গ্রাফিক্স: শৌভিক দেবনাথ।
কথায় বলে টাকার গরম! কিন্তু, সেই গরমেও কাজ হচ্ছে না মোটেই!
এত দিন তা-ও লেপ-কম্বল মুড়ি দিয়েই চলছিল। কিন্তু এখন যা ঠান্ডা, তাতে আর কোনও ভাবেই কাজ করতে পারছে না। তাই, আপাতত বন্ধ রাখতে হয়েছে এটিএম মেশিনগুলি।
হিমাচল প্রদেশের লাহুল-স্পিতিতে টাকা তোলা-জমা করতে গ্রাহকদের এখন একমাত্র ভরসা তাই ব্যাঙ্ক। নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়িয়ে ব্যাঙ্কের শাখাতে বেশি পরিমাণে টাকা মজুত করে রাখা হচ্ছে। জমা হওয়া টাকাও রেখে দেওয়া হচ্ছে ব্যাঙ্কেরই ভল্টে। যদিও তা নিয়ে বাড়তি কোনও মাথাব্যথা নেই ব্যাঙ্ককর্মীদের।
আরও পড়ুন
রাষ্ট্রপতি, রাজ্যপালদের গাড়িতেও এ বার নম্বর প্লেট
তাপমাত্রা কত? শুনেই হেসে উঠলেন বছর ছাব্বিশের সমীর কুশন। ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্কের স্পিতি শাখার ম্যানেজার। বুধবার দুপুর ৩টে নাগাদ সমীরের সঙ্গে যখন কথা হচ্ছে, তখন সেখানকার তাপমাত্রা মাইনাস ১০। পঞ্জাবের ভূমিপুত্র ঠান্ডা-কাঁপা গলায় বললেন, ‘‘সে দিন রাতে ইন্টারনেট সার্ফ করে দেখলাম, এখানকার তাপমাত্রা মাইনাস ৩০। এত্ত ঠান্ডা যে আমরাই কুপোকাৎ। মেশিন কী করে চলবে!’’
স্পিতি শহরের সব ক’টা এটিএম মেশিনই গত মাসের গোড়া থেকে বন্ধ। কারণ, অতিরিক্ত ঠান্ডায় এটিএম মেশিনের কনভেয়ার বেল্ট আটকে যায়। আর তার ফলে টাকা বেরনোর কোনও উপায় থাকে না। ফের ফেব্রুয়ারিতে মেশিনগুলি খুলবে বলে জানালেন সমীর।
আরও পড়ুন
মার্কিন নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হবে ভারতীয় অভিবাসীর
এর আগে অক্টোবর এবং নভেম্বর মাস তো বটেই, বছরের বেশ কিছু সময়েই টাকা বেরনোর জন্য এটিএম মেশিনগুলিকে বেশ তরিবত করে রাখতে হয়। তাদের গায়ে চাপাতে হয় লেপ-কম্বলও। আর রুম হিটার তো রয়েইছে। বিশেষ করে তুষারপাতের সময় এটিএম সচল রাখতে এই পদ্ধতি বেশ কাজে দেয়।
ভোরবেলা ব্যাঙ্কের কর্মীরা এটিএম কাউন্টারে ঢুকে রুম হিটার চালিয়ে দেন। তার পর মেশিনের গায়ে ভাল করে জড়িয়ে দেওয়া হয় গরম কাপড় বা কম্বল জাতীয় কিছু। এ ভাবেই রেখে দেওয়া হয় বেশ কয়েক ঘণ্টা। তার পর বেলা ১০টার দিকে এটিএম মেশিন চালু করা হয়। কিন্তু, বিকেল গড়াতেই যে কে সেই। ফের বন্ধ করে রাখা হয় টাকা তোলার যন্ত্র।
আরও পড়ুন
যত বেশি ঋণ, তত কাছে বিপদ, শাসক বুঝছেন তো?
শুধু স্পিতি নয়, লাহুলের অবস্থাও একই রকম। স্টেট ব্যাঙ্কের লাহুল শাখার ম্যানেজার সঙ্গীতা জানালেন, স্পিতির মতো তাঁর আওতায় থাকা এটিএমগুলি বন্ধ করে রাখা হয়নি। কাউন্টারগুলিতে রুম হিটার চালিয়েই দিনের বেশির ভাগ সময় এটিএম চালু রাখা হচ্ছে। এ দিন দুপুরে মোবাইলে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘ঠান্ডা প্রচণ্ড। তাই সারা দিনই রুম হিটার চালিয়ে আমরা এটিএম সচল রাখছি। তবে, বিকেলের পর থেকে আর কোনও ভাবেই মেশিনগুলো কাজ করছে না।’’
রুম হিটারের পাশাপাশি এটিএম মেশিনগুলিকে কি সোয়েটার বা কম্বল পরিয়ে রাখা হচ্ছে?
সঙ্গীতার দাবি, লাহুলের কোনও এটিএম মেশিনের গায়েই কিছু ‘চাপানো’ হয়নি। রুম হিটারেই আপাতত কাজ চালানো হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘এর থেকে বেশি ঠান্ডা পড়লে বন্ধ করা ছাড়া আর উপায় থাকবে না।’’
আরও পড়ুন
এ বারের দোলে অনুষ্কার ‘পরী’ আতঙ্ক!
মেশিন না হয় বন্ধ রাখা হল। টাকাও না হয় লেনদেন হল ব্যাঙ্ক থেকে। কিন্তু, ওই প্রবল ঠান্ডায় কাজ করছেন কী করে তাঁরা? সঙ্গীতা জানালেন, তিনি লাহুলেরই ভূমিকন্যা। কাজেই ছোটবেলা থেকে এই ঠান্ডার সঙ্গে অভ্যস্ত। কাজ করতে তেমন একটা অসুবিধা হয় না। ভিন্রাজ্যের সাংবাদিককে ফোনে বললেন, ‘‘ঠান্ডায় অসুবিধা না হলেও, তুষারপাতের সময় ভীষণ সমস্যা হয়। তবে, কাজ তো করতেই হবে।’’
তবে, পঞ্জাবের হোসিয়ারপুরের ছেলে সমীরের অভিজ্ঞতা একটু অন্য রকম। হেসে বললেন, ‘‘আমার ৪৫ ডিগ্রির শহর থেকে মাইনাস ৩০-এ এসে পড়েছি! জার্নিটা ভেবে দেখুন। পাগল পাগল লাগে। দু’বছর হয়ে গেল এখানে।’’
কে জানত, এই লাহুল-স্পিতিতে টাকাই বরফ, বরফই টাকা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy