়ার আরও ছিল। ২০১২ থেকে ২০১৪— এই দু’বছরে প্রায় ৯০০ মহিলাকে অনলাইনে ‘মধুর ফাঁদ’ পাততে ট্রেনিং দেওয়া হয়।
তবে, নানা নিষেধাজ্ঞা জারি করেও সেনা অফিসারদের সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে আসা বন্ধ করতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ। অফিসাররা নিজেরা সচেতন না হলে আরও অনেক রঞ্জিতকে ফাঁসতে হবে, সে কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন প্রাক্তন সেনা গোয়েন্দারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy