Advertisement
২১ মে ২০২৪

পোশাকে ধর্ম-ভাগে শাহও, পাক-প্রশ্নে বিঁধছেন মোদী

রাহুল গাঁধীর ভাষায় আজ ‘মোদীর অ্যাসিস্ট্যান্ট’ অমিত শাহও বললেন, ‘‘ভিডিয়ো দেখেই চিনতে পারছেন কি না বলুন?’’

নরেন্দ্র মোদী। ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জে মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই।

নরেন্দ্র মোদী। ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জে মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:৫৭
Share: Save:

টেলিভিশনে পোশাক দেখেই প্রধানমন্ত্রী ‘চিনতে’ পেরেছিলেন, কারা আগুন লাগাচ্ছেন। তা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক, জলঘোলা চলছে। তবু রাহুল গাঁধীর ভাষায় আজ ‘মোদীর অ্যাসিস্ট্যান্ট’ অমিত শাহও বললেন, ‘‘ভিডিয়ো দেখেই চিনতে পারছেন কি না বলুন?’’

প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে এক টিভি সাক্ষাৎকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘‘এ ভাবে পোশাক দিয়ে কাউকে চিহ্নিত করা কি ঠিক?’’ শাহের জবাব, ‘‘ভিডিয়ো দেখে বলুন, আপনিও চিনতে পারছেন কি না? এই নিয়ে (সমালোচনামূলক) মন্তব্য আসুক। এটি নিয়ে প্রশ্ন করা বা না-করা অন্য বিষয়, তিনি (প্রধানমন্ত্রী) জনতার সামনে নিজের পক্ষ রেখেছেন।’’

২০১৪-র লোকসভা ভোটের আগে মোদীর স্লোগান ছিল ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’। দ্বিতীয় বার আরও বড় জনমত নিয়ে জিতে আসার পরে এই স্লোগানে যোগ হয়, ‘সবকা বিশ্বাস’। ভোটফলের দিনই শাহকে পাশে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘যাঁরা বিজেপিকে ভোট দেননি, তাঁদেরও মন জয় করতে হবে।’’ সংশোধিত নাগরিকত্ব বিল নিয়ে মোদী-শাহ জুটি যে মেরুকরণের রাজনীতিই করছে, এই নিয়ে বিরোধীদের মনে কোনও সংশয় ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর পদে বসে এক জন সংখ্যালঘুদের এ ভাবে ‘চিনিয়ে’ দিচ্ছেন দেখে তাদের সেই মত আরও জোরালো হয়েছে। শাহের সায়ের পরে ষোলো কলা পূর্ণ!

আজ ঝাড়খণ্ডের ভোট প্রচারেও ফের কংগ্রেসকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পছন্দের শব্দ ‘পাকিস্তান’ নিয়ে। দিল্লিতে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার এফআইআরেও কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক আসিফ খানকে অন্যতম অভিযুক্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘কংগ্রেস ও তাদের বন্ধুরা প্রকাশ্যে ঘোষণা করুক যে তারা সব পাকিস্তানিকে ভারতের নাগরিকত্ব দিতে চায়।’’ প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যের পরে সনিয়া গাঁধীর নেতৃত্বে বিরোধী দলের নেতারা রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়ে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। রাতে হুবহু মোদীর সুরে শাহ বলেন, ‘‘সনিয়া গাঁধী কি পাকিস্তানের সব মুসলিম ভাইকে নাগরিকত্ব দিতে চান?’’

আরও পড়ুন: হাত কাটা গেল আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের জখম ছাত্রের

রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে বেরিয়ে সনিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে কপিল সিব্বল পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছোড়েন মোদীকে, ‘‘আপনি আমাদের সঙ্গে বিতর্কে আসুন। আমরা প্রশ্ন করব, পাকিস্তানের নওয়াজ শরিফকে কে আলিঙ্গন করতে গিয়েছিলেন? জঙ্গিদের ছেড়েছিল কে? পাকিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবেন আপনি, আর অভিযোগ আমাদের বিরুদ্ধে?’’

আরও পড়ুন: জামিয়া-কাণ্ডে ধৃতেরা ছাত্র নয়! বলল সরকারই, তা হলে পুলিশ কেন?

বিদেশে ভারতীয় দূতাবাসগুলিতে বিক্ষোভ দেখানো নিয়ে ক্রুদ্ধ স্বরে মোদী এর আগে বলেছেন, ‘‘এত দিন পাকিস্তান যা করত, সেটাই এখন কংগ্রেস করছে। বিদেশে ভারতের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে তারা।’’ আর আজ ঝাড়খণ্ডে ভোগ্নাদি-র সভায় তাঁর দাবি, সদ্য তৈরি হওয়া আইনটি সম্পর্কে মুসলিম মনে ভয় ঢোকাতে কংগ্রেস মিথ্যা ছড়াচ্ছে। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে দেশের কারও নাগরিকত্ব খোয়ানোর প্রশ্ন নেই। এই আইন আদৌ ভারতীয় নাগরিকদের অধিকারে হাত দেবে না। কোনও ভাবে ক্ষতিও করবে না তাঁদের। শুধু পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের যে সব সংখ্যালঘু মানুষ ধর্মীয় উৎপীড়নের শিকার হয়ে এ দেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন, খুবই দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছেন কিন্তু ফিরে যেতে পারছেন না— নয়া নাগরিকত্ব আইন শুধু তাঁদের জন্য। এর পরেই মোদীর প্রশ্ন, ‘‘আমি জানতে চাই, ‘‘এই আইন কী করে ভারতীয় মুসলিম বা অন্য কোনও নাগরিকের অধিকার খর্ব করছে?’’

আইনের বিরুদ্ধে গোটা দেশে ছাত্র বিক্ষোভ প্রসঙ্গে মোদীর মন্তব্য, ‘‘এই সবই শহুরে নকশালদের চক্রান্ত। তরুণদের খেপিয়ে এরা শান্তি বাধাতে চাইছে। কলেজ-ইউনিভার্সিটির যে সব পড়ুয়া বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, তারা সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসুন।’’

প্রথম চার দফায় (মাওবাদী সন্ত্রাসের) ভয় থেকে মুক্ত হয়ে ভোট দেওয়ার জন্য ভোগ্নাদির ভোটসভায় মোদী আজ ঝাড়খণ্ডবাসীদের অভিনন্দন জানান। দাবি করেন, ‘‘পদ্ম ফুটলেই দেশের আদিবাসী, মহিলা ও তরুণরা উপকৃত হন। বিজেপির উপরে আপনাদের আশীর্বাদ ঘুম উড়িয়ে দিয়েছে কংগ্রেস, জেএমএম, আরজেডি, ও বাম দলগুলির।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE