গত মাসের শেষে পহেলগামের অদূরে বৈসরন উপত্যকায় সন্ত্রাসবাদী হামলায় নিরীহ পর্যটকদের মৃত্যুর পরে কেটে গিয়েছে বেশ কয়েক সপ্তাহ। সে দিন বৈসরনে পর্যটকদের উপরে গুলি চালানো জঙ্গিদের মধ্যে এক জনেরও খোঁজ মেলেনি এখনও। তবে এই হামলার ষড়যন্ত্রকারীদের খোঁজ পেতে জম্মু-কাশ্মীর জুড়ে ব্যাপক তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনী। উপত্যকায় এখনও পর্যন্ত অন্তত ২৮০০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জন সুরক্ষা আইনের আওতায় আটক করা হয়েছে কমপক্ষে ৯০ জনকে। তবে সেই সঙ্গেই অভিযোগ উঠেছে, তদন্তের নামে নিত্যদিন হেনস্থা করা হচ্ছে কাশ্মীরের সাধারণ মানুষকে। বিষয়টি নিয়ে আজ সাংবাদিকদের সামনে মুখ খুলেছেন জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। তাঁর বক্তব্য, কাশ্মীরের প্রতিটি মানুষ চান যে, অবিলম্বে পহেলগামের হামলাকারীরা ধরা পড়ুক। কিন্তু সেই সঙ্গেই তদন্ত ও তল্লাশির নামে উপত্যকার সাধারণ মানুষকে হেনস্থা বন্ধের আর্জি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
ওমর আজ বলেছেন, ‘‘পহেলগামে হামলার পিছনে যারা রয়েছে, তাদের দ্রুত শাস্তি দেওয়া হোক। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় কোনও নিরীহ সাধারণ মানুষকে যেন হেনস্থা না করা হয়। এটা যেন মনে না করা হয় যে, কাশ্মীরের প্রতিটি মানুষই এই হামলার সঙ্গে জড়িত। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও আমরা এ নিয়ে কথা বলেছি।’’
গত রবিবার কুলগামে নিরাপত্তাবাহিনীর সামনে নদীতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে স্থানীয় এক কাশ্মীরি যুবক, ইমতিয়াজ় আহমেদ মাগরের। ২৩ বছরের ওই যুবক ষড়যন্ত্রকারীদের সাহায্য করেছিল বলে দাবি তদন্তকারীদের। নিরাপত্তাবাহিনী জানিয়েছিল, জঙ্গিদের ঘাঁটি চেনাতে গিয়ে তাদের সামনেই পাহাড়ি নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়ে যেতে গিয়ে ডুবে যান ওই যুবক। তবে তাঁর পরিবার সেই অভিযোগ উড়িয়ে জানিয়েছে, ইমতিয়াজ় সাধারণ এক শ্রমিক ছিলেন। কোনও জঙ্গির সঙ্গে তাঁর কোনও দিন কোনও সম্পর্ক ছিল না। ইমতিয়াজ়ের মৃত্যু নিয়েও উদ্বেগ জানিয়েছেন ওমর। তাঁর কথায়, ‘‘কুলগামে যা হয়েছে, তা দুর্ভাগ্যজনক, আর কখনও এই ধরনের ঘটনা হওয়া উচিত নয়। এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনাও নয়। এই ধরনের নানা খবর উপত্যকার নানা প্রান্ত থেকে আসছে। এই প্রথম পহেলগামের ঘটনা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এখানকার সাধারণ মানুষ এখন যে ভাবে সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতা করছেন, তার স্বীকৃতি দেওয়া উচিত, সেটাকে দমন করা উচিত নয়।’’
উপত্যকায় এখন যে ভাবে জন সুরক্ষা আইনের প্রয়োগে ধরপাকড় চলছে, তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি-ও। ওমরের মতো তিনিও সাধারণ কাশ্মীরি নাগরিকদের হেনস্থার বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত বলে জানিয়েছেন। এ নিয়ে জম্মু-কাশ্মীরের উপরাজ্যপাল মনোজ সিন্হাকে চিঠিও লিখেছেন পিডিপি নেত্রী। মেহবুবা বলেছেন, ‘‘কোনও গণতান্ত্রিক এবং দায়িত্বশীল সমাজে এ ভাবে নিজেদের লোকদেরই হেনস্থা করা হয় না। আমি বরাবর এটাই মেনে এসেছি যে, কাশ্মীরের মানুষ সব সময়ই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এসেছেন।’’
এই প্রসঙ্গেই উঠে এসেছে নজ়াকত আলির কথা। বৈসরনে হামলার দিন ১১ জন পর্যটকের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন ওই কাশ্মীরি যুবক। গরমের মরসুমে ছত্তীসগঢ়ের ছিরিমিরি শহরে শাল বিক্রি করতে যান ওই যুবক। সেখানকারই ১১ জন পর্যটককে কাশ্মীর ঘোরাতে এনেছিলেন নজ়াকত। জানালেন, ঘটনার দিন ‘মিনি সুইৎজ়ারল্যান্ড’-এ পর্যটক দলটির সঙ্গে থাকা শিশুদের সঙ্গে খেলছিলেন তিনি। প্রথমে গুলির আওয়াজকে তেমন আমল দেননি তিনি। কিন্তু পরে যখন বুঝতে পারেন, হামলা হয়েছে, তখন প্রথমে সকলকে শুয়ে পড়তে বলেন নজ়াকত। এর পরে ওই ১১ জনকে লুকিয়ে ৭ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে পহেলগামের হোটেলে পৌঁছন তিনি। তবে তাঁর কথায়, তিনি যা করেছেন তা মানবিকতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
এ দিকে, শ্রীনগরে এসে পর্যটকদের উপরে হামলার ঘটনার কঠোর নিন্দা করেছেন এমআইএম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। আজ লোকসভার এই সাংসদ বলেছেন, দ্রুত হামলাকারীদের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। কুলগামে নদীতে ভেসে যাওয়া যুবকের মৃত্যুর যথাযথ তদন্তেরও দাবি জানিয়েছেন তিনি।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)