প্রস্তুতি: আজ, শনিবার ভোট। তার আগে ইভিএম ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে যাচ্ছেন ভোটকর্মীরা। শুক্রবার বেঙ্গালুরুতে। ছবি: পিটিআই
‘উনি’ শুনলাম দু’কোটি টাকার সোনার চেয়ারে বসে দোল খান!
বল্লারীর রাস্তায় প্রসঙ্গটা তুলতেই ঝাঁঝিয়ে উঠলেন গাড়ির চালক, ‘‘গাড়ি কেমন দুলছে দেখছেন? ওঁদের লোহা বোঝাই ট্রাক গিয়ে গিয়েই তো রাস্তার এই অবস্থা। সবাইকে লুটে খাচ্ছেন।’’
‘উনি’টি হলেন জি জনার্দন রেড্ডি। লোক মুখে, খনি মাফিয়া। পুলিশ কনস্টেবলের ছেলে থেকে উত্তর কর্নাটকের লোহার আকরিক খনি সাম্রাজ্যের সম্রাট। ৩৫ হাজার কোটি টাকার বেআইনি খননের মামলায় অভিযুক্ত। বল্লারীতে অনেকের চোখে ভগবান। অনেকের কাছে দুর্নীতির জন্য ঘৃণ্য। অর্থ ও পেশি-শক্তির জন্য সকলের কাছেই তিনি আতঙ্কের।
তবে কর্নাটকে ক্ষমতায় ফিরতে বিজেপির বড় ভরসা এই জনার্দন রেড্ডিই। নিজে ভোটে লড়ছেন না। কিন্তু তাঁর দুই ভাই, করুণাকর ও সোমশেখর রেড্ডিকে বিজেপি প্রার্থী করেছে। তাঁর ডান হাত, ভাইপো, ভাগনে, আত্মীয়রাও টিকিট পেয়েছেন।
এমনিতেই বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী বি এস ইয়েদুরাপ্পা নিজেই কালিমালিপ্ত। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন দুর্নীতির জন্য জেলেও গিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে রেড্ডি ভাইদের প্রত্যাবর্তন। দুইয়ে মিলিয়ে নরেন্দ্র মোদীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে এত দিনের জেহাদ উত্তর কর্নাটকে এসে ধরাশায়ী।
মোদীর বিরুদ্ধেই এখন দুর্নীতিগ্রস্তদের মাথায় তোলার অভিযোগ। রাহুল গাঁধী প্রতিটি সভায় বলেছেন, ‘‘দুর্নীতিগ্রস্ত ইয়েদুরাপ্পা ছাড়া আর কাউকে বিজেপি খুঁজে পায়নি। রাজ্যের ৩৫ হাজার কোটি টাকা লুট করা রেড্ডি পরিবারের ৮ জনকে টিকিট দিয়েছে।’’
ইয়েদুরাপ্পার সাফ কথা। রেড্ডিরা তাঁকে অন্তত ১৫টি আসন এনে দেবেন। তাই সব দোষ মাফ। কংগ্রেসের অভিযোগ, ভোটের পরে বিজেপির আসন কম পড়লে জনার্দন রেড্ডির টাকার ঝুলি নিয়েই ঘোড়া কেনাবেচায় নামবে বিজেপি।
কত টাকা জনার্দন রেড্ডির সিন্দুকে? ২০০১-এ বল্লারীতে যখন লোহার আকরিক খননে নামেন জনার্দন, তখন বিশ্ব জুড়ে লোহার তেমন চাহিদাই নেই। বছর তিনেক পর থেকে চিন ২০০৮-এর বেজিং অলিম্পিকসের জন্য স্টেডিয়াম তৈরি শুরু করে। চিনে লোহা রফতানি করে রেড্ডিদের ভাগ্যও ঘুরে যায়।
বল্লারীর প্রাচীন প্রবাদ, রেড্ডিরা ধোসা খেতে সপরিবারে হেলিকপ্টারে চেপে বেঙ্গালুরু যান। তিরুপতির ভগবান ভেঙ্কটেশ্বরকে ৪৫ কোটি টাকা দামের হিরের মুকুট দান করেন। নোট বাতিলের ঠিক পরে যখন দেশে নগদের হাহাকার, তখন তিনি মেয়ের বিয়েতে ৫০০ কোটি টাকা খরচ করেছিলেন বলেও অভিযোগ উঠেছিল। জেল থেকে ছাড়া পেলেও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জনার্দনের বল্লারীতে ঢোকা বারণ। ভাই-ভাইপোদের জন্য প্রচার করতে পারেননি। নিজের ভোটটিও দিতে পারবেন না। তবে শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে ১৬ একরের খামারবাড়িতে বসেই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন জনার্দন।
মজার কথা হল, বল্লারীতে জনার্দনের ভাইয়ের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের প্রার্থী, বর্তমান বিধায়ক অনিল লাদ-ও খনি মাফিয়া বলেই পরিচিত। জেডি (এস)-এর মহম্মদ হোট্টুরেরও খনির ব্যবসা। কংগ্রেসের এক নেতার মন্তব্য, ‘‘উপায় কী? লোহাই লোহাকে কাটে।’’ বিজেপি নেতাদের পাল্টা প্রশ্ন, সবাই খনি মাফিয়া হলে কলঙ্কের ভাগ শুধু রেড্ডিদেরই কেন?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy