মাত্র সাত বছরেই বাবা রাজু বনজারাকে হারিয়েছিল রাজস্থানের কোটা জেলার ১৬ বছরের কিশোর সূর্য। বোন তখন মাত্র বছর দুয়েকের। তার পর থেকে মায়ের কাছেই থাকত তারা। আয়ার কাজ করে সন্তানদের বড় করে তুলছিলেন তাদের মা। কিন্তু, ২০১৩-য় মা মারা যান। অভিযোগ, মাকে খুন করে তাঁরই ‘ঘনিষ্ঠ’ এক ব্যক্তি। সে ঘটনার তদন্ত এখনও চলছে। মায়ের মৃত্যুর পর সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত হোমেই ঠাঁই হয় দুই ভাইবোনের। হোমের ২৭০ জন আবাসিকদের সঙ্গেই বেড়ে উঠছিল তারা। এক রুটিন প্রশ্নোত্তর পর্বে হোমের কর্তৃপক্ষ জানতে পারেন, ওই দুই কিশোর-কিশোরীর দু’টি বাড়ি রয়েছে। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে প্রথমে কোটার আর কে পুরম এলাকায় একটি বাড়িতে যান তাঁরা। সঙ্গে ছিল ওই কিশোর-কিশোরী। প্রতিবেশীরা জানান, তাদের মায়ের মৃত্যুর পর সে বাড়ির প্রায় সব জিনিসপত্র ফেলে দেওয়া হয়েছে। তবে ওই কিশোরের দাবি, আসলে প্রতিবেশীরাই তাদের সব জিনিসপত্র নিয়ে নিয়েছে। কিশোরটি জানিয়েছে, আশপাশের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে তাদের টেলিভিশন ও বাসনপত্র।
আরও পড়ুন
শাশুড়ি-বৌমাদের ছেড়ে এক নম্বরে দূরদর্শনের এই সেক্স এডুকেশন শো
এর পর পুলিশকে নিয়ে তারা যায় কোটা থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে সরওয়াড়াতে। মায়ের দু’কামরার বাড়িতে। গত ১১ মার্চ সেখান থেকে উদ্ধার বাসনকোসন-কুলার-সহ ঘরের নানা জিনিস। সঙ্গে রয়েছে বেশ কিছু সোনা-রুপোর গয়নাও। ঘরের জিনিসপত্র নাড়াচাড়া করতেই সামনে আসে ওই ট্রাঙ্কটি। তালাচাবি ছাড়াই ঘরের কোণায় পড়েছিল সেটি। ট্রাঙ্ক খুলতেই একটি বালিশের মধ্যে থরে থরে সাজানো ৫০০ ও ১০০০ টাকার পুরনো নোট।
গত ৮ নভেম্বরের পর যা বাতিল ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। রিজার্ভ ব্যাঙ্কে বাতিল নোট জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ধার্য করা হয়েছে ৩১ মার্চ। সেই মতো শীর্ষ ব্যাঙ্কে ওই নোট বদল করতে গিয়েও বিপত্তি। গত ২২ মার্চ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সে নোট জমা নিতে অস্বীকার করায় রীতিমতো বিপাকে পড়েছে ওই ওই কিশোর-কিশোরী। এর পরই প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি খোলা চিঠি লিখেছে ওই কিশোর। হিন্দিতে লেখা সে চিঠি অনলাইনে পোস্টও করেছে সে। কিশোরের আর্জি, “দয়া করে আমাদের ‘মন কি বাত’ শুনুন মোদীজি। আমাদের দেখাশোনার জন্য কেউ নেই। খুব ছোট ছিলাম যখন বাবা চলে যান। আর মাকে খুন করা হয়েছে। আমরা সরকারের ঘরে এই টাকা জমা দিতে চাই। আমাদের টাকা ফেরত চাই। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন!”
কোটা শিশু কল্যাণ কমিটির চেয়ারম্যান হরিশ গুরুবক্সানি জানিয়েছেন, ওই কিশোরের লেখা চিঠি পৌঁছে গিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর অফিসে। ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসার পর সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন কোটার সাংসদ ওম বিড়লা। তিনি বলেন, “খুব কষ্ট করে ওই দুই ছেলেমেয়েকে বড় করেছেন তাদের মা। ছেলেমেয়েদের জন্য গচ্ছিত সঞ্চয় উদ্ধারে সরকারের কাছে সব রকম সাহায্যের অনুরোধ করব।” মন্ত্রীর আরও আশ্বাস, “বিষয়টি আইনি জটে আটকে গেলে জনসাধারণের কাছ থেকে চাঁদা তুলে তাদের পড়াশোনার ব্যবস্থাও করব। আমরা সকলেই তাদের দায়্ত্বি নিতে প্রস্তুত।” তবে আশ্বাস মিললেও এখনও পর্যন্ত মায়ের সারা জীবনের সঞ্চয় হাতে আসেনি ওই দুই কিশোর-কিশোরীর। সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে যা তাদের মা জমিয়ে রেখেছিলেন।