Advertisement
E-Paper

রানওয়ে ছোঁয়নি, ৪ সেকেন্ডেই ভেঙে পড়ল বিমানটা, বলছেন প্রত্যক্ষদর্শী সিআইএসএফ জওয়ান

কিন্তু সবাইকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোর পর যখন পরিস্থিতি শান্ত, তখন মঙ্গল ফিরে দেখেন, তাঁর বাইকটাই উধাও! 

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২০ ১৭:৫৭
পড়ে রয়েছে দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানের ধ্বংসাবশেষ। -ফাইল চিত্র

পড়ে রয়েছে দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানের ধ্বংসাবশেষ। -ফাইল চিত্র

কোঝিকোড়ে বিমান দুর্ঘটনার ঠিক আগের মুহূর্তে কী ঘটেছিল? নামার সময় কি চাকা পিছলে গিয়েছিল? নাকি রানওয়ে ছুঁতেই পারেননি পাইলট? এই সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন ৭ অগস্ট রাতে বিমানবন্দরে দুর্ঘটনার ঠিক কাছেই ডিউটিতে থাকা এক সিআইএসএফ জওয়ান। মাত্র চার সেকেন্ডের মধ্যেই কী ভাবে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল বিমানটি, তার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, বিমানের চাকা রানওয়ের মাটিই ছোঁয়নি সেদিন। সরাসরি পাহাড়ের কোলে গিয়ে আছড়ে পড়ে এয়ার ইন্ডিয়ার এক্সপ্রেস বিমানটি।

গত ৭ অগস্ট সন্ধে সাতটা ৪০ মিনিট নাগাদ দুবাই থেকে বন্দে ভারত প্রকল্পে যাত্রীদের নিয়ে কোঝিকোড় বিমানবন্দরে নামার কথা ছিল এয়ার ইন্ডিয়ার এক্সপ্রেস এ১-আইএক্স ১৩৪৪ বিমানের। কিন্তু নামার সময়ই ঘটে যায় বিপর্যয়। রানওয়ের বাইরে পাহাড়ের গায়ে গিয়ে ভেঙে দু’টুকরো হয়ে যায় বিমানটি। ঘটনায় বিমানের দুই পাইলট-সহ ১৮ জনের মৄত্যু হয়।

দুর্ঘটনার সময় বিমানবন্দরের পেরিমিটার পেট্রোলিং (পিপিএল) ডিউটিতে ছিলেন উত্তরপ্রদেশের বদায়ুঁর বাসিন্দা সিআইএসএফ-এর এএসআই মঙ্গল সিংহ। ছ’বছরের চাকরি জীবনে গত পাঁচ বছর ধরে এই কোঝিকোড় বিমানবন্দরেই চাকরি করছেন। তিনি জানিয়েছেন, ওই রাতে দুর্ঘটনার ঠিক আগেই বিমানবন্দরের পাঁচিলের ধার বরাবর টহলদারি করতে বেরোন। তিনি যখন আট নম্বর গেটের কাছে ছিলেন, তখনই ওই গেটের বাইরের দিকে কিছুটা দূরে দুর্ঘটনা ঘটেছিল। আর সেই ভয়ঙ্কর দৄশ্য এক্কেবারে কাছে থেকে দেখেছেন মঙ্গল।

তিনি বলেছেন, ‘‘সে দিন ছিল আমার ‘বি’ শিফট। শেষ হওয়ার কথা ছিল রাত ৯টায়। একনাগাড়ে প্রচণ্ড বৄষ্টি হচ্ছিল। ডিউটি শেষের আগে বাইক নিয়ে আমি পেট্রোলিংয়ে যাই। প্রায় ন’কিলোমিটার চৌহদ্দি প্রাচীরের কোথাও কোনও সমস্যা আছে কি না, বা কেউ ভিতরে ঢুকেছে কি না, সেটা দেখার জন্যই এই পেট্রোলিং করতে হয়। সেই সময়ই আট নম্বর গেটের কাছে যখন ছিলাম, তখন আমার চোখের সামনেই ঘটনাটা ঘটল।’’

আরও পড়ুন: করোনা যুদ্ধে বাজিমাত রাশিয়ার? বিশ্বে প্রথম টিকা তৈরির দাবি পুতিনের

ঠিক কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটল? মঙ্গল বলেন, ‘‘দেখলাম পাহাড়ের কিছুটা উপরের দিকে উঠে গেল। তার পর চোখের পলকে রাস্তার উপর ভেঙে পড়ল বিশাল বিমান। ৮ নম্বর গেট থেকে ওই জায়গাটা মাত্র ১৫ ফুট দূরে। মাত্র চার সেকেন্ডের মধ্যে পুরো দুর্ঘটনাটা ঘটে গেল।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘গত পাঁচ বছর ধরে বিমান ওঠানামা দেখছি। কিন্তু এই বিমানটি পিছলে যায়নি। যদি পিছলে যেত, তা হলে বিমানের নীচের অংশ মাঝপথেই ভেঙেচুরে যেত। কিন্তু আপনি পাহাড়ের ঢালে ঘটনাস্থলে গেলে দেখবেন, সেটা হয়নি।’’ অর্থাৎ বিমান যে রানওয়েতে নামেইনি, সেটা কার্যত জোর দিয়ে বলছেন মঙ্গল।

তবে দুর্ঘটনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে উদ্ধার ও অন্যান্য কাজে কোনও খামতি ছিল না, বরং স্থানীয়রা এবং বিমানবন্দর কর্তৄপক্ষ অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে উদ্ধারে হাত লাগিয়েছিলেন, দাবি করছেন ওই সিআইএসএফ জওয়ান। তিনি বলেন, দু’-চার মিনিটের মধ্যে কয়েক জন এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে চলে আসেন। পরের মুহূর্তেই আরও ২০-২৫ জন চলে আসেন। তার কয়েক মিনিটে পরে আবার বিমানবন্দর থেকে চলে আসে আর্থ মুভার। আমাদের কুইক রেসপন্স টিম, ব্যাচেলর পার্টি, বিমানবন্দরের দমকল ও অন্যান্য নিরাপত্তাকর্মীরাও কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসেন ঘটনাস্থলে।’’

আরও পড়ুন: বাড়াতেই হবে টেস্ট, কনট্যাক্ট ট্রেসিং, মমতাদের বললেন মোদী

দুর্ঘটনার জেরে দু’টুকরো হয়ে যাওয়া বিমানটির সামনের দিকেই বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ডানার গোড়া থেকে আড়াআড়ি ভেঙে গিয়েছিল বিমানটা, সেটা সবাই দেখেছেন। মঙ্গল বলেন, তিন চার জন গ্রামবাসী ওই ডানার অংশের ভিতরে ঢুকে পড়ে। তখনও বিমানের ভিতরের আলোগুলো জ্বলছিল। ওই যুবকরা ভিতরে আটকে পড়া যাত্রীদের বের করার চেষ্টা করছিলেন। তাঁদের সঙ্গে হাত লাগিয়েছিলেন চোট না পাওয়া যাত্রীরাও। মঙ্গল নিজেও ভিতরে ঢুকেছিলেন। তিনি বলেন, চার পাঁচ জন গ্রামবাসীর সঙ্গে আমিও ভিতরে ঢুকেছিলাম। স্থানীয়দের অনেকে এমার্জেন্সি গেটের কাছে অপেক্ষা করছিলেন। চার দিকে হাহাকার আর আর্ত চিৎকার। বাচ্চারা কাঁদছিল। সিটের ভিতরের অংশে যাঁরা আটকে পড়েছিলেন, কাটার দিয়ে কেটে তাঁদের উদ্ধার করেছিলাম।’’

কিন্তু যে ভাবে দুর্ঘটনা ঘটেছিল, তাতে যে কোনও সময় বিস্ফোরণ হতে পারত বা আগুন লেগে যেতে পারত। আবার যাত্রীদের কেউ কেউ কোভিড পজিটিভও থাকতে পারেন। কিন্তু মঙ্গল বলছেন, উদ্ধারের সময় সে সব মাথায় ছিল না। অন্যরাও নিশ্চয়ই ভাবেননি সে সব। বিমানবন্দরে ডিউটি করা সিআইএসএফ জওয়ান এটাও জানেন, ‘‘দুর্ঘটনার পর যে কোনও বিমানই তাজা বোমার মতো। অতিদাহ্য জ্বালানী চুইয়ে পড়তে পারত। একটা স্ফুলিঙ্গও ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটাতে পারত। আমরা সবাই মারাও যেতে পারতাম।’’ কিন্তু সে সব উপেক্ষা করেই সবাইকে উদ্ধার করেছেন মঙ্গল সিংহরা।

কিন্তু সবাইকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোর পর যখন পরিস্থিতি শান্ত, তখন মঙ্গল ফিরে দেখেন, তাঁর বাইকটাই উধাও!

Kozhikode Kojhikode Plane Crash CISF Eye witness
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy