‘অপারেশন সিঁদুর’-এ ভারতের কৌশলগত জয় হলেও পাকিস্তান ফের কাশ্মীরের আন্তর্জাতিকীকরণের সুযোগ পেয়ে গিয়েছে বলে মন্তব্য করলেন জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা।
আজ, দ্বিতীয় দিন কাশ্মীরে শান্ত রয়েছে নিয়ন্ত্রণ রেখা ও সীমান্ত। ধীরে ধীরে কিছুটা হলেও স্বাভাবিক হচ্ছে পরিস্থিতি।
ওমরের মতে, ‘‘কাশ্মীর যেখানে পৌঁছল সেখানে পৌঁছনোর কথা আমরা ভাবিনি। রক্তপাত, কষ্ট আর উত্থানপতনের ফলে সব বদলে গিয়েছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘পাকিস্তান ফের কাশ্মীরের আন্তর্জাতিকীকরণের সুযোগ পেয়েছে। সেই সঙ্গে ধাক্কা খেয়েছে আমাদের অভ্যন্তরীণ শান্তি। এই কৌশলগত মূল্যের কথা মনে রাখতে হবে।’’ শিমলা চুক্তির পর থেকেই ভারত দাবি করে এসেছে, কাশ্মীর ভারত-পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক বিষয়। কিন্তু ভারত-পাকিস্তানের
মধ্যে সংঘর্ষবিরতির কথা ঘোষণা করার পরে কাশ্মীর নিয়ে মধ্যস্থতা করার আগ্রহও প্রকাশ করেছেন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সংঘর্ষবিরতিতে ভূমিকা নেওয়ার জন্য ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ।

মা-বাবার সঙ্গে আশ্রয় শিবির থেকে বাড়ি ফিরছে খুদেরা। সোমবার উরিতে। ছবি: পিটিআই।
ওমরের কথায়, ‘‘বছরের এই সময়ে পর্যটকদের দলে দলে উপত্যকায় আসার কথা। খোলা থাকার কথা স্কুল। বিমানবন্দরে প্রতি দিন ৫০ থেকে ৬০টি উড়ান চলাচল করার কথা। তার বদলে এখন গোটা অঞ্চল খাঁ খাঁ করছে। স্কুল বন্ধ। বন্ধ আকাশসীমাও।’’
শ্রীনগরের ব্যস্ত লাল চক, বাদশাহ চক ও রেসিডেন্সি রোডের বাজারে আজ দোকান খুলেছে। ব্যবসায়ীরা কিছুটা স্বস্তিতে। কিন্তু ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান তাঁরাও। ‘‘আমরা দোকান খুলেছি। পহেলগাম হামলার পরে উত্তেজানয় সকলেই উদ্বিগ্ন হয়েছিলাম। কিন্তু আমরা দীর্ঘদিন ধরে দোকান বন্ধ রাখতে পারব না। গোটা পরিবার এর উপরে নির্ভরশীল,’’ বললেন লাল চকের বস্ত্র ব্যবসায়ী আব্দুল আহাদ ওয়ানি। বুলেভার্ড রোডের কাছে হস্তশিল্প সামগ্রীর দোকান আছে ইয়াসিন লোনের। বললেন, ‘‘ব্যবসা ভালরকম ধাক্কা খেয়েছে। আমরা প্রতি দিনের ব্যবসার উপরে নির্ভরশীল। পর্যটকেরা এড়াচ্ছেন। রাস্তা শুনশান। পহেলগামের পরে পুরনো অশান্তির দিনগুলির স্মৃতি ফিরে এসেছে। মানুষ এখনও আতঙ্কে।’’
প্রায় একই অবস্থা পরিবহণ ব্যবসায়ীদের। শ্রীনগর-বারামুলা রুটের বাসচালক শাকের আহমেদ বলেন, ‘‘পহেলগামের ঘটনার পর থেকে কাশ্মীরে পর্যটক কম এসেছেন। আচমকা অশান্তির ভয় রয়েছে। ফলে আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। শান্তি ফিরুক। কাজে বাধা পেয়ে পেয়ে আমি ক্লান্ত।’’ জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন জানিয়েছে, পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে স্কুল খুলতে পারে। অনন্তনাগের ফল ব্যবসায়ী মহম্মদ রমজ়ান বললেন, ‘‘আমরা যথেষ্ট অশান্তি দেখেছি। যখনই কাশ্মীর বা সীমান্তে কিছু হয় তখনই আমাদের জীবিকা ধাক্কা খায়। আমরা শান্তিতে কাজ করতে চাই।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)