Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
ফের উত্তরপ্রদেশ

রাস্তায় ফেলে টেনেহিঁচড়ে হেনস্থা সাংবাদিককে

ফের সাংবাদিক নিগ্রহ। এবং আবারও ঘটনাস্থল সেই উত্তরপ্রদেশ। সাংবাদিক গজেন্দ্র সিংহকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় চলতি মাসের গোড়াতেই নাম জড়িয়েছে রাজ্যের এক মন্ত্রীর। তা নিয়ে বিতর্ক থামার আগে আরও এক সাংবাদিককে মারধরের ঘটনা সামনে এল সোমবার।

সংবাদ সংস্থা
লখনউ শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৫ ০৩:৩৪
Share: Save:

ফের সাংবাদিক নিগ্রহ। এবং আবারও ঘটনাস্থল সেই উত্তরপ্রদেশ। সাংবাদিক গজেন্দ্র সিংহকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় চলতি মাসের গোড়াতেই নাম জড়িয়েছে রাজ্যের এক মন্ত্রীর। তা নিয়ে বিতর্ক থামার আগে আরও এক সাংবাদিককে মারধরের ঘটনা সামনে এল সোমবার।

টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক হায়দার খান এ দিন পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছেন, গত কাল সন্ধে বেলা চুরির খবর দেওয়ার নাম করে তাঁকে পুরানপুর এলাকায় ডেকে পাঠান কয়েক জন। পৌঁছনোর পর শুরু হয় মারধরের পালা।শুধু তা-ই নয়, বন্দুকের বাট দিয়ে মাথায় মেরে, মোটরবাইকের সঙ্গে হাত-পা বেঁধে রাস্তা দিয়ে প্রায় ১০০ মিটার টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। রাস্তাতেই অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে ছিলেন হায়দার। কিছু পথচারী পরে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

হায়দার খানের অভিযোগ, আনন্দ নামে এক ব্যক্তি ও তার দলবলের বিরুদ্ধে সম্প্রতি জোর করে জমি নিয়ে নেওয়া সংক্রান্ত কিছু খবর করেছিলেন তিনি। সেই রাগেই তারা এ ভাবে চড়াও হয়েছে বলে সন্দেহ ওই সাংবাদিকের।

পিলিভিট জেলার পুলিশ সুপার জে কে শাহি জানিয়েছেন, অভিযোগ পাওয়া মাত্র তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। সাংবাদিক নিগ্রহে অভিযুক্ত সন্দেহে চার জনকে আটকও করা হয়েছে। একই সঙ্গে হায়দার খানের শারীরিক পরীক্ষা করা হচ্ছে।

ক’দিন আগেই উত্তরপ্রদেশের শাহজাহানপুরে জগেন্দ্র সিংহ নামে এক সাংবাদিককে পুড়িয়ে মারায় অভিযোগের আঙুল উঠেছিল রাজ্যের মন্ত্রী রামমূর্তি বর্মার দিকে। সে নিয়ে দেশ জুড়ে তোলপাড় পড়ে গেলেও বিশেষ হেলদোল নেই অখিলেশ যাদব প্রশাসনের। জগেন্দ্র-হত্যায় সিবিআই তদন্তের দাবি উঠেছিল আগেই। কিন্তু সরকার আজ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তদন্ত যে ভাবে এগোচ্ছে তা-ই চলবে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীকে এর ভার দেওয়ার কোনও পরিকল্পনাই নেই তাদের। অভিযুক্ত অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ মন্ত্রী রামমূর্তি বর্মাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিয়েছে অখিলেশ যাদব সরকার।

গত ১ জুন সদর বাজার এলাকায় ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক জগেন্দ্র সিংহের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে যায় পুলিশের একটি দল। তারাই ওই সাংবাদিকের গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে তাঁর বাড়ির লোকের অভিযোগ। ৮ জুন হাসপাতালে মারা যান জগেন্দ্র। পুলিশকে দেওয়া শেষ বয়ানে তিনি বলেছিলেন, রামমূর্তি যাদবের খনি মাফিয়া যোগ ও জোর করে জমি কেড়ে নেওয়া নিয়ে ফেসবুকে ধারাবাহিক ভাবে পোস্ট লিখছিলেন তিনি। তার বদলা নিতে বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়েছিলেন অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ মন্ত্রীই। জগেন্দ্রর মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে পুলিশে যে এফআইআর দায়ের করেন, তারও বক্তব্য একই।

ওই সাংবাদিকের বয়ানের ভিডিও সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে। কিন্তু তাতে বিশেষ আমল দিতে নারাজ উত্তরপ্রদেশ সরকার। বরং অভিযুক্ত মন্ত্রীকে কার্যত সমর্থন করে আজ মুখ খুলেছেন তাঁরই মন্ত্রিসভার এক সতীর্থ। রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে উদ্যান বিষয়ক মন্ত্রী পার্শ্বনাথ যাদবকে প্রশ্ন করা হলে এ দিন তিনি জবাব দেন, ‘‘এই সব মৃত্যু তো নিয়তির ব্যাপার। কার কী-ই বা করার থাকে।’’

রামমূর্তির মতো এতো গুরুতর অভিযোগ না হলেও বিতর্ক বেধেছে আরও এক মন্ত্রীর কাণ্ডকারখানায়। তিনি কৈলাস চৌরাসিয়া। পরিবহণ মন্ত্রকের এক কর্মীকে তিনি পিটিয়েছেন বলে অভিযোগ জমা পড়েছে।

দিনে দুপুরে খুন, ধর্ষণ, মারধর, মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে আইন হাতে তুলে নেওয়ার ভূরি ভূরি অভিযোগ সত্ত্বেও টনক নড়েনি উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনের। যাবতীয় সমালোচনা উড়িয়ে দিয়ে তাই তাদের সগর্ব ঘোষণা, মহিলাদের নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলার দিক থেকে সব চেয়ে এগিয়ে তাদের রাজ্যই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE