Advertisement
E-Paper

সংরক্ষণ নয়, কম্বলেই তুষ্ট ছিলেন জাঠ যোদ্ধা

জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে (জেএনইউতে) ‘দেশ-বিরোধী’ বিক্ষোভের জের এখনও কাটেনি। সংরক্ষণ চেয়ে আন্দোলনে নামা জাঠেদের বিক্ষোভে জ্বলছে হরিয়ানা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:২৭
পাম্পোরে সংঘর্ষের সময়ে ক্যাপ্টেন পবন কুমার।

পাম্পোরে সংঘর্ষের সময়ে ক্যাপ্টেন পবন কুমার।

জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে (জেএনইউতে) ‘দেশ-বিরোধী’ বিক্ষোভের জের এখনও কাটেনি। সংরক্ষণ চেয়ে আন্দোলনে নামা জাঠেদের বিক্ষোভে জ্বলছে হরিয়ানা। কিন্তু জিন্দের জাঠ পরিবারের ছেলে ও জেএনইউয়ের প্রাক্তনী পবন কুমারের মনে বিশেষ দাগ কাটেনি এ সব। শ্রীনগরের কাছে পাম্পোরে নিজের কাজ করছিলেন তিনি। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে দু’দিন ধরে চলা অভিযানে নিহত সেই ক্যাপ্টেন পবন কুমারের শেষকৃত্য ঠিক ভাবে করতে এখন জাঠেদের সহযোগিতা চেয়েছে সেনাবাহিনী।

জাঠ বিক্ষোভের আঁচে হরিয়ানার সবচেয়ে উত্তপ্ত এলাকাগুলির মধ্যে রয়েছে জিন্দ। সেখানকারই এক জাঠ পরিবারের ছেলে পবন কুমার পড়াশোনা করেছেন জেএনইউতে। বুলেট মোটরবাইক, বন্দুক, জিপপ্রিয় পবনের জন্ম ১৯৯৩ সালের ১৫ জানুয়ারি। অর্থাৎ সেনা দিবসে। শেষ পর্যন্ত সেই সেনাবাহিনীতেই যোগ দিয়েছিলেন তিনি।

গত কাল পাম্পোরে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লুকিয়ে থাকা জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াইয়ে একেবারে সামনের সারিতে ছিলেন প্যারাকম্যান্ডো পবন। সেনার বিবৃতি অনুযায়ী, ‘‘আহত হয়েও অভিযান থেকে পিছু হটেননি পবন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকা অসামরিক ব্যক্তিদের বাঁচানোকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন তিনি।’’ সেনা সূত্রে খবর, আগেও দু’টি জঙ্গি দমন অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছেন পবন। তাতে খতম হয়েছিল তিন জঙ্গি।

জেএনইউ আর হরিয়ানার রাজনীতি নিয়ে মাথা না ঘামালেও পবন যে সব খবর রাখতেন তার প্রমাণ আছে। নিজের শেষ ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘‘কারও সং‌রক্ষণ চাই, কারও স্বাধীনতা। আমার নিজের কম্বল ছাড়া কিছু দরকার নেই।’ (কিসিকো রিজার্ভেশন চাহিয়ে, কিসিকো আজাদি ভাই। হামে কুছ নেহি চাহিয়ে ভাই, বাস আপনি রজাই।) ২৩ বছরের একমাত্র ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে পবনের বাবা রাজবীর সিংহের প্রতিক্রিয়া, ‘‘একমাত্র ছেলে সেনা ও দেশের কাজ করতে গিয়ে মারা গিয়েছে। কোনও বাবার পক্ষে এর চেয়ে বেশি গর্বের কিছু হতে পারে না।’’

কিন্তু পবনের শেষকৃত্য নিয়েই এখন কিছুটা অসুবিধেয় পড়েছে সেনা। জাঠ বিক্ষোভের জেরে সড়কপথ বন্ধ থাকায় সোমবার আকাশপথে পবনের দেহ জিন্দে আনা হবে। কিন্তু তার পরেও বিক্ষোভে বিপর্যস্ত হরিয়ানায় পূর্ণ সামরিক সম্মানে তাঁর শেষকৃত্যে কোনও বাধা আসবে কিনা তা নিয়ে সেনা নেতৃত্ব পুরোপুরি নিশ্চিত নন বলেই বাহিনী সূত্রে খবর। তাই প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখপাত্র কর্নেল এস ডি গোস্বামী বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, ‘‘পবনের গ্রামে আগামিকাল তাঁর শেষকৃত্যের ব্যবস্থা করছে সেনা ও রাজ্য সরকার। পবনকে উপযুক্ত বিদায় জানাতে আমরা হরিয়ানাবাসীর সাহায্য চাই।’’

নিহত ক্যাপ্টেনের শেষকৃত্যে কতটা সহযোগিতা পাওয়া যাবে তা বোঝা যাবে সোমবারেই। কিন্তু রবিবার
পর্যন্ত জাঠ বিক্ষোভ কমার কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি। হরিয়ানার পরিস্থিতি নিয়ে আজ দিল্লিতে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক বসে। সেই বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ীদের সঙ্গে কথা বলেন হরিয়ানার জাঠ নেতারা। বৈঠকের পরে বিজেপির হরিয়ানার দায়িত্বে থাকা নেতা অনিল জৈন জানান, ‘‘জাঠেদের অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) মর্যাদা দিতে রাজ্য বিধানসভার আগামী অধিবেশনে বিল আনা হবে।’’ সংসদীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডুর নেতৃত্বাধীন এক কমিটিকে বিষয়টি দেখতে বলা হয়েছে।

কিন্তু তাতেও বিক্ষোভ ও হিংসা কমেনি। সংরক্ষণ নিয়ে অধ্যাদেশ না এলে আন্দোলন থামবে না বলে জানিয়েছেন জাঠ সংঘর্ষ সমিতির সভাপতি যশপাল মালিক। আবার ইউপিএ জমানায় জাঠেদের দেওয়া সংরক্ষণ সুপ্রিম কোর্টে খারিজ হয়েছিল। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার জানে, পঞ্চাশ শতাংশের বেশি সংরক্ষণ দেওয়া যায় না। তাই অন্য কোনও শ্রেণির সংরক্ষণের কোটা থেকেই জাঠেদের সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। সাধারণ শ্রেণির মধ্যে অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির কোটা বাড়িয়ে সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর।

রবিবার কাইথাল শহরেও কার্ফু জারি করেছে প্রশাসন। এ নিয়ে কার্ফুর কবলে পড়ল রাজ্যের ন’টি শহর। কাইথালে অন্য শ্রেণির জাঠ-বিরোধী মিছিল রক্তচাপ বাড়িয়েছে প্রশাসনের। রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে
অ-জাঠ, বিশেষত পঞ্জাবিদের দোকানপাট লুঠের খবরও পাওয়া গিয়েছে। জাঠ বিক্ষোভ এ বার জাতিদাঙ্গার চেহারা নিতে পারে বলে ধারণা প্রশাসনের একাংশের। হিংসায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দশে। সড়ক, রেল যোগাযোগ বিপর্যস্ত থাকায় বিমান সংস্থাগুলিকে দিল্লি থেকে চণ্ডীগড়, অমৃতসর ও জয়পুর রুটে বাড়তি উড়ান চালাতে বলেছে কেন্দ্র। সুযোগ বুঝে ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে বিমান সংস্থাগুলি।

জাঠ বিক্ষোভের আঁচ পড়েছে রাজধানীতেও। হরিয়ানার মুলক খাল থেকে দিল্লির পানীয় জল সরবরাহ করা হয়। সেখানকার জল পরিশোধন কেন্দ্র শনিবার থেকে বিক্ষোভকারী জাঠেদের দখলে। জল সঙ্কটের জেরে সোমবার দিল্লির সব স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেজরীবাল সরকার।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy