শনিবার সকাল থেকেই ভিড় উপচে পড়েছে কুম্ভনগরীতে। ছবি: এএফপি।
বাগুইহাটি, কেষ্টপুর থেকে আসা মাঝবয়সী পুষ্পা মণ্ডল ও তাঁর সঙ্গিনীরা ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘে ঢুকতে ঢুকতে হাঁফাচ্ছিলেন, ‘‘বাব্বা, এত দূর! পুলিশও তো কিছু বলতে পারছে না।’’
৩২০০ হেক্টর জায়গা নিয়ে এই অর্ধকুম্ভ আসলে বিধাননগরের মানচিত্রের মতো। সেক্টর না জানা থাকলে ঘুরপাক খেতে হয়। গত পূর্ণকুম্ভে ছিল ১৭টি সেক্টর। এ বার ২০টা। কোনও বার যা হয় না, এ বার বৃহতের নেশায় সেটিই হয়েছে। সঙ্গম থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে ঝুসি, আরাইল এলাকাও এ বার কুম্ভনগরীতে।
আগামী সোমবার শাহি স্নানে জলপুলিশকে সাহায্য করার জন্য এ বারও সঙ্ঘের ১০০ জন লাইফসেভার সাঁতারু, ৩০০ স্বেচ্ছাসেবক হাজির। দফায় দফায় পাঁচ হাজার যাত্রীর থাকার বন্দোবস্ত। কিন্তু এ বার তাঁদের ঠেলে দেওয়া হয়েছে গঙ্গার অন্য পারে, পাঁচ নম্বর সেক্টরে। সেই অক্টোবর থেকে অনুরোধ করেও লাভ হয়নি। ‘‘১৯৬৬ থেকে কুম্ভে আসছি, এমনটা এই প্রথম,’’ বলছিলেন সঙ্ঘের সভাপতি বিশ্মাত্মানন্দ।
২০টা সেক্টর, গঙ্গা পারাপারের জন্য ২২টা পন্টুন ব্রিজ। খাতায়-কলমে চমৎকার, কিন্তু শনিবার সকাল থেকেই ভিড় উপচে পড়ছে। সরু পন্টুন ব্রিজগুলি সব একমুখী গাড়ি চলাচলের জন্য। চার চাকা থেকে অটো, টোটো, সাইকেল রিকশ— সব এক ঘণ্টা ধরে ন যযৌ ন তস্থৌ। কারণ, গাড়ি এবং মানুষের মিছিল সব দিক থেকে। আগে প্রয়াগঘাট স্টেশনের পাশে, দারাগঞ্জ ব্রিজকে কুম্ভনগরীর সীমা ধরা হত, এই অর্ধকুম্ভ সেই সীমা ভেঙে গিয়েছে। ব্রিজের ও পাশেও চলমান কুম্ভনগরী।
দারাগঞ্জেই মহানির্বাণী আখড়ার স্থায়ী কেন্দ্র। এই আখড়ার অনুরোধেই একদা ইতিহাসবিদ যদুনাথ সরকার আখড়াগুলির ইতিহাস লিখেছিলেন। সেই বই জানিয়েছিল, শ্রীরামকৃষ্ণের গুরু তোতাপুরীও মহানির্বাণী আখড়ার। এ বার, একান্ত আলোচনায় সেই সাধুরাও অনেকে বিরক্ত। তাঁদের এবং সব আখড়াকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে ব্রিজের ও পারে, ১৪ নম্বর সেক্টরে। গত পূর্ণকুম্ভেও দেখেছি, আশ্রম এবং আখড়া দু’নম্বর সেক্টরে, কালী সড়কে পাশাপাশি। সেই কালী সড়কে শুধুই সিআরপিএফ, আয়কর দফতর ইত্যাদির তাঁবু। দিব্য কুম্ভ-টুম্ভ নয়, এটি একেবারেই সরকারি কুম্ভ।
তবে এই কুম্ভকে বাঁচিয়ে রেখেছেন পুষ্পাদেবীর মতো অজস্র মহিলা। মাইকে সারাক্ষণ ঘোষণা, ‘সাথী, যেখানে যাবেন, মানচিত্র দেখে সেক্টর এবং পুল নম্বর জেনে নিন। পুলিশ আপনার সাহায্যে রয়েছে।’ গোরক্ষপুর থেকে আসা কমলেশ সিংহ ও তাঁর সঙ্গী পাঁচ মহিলা থাকার জায়গার সেক্টর না জেনে অনেক ক্ষণ ঘুরপাক খেলেন।
তবু এই মহিলারা দল বেঁধে কুম্ভে আসেন। মাথায় বোঁচকা নিয়ে, মুখ অবধি ঘোমটা টেনে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারততত্ত্ববিদ ডায়না এল একের মতে, মন্দিরে জাত-পাত, নারী-পুরুষ অনেক বিধিনিষেধ থাকে, কুম্ভস্নানে সেটি অনুপস্থিত। ফলে এই ধর্মক্ষেত্রেও মহিলাদের মুক্তির অনুভব হয়।
হিন্দুত্ববাদীদের নজরে অবশ্য এ সব আসে না। নইলে কুম্ভে বসে মোহন ভাগবত কি আর বলতে পারতেন, শবরীমালা আমাদের ঐতিহ্য! অযোধ্যা ও শবরীমালা দুই পরম্পরাই বজায় রাখতে হবে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy