ক্ষমতায় আছে বাম সরকার। তবু জাতীয় সঙ্গীতকে অবমাননার দায়ে লেখকের নামে দেশদ্রোহিতার ধারা লাগিয়েছে পুলিশ! তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে আটক যুবকের বিরুদ্ধে সরাসরি ইউএপিএ! ঘরে-বাইরে তোলপাড়ের মুখে নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হল সিপিএমের পলিটব্যুরো। শাসক দলের সর্বোচ্চ স্তরের বিরূপ মনোভাব বুঝে শেষ পর্যন্ত পিছু হঠতে হল কেরলের পুলিশ-প্রশাসনকেও।
ফেসবুক পোস্টের জেরে আটক লেখকের নামে দেশদ্রোহিতা এবং সামান্য ঘটনায় ইউএপিএ-র প্রয়োগ কমিউনিস্ট সরকারকে মানায় না বলে মঙ্গলবার স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে পলিটব্যুরোর তরফে। তার পরেই লেখক কমল চাভারার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার ধারা প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে রাজ্যের পুলিশ। মাওবাদী যোগসাজশের অভিযোগে আটক যুবক নাদিরের বিরুদ্ধে ইউএপিএ-ও কার্যকর হচ্ছে না। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নও মেনে নিয়েছেন, লঘু পাপে গুরুদণ্ড দেওয়ার দিকে এগোচ্ছিল পুলিশ! কিন্তু শেষমেশ তা হতে দেওয়া হয়নি। রাজ্য পুলিশের ডিজি লোকনাথ বেহরা অবশ্য দাবি করেছেন, নাদিরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছিল মাত্র। তাঁকে ইউএপিএ দেওয়া হয়নি। যদিও কান্নুর জেলা পুলিশ সূত্রে খবর মিলছে, ওই আইনেই নাদিরকে আদালতে অভিযুক্ত করার প্রস্তুতি চলছিল।
মালয়ালম লেখক কমল তাঁর নিজেরই একটি উপন্যাসের অংশ উদ্ধৃত করে ফেসবুকে পোস্ট করার পরেই বিতর্কের সূত্রপাত। সিনেমা হলে জাতীয় সঙ্গীত বাজানোর সুপ্রিম কোর্টের ফরমানকে ব্যঙ্গ করে তিনি আসলে জাতীয় সঙ্গীতের অমর্যাদা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ দায়ের করে বিজেপি-র যুব মোর্চা। তার জেরে পুলিশ সক্রিয় হয়ে তাঁকে আটক করে, আনা হয় দেশদ্রোহিতার অভিযোগ। তাঁর সঙ্গে দেখা করে সহমর্মিতা দেখাতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক হতে হয় নাদিরকেও। যিনি নিজেকে মানবাধিকার কর্মী বলেই দাবি করেছেন। শাসক জোট এলডিএফের নানা শরিক, বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, বিদ্বজ্জন এবং সোশ্যাল মিডিয়ার পাশাপাশি বাম সরকারের পুলিশের এমন আচরণের বিরুদ্ধে সরব হন সিপিএমের প্রবীণ নেতা ভি এস অচ্যুতানন্দনও।
তার পরেই হস্তক্ষেপে বাধ্য হয়েছে পলিটব্যুরো।
পলিটব্যুরোর বর্ষীয়ান সদস্য এস রামচন্দ্রন পিল্লাই এ দিন স্পষ্টই বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং ইউএপিএ ধারার সুপারিশ করেছিল পূর্বতন ইউডিএফ সরকার। কিন্তু কমিউনিস্ট সরকারের সর্তক হয়ে এগোনো উচিত। আমরা তো ইউএপিএ-র বিরুদ্ধে!’’ অতীতে এ রাজ্যে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকারকে যে অভিযোগে বিদ্ধ হতে হয়েছিল, একই বির্তকে জর্জরিত হয়ে এর পরে পত্রপাঠ অবস্থান বদল করেছে বিজয়নের প্রশাসন! কান্নুরে নাদির-সহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মাওবাদী প্রচারপত্র বিলির অভিযোগ এসেছিল গত মার্চ মাসে। যখন ক্ষমতায় ছিল উম্মেন চান্ডির সরকার। পুরনো সেই কবর খোঁড়া রাতারাতি বন্ধ হয়েছে পলিটব্যুরোর চাপে!