রাজনীতির ময়দানে পা দেওয়ার অনেক আগেই জয়ললিতার হাতেখড়ি সিনেমায়। ১৯৬০-১৯৭০— চুটিয়ে রাজত্ব করেছেন কলিউডে। অভিনেত্রী হতে যাঁর এতটুকু ইচ্ছে ছিল না, তাঁর ফিল্মের কেরিয়ার কিন্তু চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার মতো। সব মিলিয়ে ১৪০টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন। দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমায় জয়ললিতার আবির্ভাব, বিচরণ এবং চলে যাওয়ার ইতিহাস কোনও ছবির চিত্রনাট্যের চেয়েও বেশি নাটকীয়।
জন্মেছিলেন অভিজাত পরিবারে। কিন্তু জয়ললিতা কিশোরী বয়স ছুঁতে না ছুঁতেই পরিবারে আর্থিক টানাটানি শুরু। ভাল ছাত্রী হয়েও মার চাপে খানিকটা বাধ্য হয়ে সিনেমার জগতে ঢুকে পড়া। প্রচার ভালবাসতেন না একেবারেই। সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘জীবনের দু’টি হাই প্রোফাইল কেরিয়ারে (সিনেমা এবং রাজনীতি) আমাকে ঠেলে দেয় ভাগ্যই।’’
১৯৬১ সাল। বারো বছর বয়সে শঙ্কর গিরির নির্দেশনায় ইংরেজি ছবি ‘এপিসল’-এর মাধ্যমে সিনেমা জগতে পা রাখা। ১৫ বছর বয়সে অভিনয় করেছিলেন যে ছবিতে, সেটি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য হওয়ায় নিজেই দেখতে পাননি! ১৯৬৪ সালে পরিচালক বি আর পান্থুলুর কন্নড় ছবি ‘চিন্নাদা গোম্বে’-তে নায়িকার ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল তাঁকে। তার পর থেকেই নজর কাড়তে শুরু করেন জয়ললিতা। ১৯৬৫ –তে তামিল এবং তেলুগু ইন্ডাস্ট্রিতে অভিনয় শুরু। সেই তামিল ছবি ‘ভেন্নিরা আদাইয়া’-য় মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়ের ভূমিকায় দেখা যায় জয়ললিতাকে। তাঁর সঙ্গে এক মনোবিদের প্রেমের গল্প খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল সে সময়।
এর পরে পান্থুলুই একটি ছবিতে তাঁকে নিয়ে আসেন এম জি রামচন্দ্রনের (এমজিআর) বিপরীতে অভিনয়ের জন্য। কেউ তখনও ভাবেনি এই জুটি ইতিহাস তৈরি করবে। এমজিআরের সঙ্গে মোট ২৮টি ছবিতে অভিনয় করেন জয়ললিতা। একটি তামিল পত্রিকার দাবি, এমজিআর বা অন্য কোনও প্রযোজকের সঙ্গে জয়ললিতা নিজে ঘনিষ্ঠতা তৈরির চেষ্টা করেছেন, এমনটা বলা যায় না। তিনি বরাবরই নিজের আভিজাত্য নিয়ে এগিয়ে গিয়েছেন। ওই পত্রিকা জানাচ্ছে, এমজিআরই বরং প্রকাশ্যে বোঝানোর চেষ্টা করতেন জয়ললিতার প্রতি তাঁর দুর্বলতা রয়েছে। তিনিই চাইতেন তাঁর সঙ্গে সব ছবিতে জয়ললিতাকে নায়িকা নেওয়া হোক।
পরে অবশ্য শিবাজি গণেশন, মুথুরামন, জয়শঙ্কর, নাগেশ এবং রবিচন্দ্রনের মতো অভিনেতাদের সঙ্গেও কাজ করেছেন জয়ললিতা। সৌন্দর্য, বুদ্ধিমত্তা এবং প্রতিভা— কোনওটাই কম ছিল না। নাচ-গান-অভিনয় তিন ক্ষেত্রেই অসম্ভব সাবলীল। সেই সময়ে দাঁড়িয়ে স্কার্ট-স্যুইমিং কস্টিউম-স্লিভলেস ব্লাউজে নিজেকে যে ভাবে তুলে ধরতে পেরেছিলেন, তা তামিল ইন্ডাস্ট্রিতে এর আগে কেউ দেখেনি।
কেরিয়ারে হিন্দি ছবি বলতে একটিই। ধর্মেন্দ্রর বিপরীতে ‘ইজ্জত’। ১৯৭২ সালে তামিল ছবি ‘পাট্টিকাডা পাট্টানামা’-র জন্য জাতীয় পুরস্কার পান। একটা সময়ে দক্ষিণী ছবির দুনিয়ায় সব চেয়ে বেশি পারিশ্রমিক ছিল তাঁর। ১৯৮০ সালে একটি তামিল ছবিতে শেষ বার অভিনয়। তার পরেই আস্তে আস্তে রাজনীতির গুরুত্ব বাড়তে থাকে জয়ললিতার জীবনে। এডিএমকে-র সদস্য হলেন ১৯৮২-তে। ন’বছর পরে মুখ্যমন্ত্রীর গদি। জয়ললিতা হলেন আম্মা। সেই শুরু। ২৫ বছর পেরিয়ে থেমে গেল আম্মার যাত্রা।