Advertisement
১৯ মে ২০২৪

ঘেরাও হওয়া সেই নাজমা-ই এখন সকলের প্রিয়

জামিয়া তো বটেই, দিল্লিতে সমস্ত কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে নাজমাই প্রথম মহিলা উপাচার্য।

নাজমা আখতার

নাজমা আখতার

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:৪০
Share: Save:

মাস দুয়েক আগেই পড়ুয়াদের ক্ষোভের মুখে ঘেরাও হতে হয়েছিল নাজমা আখতারকে। ডাকতে হয়েছিল পুলিশ। যদিও তারা তখন আসেনি। কিন্তু রবিবার ‘বিনা অনুমতিতে’ সেই পুলিশের ক্যাম্পাসে ঢোকার প্রশ্নে রুখে দাঁড়িয়ে ছাত্রছাত্রীদের বড় অংশের মন জিতে নিয়েছেন জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার উপাচার্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে তো বটেই, সরকারের প্রবল চাপের মুখেও তাঁর এই শিরদাঁড়া সোজা রাখা আপাতত অন্তত তাঁকে জনপ্রিয় করে তুলেছে জেএনইউ-সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের কাছে।

নাজমা গতকাল সাংবাদিক বৈঠকে প্রশ্ন তুলেছিলেন, কেন বিশ্ববিদ্যালয়কে না-জানিয়ে এবং তাদের অনুমতি ছাড়াই এ ভাবে চত্বরে ঢুকে পড়ল পুলিশ? জানিয়েছিলেন, এই ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করবেন এবং দিল্লি পুলিশের নামে এফআইআর-ও করবেন। শুধু তা-ই নয়, পড়ুয়াদের স্পষ্ট বলেছিলেন, আগাগোড়া তাঁদের পাশে থাকবে কর্তৃপক্ষ।

এই সাহসকে কুর্নিশ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক অধ্যাপক। যদিও তাঁদের আশঙ্কা, আগামী দিনে এর মাসুল গুনতে হতে পারে নাজমাকে। একই কথা পড়ুয়াদের একাংশের মুখেও। এঁদের সকলের বক্তব্য, উপাচার্যকে নিয়োগ করে কেন্দ্র। তার উপরে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের জুটির জমানায় নাজমা যে সাহস করে ওই কথা বলতে পেরেছেন, তা মন কেড়েছে তাঁদের। পরে অবস্থান বদলাতে তাঁর উপরে চাপ বাড়ানো হবে কি না, ঘুরছে সেই প্রশ্নও।

আরও পড়ুন: আসুর বিক্ষোভে আটক, পরে ছাড়া পেলেন সমুজ্জ্বল

জামিয়া তো বটেই, দিল্লিতে সমস্ত কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে নাজমাই প্রথম মহিলা উপাচার্য। প্রায় চার দশকের শিক্ষকতা এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রশাসন সামলানোর অভিজ্ঞতা তাঁর। পড়াশোনা করেছেন ব্রিটেন এবং ফ্রান্সে। উপদেষ্টা হিসেবে তাঁর পরামর্শ নিয়েছে ইউনেস্কো, ইউনিসেফের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। এর আগে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইন্দিরা গাঁধী জাতীয় মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ পদে ছিলেন।

২০০৮ সালে বাটলা হাউস সংঘর্ষের পরে জামিয়ার পড়ুয়া তালিকায় নাম পাওয়া গিয়েছিল দুই ‘ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন’ জঙ্গির। তা নিয়ে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়কে। তখনও ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তৎকালীন উপাচার্য তথা ইতিহাসবিদ মুশিরুল হাসান। নাজমার নাম উঠতেই সেই ‘হাসান সাহেবের’ কথাও মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে টেনে আনছেন অনেকে।

ছাত্র সংগঠন এআইএসএ-র প্রেসিডেন্ট এন সাই বালাজির কথায়, ‘‘জামিয়ায় যখন উপাচার্য পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, তখন মঙ্গলবারই পাকাপাকি ভাবে পুলিশ বসার জন্য ছাউনি তৈরি হয়েছে জেএনইউয়ের ক্যাম্পাসে।’’ নাজমা যেখানে চত্বরে পুলিশ ঢোকা নিয়ে প্রতিবাদে মুখর, সেখানে পুলিশ তা না-করায় অবমাননার অভিযোগ এনেছেন জেএনইউয়ের উপাচার্য এম জগদীশ কুমার।

এ দিন দেশের সমস্ত কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ বলেছেন, এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির লক্ষ্য হওয়া উচিত পড়ুয়াদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণ তৈরি করা এবং গুণমান বাড়িয়ে বিশ্ব মঞ্চে প্রথম সারিতে উঠে আসা। কিন্তু একাধিক ছাত্র-নেতার প্রশ্ন, সরকার যে ভাবে পড়ুয়াদের প্রশ্ন এবং প্রতিবাদ দুরমুশ করতে চাইছে, তাতে রাষ্ট্রপতির এই ‘স্বপ্ন’ সত্যি হবে কী ভাবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE