Advertisement
E-Paper

পপলারের দাপটে সঙ্কটে উইলো ব্যাট

উপত্যকার ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, কাশ্মীরের ব্যাট শিল্পে এই খরাটা গত কয়েক বছর ধরেই শুরু হয়েছে। উচ্চ মানের কাশ্মীরি উইলো ব্যাটের চাহিদা আন্তর্জাতিক বাজারে যে নেই, তা নয়।

সাবির ইবন ইউসুফ

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:২৪
তৈরি হচ্ছে উইলো কাঠের ব্যাট। নিজস্ব চিত্র

তৈরি হচ্ছে উইলো কাঠের ব্যাট। নিজস্ব চিত্র

এক সময়ে বিশ্বের তাবড় খেলোয়াড়দের হাতে হাতে ঘুরেছে উইলো কাঠের কাশ্মীরি ব্যাট। অনন্তনাগের সানগাঁওয়ের ঘরে ঘরে ছিল এই ব্যাট তৈরির ব্যবসা। সেই ব্যবসায়ীরাই এখন বলছেন, উইলোয় তৈরি লম্বা, ছিপছিপে, নিটোল ব্যাটের ঐতিহ্যে এখন ভাটার টান। কারণ, এখন সেখানে ঢুকে গিয়েছে রাশিয়ান পপলার। যা দিয়ে ব্যাট তৈরি হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু উইলোর খোলতাই রূপ তার নেই। নেই সেই মানও। তবে দামে কম আর জোগানে বেশি হওয়ায় সহজেই উইলোর বাজারে দাঁত বসাচ্ছে পপলার ব্যাট।

উপত্যকার ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, কাশ্মীরের ব্যাট শিল্পে এই খরাটা গত কয়েক বছর ধরেই শুরু হয়েছে। উচ্চ মানের কাশ্মীরি উইলো ব্যাটের চাহিদা আন্তর্জাতিক বাজারে যে নেই, তা নয়। কিন্তু ইংলিশ উইলো ব্যাট ভাগ বসাচ্ছে এর কাটতিতে। যা দেশের অন্য জায়গাতেও তৈরি হচ্ছে। তার ওপর পপলার তো রয়েছেই। ডিসেন্ট স্পোর্টস ইউনিটের মালিক মুস্তাক আহমেদ দারের কথায়, ‘‘একটি উইলো গাছ পরিণত অবস্থায় পৌঁছতে ১৫ বছরের বেশি সময় লাগে। সেখানো পপলার পাঁচ থেকে সাত বছরের মধ্যে বড় হয়ে যায়। ফলে লাভের কথা ভেবে অনেক চাষি এখন পপলার লাগাচ্ছেন। কাশ্মীরের সবচেয়ে পুরনো ব্যাট তৈরির কারখানাগুলি অনন্তনাগের সানগাওয়ে। সেই রকমই এক কারখানার মলিক আব্দুল রশিদ দার। ১৯৭১ সাল থেকে এই ব্যবসায় রয়েছেন তিনি। তিনিও জানাচ্ছেন, এখন উইলো কাঠের জোগান কমে যাওয়ায় এবং পপলারের দাম অনেক কম হওয়ায় বাজারের চাহিদা বদলে যাচ্ছে। এ ভাবে কাঁচামালের জোগান কমতে থাকলে উইলো কাঠের ঐতিহ্যশালী কাশ্মীরি ব্যাটের যে ব্যবসা তা টিকবে না। এই ব্যবসায় প্রায় ৫০ বছর রয়েছেন তাঁরা। দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগে বিখ্যাত দার স্পোর্টস তাঁদেরই। রশিদের বক্তব্য, উইলো না পেয়ে পপলার দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে ঠিকই কিন্তু ব্যাটের মান পড়ে যাচ্ছে তাতে। তিনি বলেন, ‘‘এই ব্যবসা শুরু হয়েছিল আমার বাবা আব্দুল সত্তার দারের হাতে। তখন ১৯৪৭ সাল। সেই সময়ে ডজন ডজন কাঠের গুঁড়ি আসত। প্রতি দিন কম-বেশি ৩০০টি করে ব্যাট তৈরি হত। যা ৩০ জন কর্মচারীর রুটি-রুজি জোগাত। এখন তো অত কাঠই পাওয়া যায় না।’’ ২০১৮ সালে নয়া দিল্লিতে বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন রশিদ। সেখানে কাশ্মীরি ব্যাট শিল্পের সঙ্কটের কথা জানিয়েছেন তিনি। ব্যাট প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির প্রেসিডেন্ট মহম্মদ আমিন দার বলছেন, ‘‘কাশ্মীরে প্রায় ৩৫০ টি ব্যাট প্রস্তুতকারক কেন্দ্র (ইউনিট) রয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে বছরে গড়ে ১৫ হাজার ব্যাট তৈরি হয়। হাতে তৈরি যন্ত্রাংশ (হ্যান্ডমেড টুল) হিসেবে নথিভুক্ত করা হয় সেগুলিকে। ফলে পুরনো আইন অনুযায়ী, আমরা কারখানায় আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করতে পারি না।’’

কাশ্মীরের ব্যাট শিল্পের সার্বিক অবনতির জন্য সরকারের উদাসীনতাকেও দুষেছেন কিছু কিছু ব্যবসায়ী। খান ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টস নামে একটি সংস্থার মালিক ফিরদৌস আহমেদ খান যেমন বলেছেন, ‘‘সরকার কখনওই এই শিল্পের প্রচারের জন্য কিছু করেনি। প্রয়োজনীয় উন্নত পরিকাঠামোটুকুও দেয়নি।’’ একাংশের অবশ্য দাবি, এই অভিযোগ পুরোপুরি ঠিক নয়। দু’টি সরকারি স্পোর্টস কমপ্লেক্স কিছু যন্ত্রপাতি দিয়ে বেশ কয়েকটি ইউনিটকে জায়গা করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেগুলি দখল করে নেয় নিরাপত্তা বাহিনী। আমিন দার বলেছেন, ‘‘১৯৯০ সালের গোড়ায় বিজবেহরা কমপ্লেক্সে ঘাঁটি গাড়ে নিরাপত্তা বাহিনী। ফলে প্রায় ৪৩টি ব্যাট প্রস্তুতকারক ইউনিটকে সরে যেতে হয়। ২০১৮ সালে সিআরপি এই কমপ্লেক্সটি ফাঁকা করে দিয়েছে।

কিন্তু এখন আর যন্ত্রপাতিগুলি কাজ করে না।’’

Kashmiri Willow Russian Poplar Bat Cricket
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy