Advertisement
E-Paper

ভারতে হামলার ভার ভারতীয়দের হাতে

ভারতে সন্ত্রাসের বিপদ এ বার নতুন চেহারায়। ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গি গোষ্ঠী ভারতে সন্ত্রাসবাদী হামলার দায়িত্ব দিয়েছে ভারতীয় যুবকদের হাতেই। বেশ কিছু দিন ধরেই ভারতে হামলা চালানোর হুমকি দিয়ে আসছে জঙ্গি গোষ্ঠীটি। এ বারে তারা ভারতে হামলা চালানোর হুমকি দিয়ে ২২ মিনিটের একটি ভিডিও প্রকাশ করল। যার বক্তব্য, ভারত থেকে যে সব যুবক সিরিয়া-ইরাকের ধর্মযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে, নিজের দেশে হামলার নেতৃত্ব তুলে দেওয়া হবে তাদেরই হাতে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৬ ০৩:৩৫

ভারতে সন্ত্রাসের বিপদ এ বার নতুন চেহারায়। ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গি গোষ্ঠী ভারতে সন্ত্রাসবাদী হামলার দায়িত্ব দিয়েছে ভারতীয় যুবকদের হাতেই। বেশ কিছু দিন ধরেই ভারতে হামলা চালানোর হুমকি দিয়ে আসছে জঙ্গি গোষ্ঠীটি। এ বারে তারা ভারতে হামলা চালানোর হুমকি দিয়ে ২২ মিনিটের একটি ভিডিও প্রকাশ করল। যার বক্তব্য, ভারত থেকে যে সব যুবক সিরিয়া-ইরাকের ধর্মযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে, নিজের দেশে হামলার নেতৃত্ব তুলে দেওয়া হবে তাদেরই হাতে।

সীমান্তপারের সন্ত্রাসে দীর্ঘদিন ধরেই ভুগতে হচ্ছে ভারতকে। কিন্তু ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনে ভারতীয় যুবকদের নিয়োগ করে দিল্লিকে বিপাকে ফেলেছিল পাক গুপ্তচর স‌ংস্থা আইএসআই। ঠিক সে ভাবেই সন্ত্রাসের বীজ পোঁতার ছক কষেছে আইএসআই। পাক জঙ্গিরা হামলা চালানোর জন্য অনেক সময়েই ভারতীয়দের নিয়ে ‘স্লিপার সেল’ গড়ে সেগুলির সাহায্য নিয়ে থাকে। আইএস কিন্তু বলছে অন্য কথা। হামলায় সাহায্য করার ‘স্লিপার সেল’ নয়, তাদের লক্ষ্য জঙ্গি হামলার ভারতীয় কতগুলি ‘সেল’ তৈরি করা। এদের হামলায় প্রতিবেশী বা বিদেশি কোনও রাষ্ট্রের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলা যাবে না। সব চেয়ে বড় বিপদ, এত বড় দেশে আইএসের হয়ে কে কোথায় কার মগজধোলাই করছে তার উপর নজর রাখাটা প্রায় খড়ের গাদায় দেশলাই কাঠি খোঁজার মতো।

মাস কয়েক আগেই আইএস জানিয়েছিল এক বৃহত্তর খিলাফত বা ধর্মীয় সাম্রাজ্য গড়ার লক্ষ্যে তাদের পরবর্তী নিশানা হল ভারত। এ বারে ভিডিও প্রকাশ করে তারা এই ‘ধর্মযুদ্ধে’ অংশ নেওয়ার ডাক দিয়েছে ভারতীয় মুসলিম যুবকদের। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মতে, এই প্রথম ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার হুমকি দেওয়া হয়েছে ভারতের তথা মহারাষ্ট্রের এক যুবকের মুখ থেকে। এটাকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। কারণ এখন পর্যন্ত দেখা গিয়েছে ভারত থেকে যে সব যুবক জেহাদে অংশ নিতে গিয়েছে তাদের সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠায় না আইএস নেতৃত্ব। তাদের হাত থেকে পালিয়ে ভারতে ফিরে আসা একাধিক জঙ্গি গোয়েন্দাদের জানিয়েছে, ভারতীয় মুসলিমদের যুদ্ধ করার ক্ষমতা রয়েছে, এমনটা মানতে চাইত না তারা। আর তাই ভারতীয়দের রান্না করা বা শৌচাগার সাফ করার মতো কাজের ভার দেওয়া হতো। এই অবস্থায় ভারতীয়দেরই জঙ্গি হামলার দায়িত্ব দেওয়ার কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করাটাকে ইঙ্গিতবহ মনে করছে নয়াদিল্লি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ ঘোষণা করেছেন, ‘‘এই ধরনের যে কোনও হামলার মোকাবিলা করতে আমরা তৈরি।’’

আপাতত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ভিডিওটির উৎস খোঁজার চেষ্টা চালাচ্ছে। ভিডিওটিতে যাকে বক্তব্য রাখতে দেখা গিয়েছে তার নাম আবু আমর অল-হিন্দ বলে দাবি করা হলেও গোয়েন্দারা মনে করছেন এই ব্যক্তি আসলে ফাহাদ তনভির শেখ। আদতে ঠাণের বাসিন্দা ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র। ২০১৪ সালে সে জেহাদে অংশ নিতে সিরিয়ায় চলে যায়।

আইএসের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে ‘খিলাফত’ তথা ধর্মীয় সাম্রাজ্য গড়ে তোলার লড়াইয়ে অংশ নিতে ভারত ছেড়েছে প্রায় দু’ডজন যুবক। কেন্দ্রের ধারণা, বর্তমানে গোটা দেশের মধ্যে ১২টি রাজ্যে আইএসের কম-বেশি প্রভাব রয়েছে। মার্কিন গোয়েন্দারাও সম্প্রতি জানিয়েছেন, ভারতে হামলার প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে আইএস। কেন্দ্র মনে করছে, সেই আক্রমণের প্রস্তুতি হিসেবেই এই ভিডিও প্রকাশ। ভিডিওটিতে এ দেশের জেহাদিদের বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যাতে বেশি সংখ্যক ভারতীয় মুসলিমদের মগজধোলাই করা সম্ভব হয়। এবং সেই লক্ষ্যেই ভারতকে নিশানা করার কারণ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে এমন কিছু ঘটনাকে বিভিন্ন সময়ে যা খবরের শিরোনামে এসেছে। ভিডিওতে ফাহাদ তথা আবু আমর অল-হিন্দ জানিয়েছে ‘‘আমরা অবশ্যই ফিরব। কিন্তু তলোয়ার হাতে। বাবরি মসজিদ ধ্বংস ও কাশ্মীর, গুজরাত ও মুজফ্‌ফরপুর হত্যার প্রতিশোধ নিতে।’’

ওই ভিডিওটিতেই ফাহাদ স্বীকার করেছে, তার সঙ্গে শাহিম টাঙ্কি ও আরিব মজিদ নামে দুই যুবক ২০১৪ সালে ভারত থেকে সিরিয়ায় গিয়েছিল। তবে আইএসের ‘রাজধানী’ রাকায় যুদ্ধের সময় বিস্ফোরণে শাহিমের মৃত্যু হয়। আর আরিব মাজিদ ধরা পড়ে এনআইএ-র হাতে। আরবি ও উর্দু ভাষায় তৈরি ওই ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে, অপরিসীম কষ্টের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও অন্য ধর্মের লোকজনদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলার জন্য ভারতীয় মুসলিমদের সমালোচনা করা হয়েছে। সমালোচনার মুখে পড়েছেন এ দেশের মুসলিম রাজনৈতিক নেতারাও। আসাদুদ্দিন ওয়াইসি, বদরুদ্দিন আজমল থেকে জামা মসজিদের প্রধান সৈয়দ আহমেদ বুখারিকেও দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার সঙ্গে আপস

করে চলার জন্য কাঠগড়ায় তুলেছে আইএস জঙ্গিরা।

ভিডিওটির বড় অংশ জুড়ে রয়েছে পাঁচ জঙ্গির সাক্ষাৎকার। এক জায়গায় ছ’জন জঙ্গিকে জেহাদি মন্ত্র জপতে দেখা গিয়েছে। যার মূল বক্তব্য, নতুন ভোর আসতে চলেছে। আইএসের অন্য ভিডিওগুলির মতো এটিতে সরাসরি কোনও যুদ্ধের দৃশ্য না থাকলেও, বেশ কিছু জঙ্গিকে নৌকোয় ঘুরতে দেখা গিয়েছে। গোয়েন্দাদের অনুমান, সম্ভবত কোনও উপকূলবর্তী এলাকায় ভিডিওটি বানানো হয়েছে।

ভিডিওটিতে এক জঙ্গি জানিয়েছে, ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন প্রধান আতিফ আমিন দিল্লির বাটলা হাউস সংঘর্ষে মারা যাওয়ার পরে তার মুম্বই পালিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। সেখান থেকে সিরিয়া পালিয়ে যায় সে। মুসলিমদের উপর অত্যাচারের যোগ্য জবাব দেওয়ার শপথ নেওয়ার পাশাপাশি ভারতবাসীর প্রতি ওই ব্যক্তির হুঁশিয়ারি, ‘‘তোমরা কি মুম্বই ট্রেন হামলা, আমদাবাদ, সুরাত, জয়পুর ও দিল্লির বোমা বিস্ফোরণ ভুলে গিয়েছ?’’

এ দেশের অধিকাংশ মুসলিম ধর্মগুরু ও উলেমা ইতিমধ্যেই আইএসকে ইসলাম-বিরোধী এবং আইএসে যোগ দেওয়াকে ইসলামের পরিপন্থী বলে ঘোষণা করেছেন। তাঁদের সকলেরই বক্তব্য ইসলাম শান্তির কথা বলে। কিন্তু উলেমাদের সেই বক্তব্যকে নস্যাৎ করে ভিডিওতে এক জেহাদির দাবি, ‘‘যাঁরা ইসলাম শান্তির কথা বলে— এই যুক্তি দেখাচ্ছেন, তাঁদের কথা অর্থহীন। যত দিন না আল্লাহ্‌-র শাসন প্রতিষ্ঠা হচ্ছে তত দিন ‘প্রফেট’ আমাদের যুদ্ধ করতে বলেছেন।’’ ভিডিওতে ইসলামিক স্টেটকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে ধর্মরাজ্য হিসাবে। ওই জঙ্গির কথায়, ‘‘এখানে শরিয়ত আইন মেনে চুরির শাস্তি হিসে‌বে চোরের হাত কেটে দেওয়া হয়।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy