Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

‘বিশ্বাসঘাতক’, ফেসবুকে আক্রান্ত কর্নাটকি শিল্পীরা

ব্যক্তিগত ভাবে হিন্দুত্ববাদী নেতাদের হুমকির মুখেও পড়েছেন কেউ কেউ। নিত্যশ্রী মহাদেবন, ও এস অরুণের মতো শিল্পীদের ‘হিন্দু ধর্মের বিশ্বাসঘাতক’, ‘কর্নাটকি সঙ্গীতের লজ্জা’ বলা হচ্ছে। তাঁদের অনুষ্ঠান বয়কটেরও ডাক দিয়েছেন অনেকে।

সংবাদ সংস্থা
চেন্নাই শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৮ ০২:০৬
Share: Save:

উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের নিশানায় এ বার তামিলনাড়ুর কর্নাটকি সঙ্গীত শিল্পীদের একাংশ। অন্য ধর্মের ভক্তিগীতি গাওয়ার জন্য গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় আক্রমণ করা হচ্ছে কিছু কিছু শিল্পীকে। ব্যক্তিগত ভাবে হিন্দুত্ববাদী নেতাদের হুমকির মুখেও পড়েছেন কেউ কেউ। নিত্যশ্রী মহাদেবন, ও এস অরুণের মতো শিল্পীদের ‘হিন্দু ধর্মের বিশ্বাসঘাতক’, ‘কর্নাটকি সঙ্গীতের লজ্জা’ বলা হচ্ছে। তাঁদের অনুষ্ঠান বয়কটেরও ডাক দিয়েছেন অনেকে।

গোলমালের সূত্রপাত ও এস অরুণের একটি অনুষ্ঠান নিয়ে। ২৫ অগস্ট টি স্যামুয়েল জোসেফ নামে এক শিল্পীর অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার কথা ছিল অরুণের। ‘ইয়েসুভিন সঙ্গম সঙ্গীতম’ নামে ওই অনুষ্ঠানে অরুণের মতো শিল্পী কেন গান গাইবেন, সেই প্রশ্ন তুলে প্রথমে আক্রমণ শুরু হয় শিল্পীর ফেসবুক পেজে। ‘আপনার মতো হিন্দু শিল্পী অন্য ধর্মের ঈশ্বর সাধনায় কেন অংশ নেবেন’? সোশ্যাল মিডিয়ায় এই প্রশ্ন তোলেন অনেকেই। তীব্র কটাক্ষের মুখে পড়ে শেষমেশ গত ৬ অগস্ট সেই অনুষ্ঠান বাতিলের সিদ্ধান্ত নেন অরুণ। কিন্তু তাতেও আক্রমণ থামেনি। রাষ্ট্রীয় সনাতন সেবা সঙ্ঘম (আরএসএসএস) নামে এক কট্টরপন্থী হিন্দুত্ববাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা এস রামনাথন সরাসরি আক্রমণ করেন অরুণকে। দু’জনের কথোপকথনের একটি অডিয়ো ফাঁসও হয় সম্প্রতি। যেখানে অরুণ রামনাথনকে জানান, টি এম কৃষ্ণর মতো শিল্পীও এর আগে গির্জায় গেয়েছেন। এর পরে ওই সব শিল্পীর উপর আক্রমণের মাত্রা আরও বাড়ে। অরুণ কোথায় গলায় ক্রশ ঝুলিয়ে গান গেয়েছেন, বা অরুণা সাইরাম নামে আর এক শিল্পী কখন খ্রিস্টান গানের অ্যালবাম উদ্বোধন করেছেন, সেই সব পুরনো ছবি প্রকাশ করে সমালোচনা আরও তীব্র হয়।

২৫ তারিখের অনুষ্ঠান বাতিল প্রসঙ্গে অরুণ বলেন, ‘‘হুমকি পাওয়ার পরের দিনই আমি অনুষ্ঠান বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিলাম। কারণ এই চাপ আমি আর নিতে পারছিলাম না। আমার মতে সঙ্গীত সকলের জন্য, গণতান্ত্রিক। অন্য ধর্ম বা সংস্কৃতির গান শেখা বা গাওয়ায় কোনও অপরাধ থাকতে পারে বলে আমি মনে করি না। এর আগে সুফি অনুষ্ঠানে গজ়লও গেয়েছি। তার মানে কি আমি মুসলিম হয়ে গিয়েছিলাম? একেবারেই না। কিন্তু এই মানসিক চাপ নিয়ে আমার কোনও অনুষ্ঠানে গান গাওয়া সম্ভব ছিল না।’’ তবে টি এম কৃষ্ণের মতো শিল্পী কিন্তু মনে করছেন অরুণের ওই অনুষ্ঠান বাতিল করা উচিত হয়নি। তাঁর সংযোজন, ‘‘এটা দৃঢ়চেতা হওয়ার সময়। আত্মরক্ষার নয়।’’

অরুণা সাইরাম, নিত্যশ্রী মহাদেবনের মতো কিছু শিল্পী আবার ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে, তাঁরা কোনও ভাবেই হিন্দু ধর্মকে আঘাত করেননি। যদিও তাতে হেনস্থা আর আক্রমণ থামেনি। স্বর্ণমালা নামে এক নৃত্যশিল্পী অবশ্য বললেন, ‘‘আসলে পরিবেশ-পরিস্থিতি এখন এমনই যে এ সব নিয়ে এ ভাবে বাড়াবাড়ি হচ্ছে। আমরা সকলেই ভীষণ ভাবে স্পর্শকাতর হয়ে পড়েছি, ভাবছি আমাদের সংস্কৃতিকে আঘাত করছি। আর তাই আত্মরক্ষার চেষ্টাও করছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Traitor Facebook Karnataka Artist
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE