Advertisement
২০ মে ২০২৪
জয়ার জামিন নামঞ্জুর

জ্বলে উঠেই নিভল আতসবাজি, বিক্ষোভ

সরকারি আইনজীবী জামিনের বিরোধিতা করেননি। বেঙ্গালুরুর আদালত চত্বর থেকে মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে খবরটা। খবর কানে যেতেই জেল, আদালত এমনকী চেন্নাইয়ে নেত্রীর বাড়ির বাইরে জড়ো হওয়া সমর্থকদের মধ্যে শুরু হয়েছিল উচ্ছ্বাস। তুমুল হইচই, খুশির মেজাজে পরস্পরকে আলিঙ্গন। সকলে ধরেই নিয়েছিলেন, সরকার যখন জামিনের বিরোধিতা করছে না, তা হলে আম্মার মুক্তিতে বাধা নেই।

জয়ললিতার জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর সমর্থকদের কান্না। মঙ্গলবার কোয়ম্বত্তূরে। ছবি: পিটিআই।

জয়ললিতার জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর সমর্থকদের কান্না। মঙ্গলবার কোয়ম্বত্তূরে। ছবি: পিটিআই।

সংবাদ সংস্থা
চেন্নাই ও বেঙ্গালুরু শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৪৮
Share: Save:

সরকারি আইনজীবী জামিনের বিরোধিতা করেননি। বেঙ্গালুরুর আদালত চত্বর থেকে মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে খবরটা। খবর কানে যেতেই জেল, আদালত এমনকী চেন্নাইয়ে নেত্রীর বাড়ির বাইরে জড়ো হওয়া সমর্থকদের মধ্যে শুরু হয়েছিল উচ্ছ্বাস। তুমুল হইচই, খুশির মেজাজে পরস্পরকে আলিঙ্গন। সকলে ধরেই নিয়েছিলেন, সরকার যখন জামিনের বিরোধিতা করছে না, তা হলে আম্মার মুক্তিতে বাধা নেই। এমনকী কোনও কোনও সংবাদমাধ্যমে এমন খবরও প্রচার হয় যে জয়ললিতা জামিন পেয়েও গিয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে পুড়তে শুরু করে আতসবাজি। সমর্থকদের ভিতরে তখন বাঁধভাঙা আবেগ।

কিন্তু উৎসবের রেশ কাটতে সময় লাগেনি। খানিক পরেই এল অন্য খবর। জয়ললিতার জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে কর্নাটকের আদালত। মুহূর্তে বদলে গেল ছবিটা। গত কয়েক দিনের মতো ফের কান্না, ক্ষোভ আর হতাশায় ডুবলেন এডিএমকে সমর্থকরা। এর পরেও জামিনের আর্জি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবেন জয়া। তবে যত দিন না শীর্ষ আদালতে সিদ্ধান্ত হচ্ছে, ততদিন রেহাই নেই। অর্থাৎ, আপাতত জেলেই থাকছেন তামিলনাড়ুর তিন-তিন বারের মুখ্যমন্ত্রী।

দলনেত্রীর মুক্তির দাবিতে ন’দিন ধরে তাঁর সমর্থকরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, আবেগে ভেসেছেন। শপথ নিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মন্ত্রীরাও। আজ আদালতে জামিনের আবেদনের শুনানি হবে,সে জন্য তামিলনাড়ু জুড়ে নেত্রীরমুক্তি কামনায় যজ্ঞ শুরু হয়েছিল। কারখানায় শ্রমিকরা পর্যন্ত উপবাস করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনও কিছুই কাজে আসেনি।

সকালেই দক্ষিণ চেন্নাইয়ে পোস্টার পড়েছিল, জয়া জামিন না পেলে কর্নাটকের মানুষদের বন্দি করা হবে। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যেতে পারে, এই আশঙ্কায় শেষ পর্যন্ত মাঠে নামে পুলিশ। খুলে ফেলা হয় উস্কানিমূলক পোস্টার। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। আদালতের রায়ের প্রতিবাদে তুমুল বিক্ষোভ আটকানো যায়নি। জামিন খারিজের ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই তামিলনাড়ুর অন্তত ছ’টি জায়গায় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভ হয় চেন্নাইয়ের একটি হোটেলেও। জানা গিয়েছে, এই হোটেলের মালিক কর্নাটকের বাসিন্দা। আজ কর্নাটকের সরকারি পরিবহনের বাস ও অন্যান্য সরকারি গাড়ি লক্ষ করে পাথর ছোড়েন উত্তেজিত সমর্থকরা। পরিস্থিতি সামলাতে পথে নামেন জয়ার ছায়া মুখ্যমন্ত্রী পনিরসেলভাম। মানুষের কাছে তাঁর আবেদন, “মানুষের কোনও রকম অসুবিধা হোক, বিপ্লবী আম্মা তা চান না। দোকানপাট বন্ধ রাখা বা কোনও রকম বন্ধের প্রয়োজন নেই।”

তবু দিনভর কর্নাটক ও তামিলনাড়ু-- দুই রাজ্যেই ছিল টানটান উত্তেজনা। নেত্রীর মুক্তি কামনায় জায়গায় জায়গায় ভিড় করেছিলেন জয়ার সমর্থকরা। কর্নাটক হাইকোর্টে জয়াকে রেহাই দিতে কম চেষ্টা করেননি তাঁর আইনজীবী রাম জেঠমলানী। এর আগে পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে দোষী সাব্যস্ত লালুপ্রসাদ যাদবেরও আইনজীবী ছিলেন তিনি। আদালতে জেঠমলানীর যুক্তি ছিল, দুর্নীতির মামলায় লালুর জামিনে হাইকোর্ট আপত্তি করলেও সাড়া দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তাই জয়ললিতার ক্ষেত্রেজামিন দিতে অসুবিধা কোথায়? আর জামিন পেলেই তো কোথাও পালিয়ে যাচ্ছেন না জয়ললিতা দাবি করেন তিনি। সরকারি আইনজীবী ভবানী সিংহও জানিয়ে দেন, জয়ললিতাকে জামিন দেওয়া নিয়ে সরকারের কোনও আপত্তি নেই। আদালত যদিও সে সব কথা মেনে নেয়নি। বরং বিচারক এ ভি চন্দ্রশেখর জয়ললিতার দুর্নীতিকে ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’-এর সঙ্গে তুলনা করে মন্তব্য করেছেন, “এ ক্ষেত্রে জামিন দেওয়ার কোনও ভিত্তিই নেই।” আর লালুপ্রসাদ নিজেও দশ মাস জেলে থাকার পরেই জামিন পেয়েছিলেন বলে যুক্তি দিয়েছেন তিনি।

হাইকোর্টের রায় বিপক্ষে যেতেই জয়ার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, সম্ভবত কাল বা পরশু সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE