তিনি আছেন, না নেই?
সন্ধেবেলা কলকাতা মেট্রো রেল বলছিল, তিনি নেই। তার পর হইচই শুরু হতেই রাতের দিকে সুর পাল্টে তারা বলতে থাকল, তিনি আছেন। সুস্থ ভাবেই আছেন। প্রতিদিন ট্রেন চালাতেই যাঁদের নাভিশ্বাস ওঠে, সেই মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ এ বার কর্ম-‘সংস্কৃতির’ এক নতুন নজির গড়লেন!
যাঁকে নিয়ে এই বিভ্রাট, তিনি সরোদবাদক উস্তাদ আমজাদ আলি খান। কলকাতা মেট্রোর ওয়েবসাইটে যাঁর ছবির তলায় আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত লেখা ছিল, ‘‘প্রয়াত সরোদবাদক আমজাদ আলি খান ২ অগস্ট, ১৯৮৭ সালে কলকাতা মেট্রোতে সফর করেছিলেন।’’ তিন দিন বাদেই যিনি দু’ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে হিউস্টনে অনুষ্ঠান করতে চলেছেন, তাঁর নামের আগে ‘প্রয়াত’ শব্দটি দেখে হুলুস্থূল পড়ে যায় সব মহলে।
কে, কেন ওয়েবসাইটে উস্তাদের ছবির ক্যাপশনে ‘প্রয়াত’ শব্দটি জুড়ে দিয়েছে, তা বলতে পারলেন না মেট্রো রেলের মুখপাত্র রবি মহাপাত্র। আমতা আমতা করে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘কী ভাবে ভুল হয়ে গিয়েছে, আমরা জানি না। চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব ক্যাপশনটি ঠিক করে দেওয়ার।’’ ডিসপ্লে বোর্ডের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ট্রেন সময়ে না এলেও এ যাত্রায় অবশ্য কথা রেখেছে মেট্রো। আনন্দবাজার পত্রিকার তদ্বিরের পরে রাতের মধ্যেই ‘প্রয়াত’ শব্দটি সরিয়ে ‘শ্রী’ জোড়া হয় শিল্পীর নামের আগে। পরিবর্তন না হয় হল, কিন্তু মেট্রো রেল যে কাণ্ড ঘটিয়েছে, তাতে রীতিমতো ব্যথিত খান পরিবার। তবে যোগাযোগ করা হলে পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
সকালের ক্যাপশন পাল্টে গেল রাতে। কলকাতা মেট্রোর ওয়েবসাইটে।
কিন্তু গোটা ঘটনায় যে মেট্রো রেলের মুখ পুড়েছে, তা ভালই বুঝেছেন কর্তারা। এই জোনটির দায়িত্বে রয়েছেন শ্রী রাধে শ্যাম। তিনি দায়িত্ব নিয়েই মেট্রোর ওয়েবসাইটটি ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করেন। ওয়েবসাইটে ফটো গ্যালারি খুললেই রাধে শ্যামের কমর্কাণ্ডের নানা ফিরিস্তি চোখে পড়তে বাধ্য। একই সঙ্গে ঠিক হয়, ১৯৭২ সালে ইন্দিরা গাঁধীর হাতে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন থেকে কী ভাবে প্রথম পর্যায়ে মেট্রোর কাজ এগিয়েছে, সেই ইতিহাসকেও ছবির মাধ্যমে তুলে ধরা হবে। সেই গ্যালারিতে স্থান পেয়েছেন বিখ্যাত ব্যক্তিরা, যাঁরা বিভিন্ন সময়ে মেট্রোয় সফর করেছিলেন। তালিকায় রয়েছেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জৈল সিংহ, মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। রয়েছেন সত্যজিৎ রায় ও উস্তাদ আমজাদ আলি খানও। আর উস্তাদের এই ছবির ক্যাপশনেই গন্ডগোল বাঁধিয়ে বসেছিলেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ।
আশির দশকের শেষে রাজীব গাঁধীর সরকারের নির্বাচনী প্রচারের অঙ্গ হিসেবে গোটা দেশের বিভিন্ন রাজ্যের বৈশিষ্ট্য নিয়ে বানানো হয়েছিল ‘মিলে সুর মেরা তুমহারা।’ সেখানে পশ্চিমবঙ্গের গর্ব হিসেবে স্থান পেয়েছিল কলকাতা মেট্রো। আজ একটি ছবির ক্যাপশনই স্পষ্ট করে দিয়েছে, সেই গর্বের মেট্রোর বর্তমান দৈন্যদশাকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy