সরকারি আমলাদের 'অন্যায্য' ধর্মঘটে সহায়তা দেওয়া এবং বিল আটকে রাখার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল এবং তার তিন সহকর্মীর উপ-রাজ্যপাল অনিল বৈজলের বাসভবনে ধর্না কর্মসূচি শুধুমাত্র প্রতীকী নয়। এর প্রভাব আরও সুদূরপ্রসারী হতে পারে।
বিষয়টা একটু বিশদে বোঝার চেষ্টা করা যাক। গত তিন মাস ধরে দিল্লি সরকারের অনেকগুলো জনহিতকর প্রকল্প আমলাদের অসহযোগিতার জন্য আটকে রয়েছে। দিল্লি সরকারের স্কুলগুলোতে প্রায় পাঁচশোটি ‘মহল্লা ক্লিনিক’ খোলা, ব্যয়বহুল চিকিৎসা সংক্রান্ত পরীক্ষাগুলোকে সাধারণ মানুষের উপযোগী করার জন্য সরকারি অনুদানের ব্যবস্থা, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়ানো এবং বাড়ি-বাড়ি রেশন পৌঁছে দেওয়া-সহ বেশকিছু পরিষেবা দেওয়ার প্রক্রিয়া সরকার ভালোভাবেই শুরু করছিলো। দুঃখের বিষয় আমলাতন্ত্রের জেদে আজ এই প্রকল্পগুলো বিশ বাঁও জলে। আমরা কিন্তু শুধু সেই সিদ্ধান্তগুলোর কথা বলছি যেগুলো অনেক আলাপ-আলোচনা পরে উপরাজ্যপাল মঞ্জুর করেছিলেন। এছাড়াও প্রায় চোদ্দটি অন্য প্রকল্প এখনও উপ-রাজ্যপালের অনুমোদনের অপেক্ষায়। এদেশে আমলাদের ধর্মঘট অবৈধ। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কার্যত সেই পরিস্থিতিরই সম্মুখীন হয়েছে দিল্লি সরকার। অরবিন্দ কেজরীবাল এবং আপ নেতৃত্ব কিন্তু পুরো বিষয়টিকে একটা জন আন্দোলনের রূপ দেয়ার চেষ্টা করছে। এখন যে আন্দোলন সামাজিক মাধ্যমে সীমাবদ্ধ, তা যদি অদূর ভবিষ্যতে একটি সত্যিকারের আন্দোলনের রূপ নেয়, আমরা কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ আশা করতে পারি।
দিল্লির আপ সরকারের সঙ্গে কেন্দ্রের একটানা দ্বন্দ্ব আমাদের কিছু মৌলিক সাংবিধানিক প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। একটি নির্বাচিত সরকারের কি প্রকল্প তৈরী করার এবং সেই প্রকল্পগুলোকে বাস্তবায়িত করার অধিকার নেই? আমলারা কি শুধুমাত্র কোনও নির্বাচিত সরকারকে হেয় প্রমাণ করার জন্য নিজেদের দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারেন? এর চেয়েও বড়ো প্রশ্ন, দেশে নির্বাচনের মতো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার কী প্রয়োজন, যদি একটি নির্বাচিত সরকারকে অনির্বাচিত, মনোনীত পদাধিকারীর মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয়?