Advertisement
E-Paper

দোষ প্রমাণিত হলে মৃত্যুদণ্ডেও রাজি বিচারপতি

যাঁর হাতে বিচারের ভার, এ বার যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠল তাঁর বিরুদ্ধেই। অভিযোগ করলেন যিনি, তিনিও নিজে বিচারক। অভিযোগকারিণী নিজে কর্মক্ষেত্রে যৌন নিগ্রহ রুখতে জেলাস্তরের বিশাখা কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন। যিনি কোনও দিন ভাবেননি, তাঁকেও যৌন হেনস্থার শিকার হতে হবে এবং অভিযোগ জানাতে হবে খোদ মধ্যপ্রদেশের হাইকোর্টের বিচারপতির বিরুদ্ধে।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৪ ০৩:১৯

যাঁর হাতে বিচারের ভার, এ বার যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠল তাঁর বিরুদ্ধেই। অভিযোগ করলেন যিনি, তিনিও নিজে বিচারক। অভিযোগকারিণী নিজে কর্মক্ষেত্রে যৌন নিগ্রহ রুখতে জেলাস্তরের বিশাখা কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন। যিনি কোনও দিন ভাবেননি, তাঁকেও যৌন হেনস্থার শিকার হতে হবে এবং অভিযোগ জানাতে হবে খোদ মধ্যপ্রদেশের হাইকোর্টের বিচারপতির বিরুদ্ধে।

যার জেরে নিজের কাজ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হয়েছেন গ্বালিয়রের ওই অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি আর এম লোঢাকে চিঠি লিখে সব জানিয়েছেন তিনি। মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের বিচারপতি অবশ্য সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বিচারপতি লোঢাকে আজ দু’পাতার চিঠিতে জানিয়েছেন, “দোষী সাব্যস্ত হলে যে কোনও শাস্তি মেনে নেব। আমি মৃত্যুদণ্ডের জন্যও প্রস্তুত।”

তবে তাঁর বক্তব্য, “বিচারব্যবস্থার প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে। তার ভাবমূর্তি নিয়েও আমার চিন্তা রয়েছে। তাই কোর্টে কোনও বিচার নয়, আমি চাই সিবিআই বা অন্য কোনও সংস্থা তদন্ত করুক। দেখা হোক, আমি কোনও দিন ওই মহিলা বিচারক বা অন্য কোনও অধস্তন মহিলাকর্মীকে হেনস্থা বা নিগ্রহ করেছি কি না।”

হাইকোর্টের বিচারপতির বয়ান অনুযায়ী, এ বছর জুন মাসে তিনি দিল্লিতে ছিলেন। তখন ওই মহিলা বিচারক তাঁকে ফোন করে জানান, এক বিচারবিভাগীয় অফিসার তাঁকে হেনস্থা করছেন। বিচারপতি বলেন, তিনি ছুটিতে দিল্লিতে আছেন, গ্বালিয়র ফিরে বিষয়টি দেখবেন। এর পরে গ্বালিয়র ফিরে তিনি মহিলাকে ফোন করেন। তার পরেই মহিলা তাঁর স্বামীর সঙ্গে বিচারপতির বাংলোয় এসে বিচারবিভাগীয় অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। বিচারপতির দাবি, সেই সূত্রে আরও এক বার মহিলা বিচারকের সঙ্গে তাঁর কথা হয়। এ ছাড়া ওই মহিলার সঙ্গে তাঁর কখনওই কথা হয়নি। তিনি তাঁকে আর কোনও ফোন বা এসএমএস-ও করেননি।

মহিলা বিচারক অবশ্য বিচারপতি লোঢাকে চিঠিতে জানিয়েছেন, কী ভাবে মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের বিচারপতি তাঁকে একাধিক বার হেনস্থার চেষ্টা করেছেন। তাঁর কথায়, “আমি খুব সতর্ক থাকতাম। বিরক্ত লাগত। উনি যে ধরনের শব্দ ব্যবহার করতেন, তাতে অস্বস্তি হত। তবু ওঁর কথায় পাত্তা না দিয়ে নিজের কাজ করে যেতাম।” হাইকোর্টের ওই বিচারপতির নির্দেশে তাঁকে আরও তিন জন বিচারবিভাগীয় অফিসার নানা ভাবে হেনস্থা করেছেন বলে দাবি ওই মহিলার। এক বার এক অফিসার মারফত তাঁকে বিচারপতি জানান, বাংলোর এক অনুষ্ঠানে আইটেম সং-এর সঙ্গে ওই মহিলা-বিচারককে নাচতে হবে। মহিলার দাবি, ‘এত রকম চাপের মুখেও নতিস্বীকার না করে মনযোগ দিয়ে নিজের কাজ করেছি।’ নানা ইঙ্গিত দিয়েও কিছু না হওয়ায় বিচারপতি মহিলাকে এর পরে পেশাগত দিক থেকে চাপে ফেলার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। গত ২১ জুন সন্ধ্যায় ওই বিচারপতি তাঁকে ফোন করে নিজের বাংলোয় রাতে দেখা করতে বলেছিলেন। কিন্তু তিনি পরের দিন সকালে নিজের স্বামীকে নিয়ে বাংলোয় যান। তাতে বিরক্ত হন বিচারপতি। মহিলা-বিচারককে বলেন, পনেরো দিন পরে দেখা করতে।

চিঠিতে মহিলা লিখেছেন, ওই বিচারপতি মধ্যপ্রদেশের প্রধান বিচারপতির কাছে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ জানিয়ে গত মাসে প্রত্যন্ত জায়গায় বদলি করে দেন তাঁকে। কিন্তু তাঁর মেয়ের পড়াশোনার মাঝপথেই এই নির্দেশ আসায় অসুবিধায় পড়েন ওই মহিলা-বিচারক। তিনি রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে আবেদনে জানান, অন্তত আট মাসের জন্য তাঁকে গ্বালিয়রেই রাখা হোক। তা হলে মেয়ের পড়াশোনায় অসুবিধা হবে। কিন্তু তাঁর আর্জি শোনা হয়নি বলে অভিযোগ। শেষমেশ তিনি দ্বারস্থ হন সেই বিচারপতিরই। ভেবেছিলেন, মানবিকতার খাতিরে হয়তো সাহায্য করবেন তিনি। কিন্তু ভুল ভাঙে তাঁকে ফোন করার পরে। মহিলার দাবি, “উনি ঠাট্টা করে বললেন, কেরিয়ারের মাঝপথে আমাকে এ ভাবে বদলি করা হয়েছে কারণ আমি ওঁর কথায় সাড়া দিইনি। ওঁর বাংলোয় এক বারের জন্যও একা যাইনি।” তার পরে তাঁকে সরাসরি ভয় দেখিয়ে কেরিয়ার শেষ করে দেওয়ার হুমকি দেন বিচারপতি।

এই কথায় ভয় পেয়ে যান মহিলা বিচারক। নিজের সম্মান রক্ষা এবং মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে এর পরেই তিনি ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ১৫ জুলাই পদ ছাড়েন তিনি। রাষ্ট্রপতি এবং ভারতের প্রধান বিচারপতি এবং কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীকে তিনি চিঠিতে গত শুক্রবার সব জানান। প্রশ্ন তোলেন, “এ ভাবে যদি মা-বোন-বা স্ত্রী, এমনকী যিনি নিজে আইন রক্ষার দায়িত্বে আছেন, তিনিও সুরক্ষিত না থাকেন, কোন সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করছি আমরা?” বিচারপতি লোধা জানিয়েছেন, মধ্যপ্রদেশের বিচারপতির কাছে রিপোর্ট দেখে তিনি পদক্ষেপ করবেন। এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হয়েছে একটি জনস্বার্থ মামলাও।

sexual abuse death penalty judge
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy