Advertisement
১৬ মে ২০২৪
Rajasthan Assembly Election 2023

শিক্ষায় দুর্নীতি, রাজস্থান-বঙ্গ যেন ভাই ভাই

representational image

—প্রতীকী ছবি।

প্রেমাংশু চৌধুরী
অজমের শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:৪৭
Share: Save:

শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ। চার থেকে আট লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়ে বিনিময়ে চাকরি বিক্রি। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর দিকে অভিযোগের আঙুল। তাঁর ছেলে, পুত্রবধূ-সহ পরিবারের সকলের রাজস্থানের সিভিল সার্ভিসে চাকরি পেয়ে যাওয়া। কারচুপি করে তাঁদের পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া। শিক্ষামন্ত্রীর বাড়িতে ইডি-র তল্লাশি। মুখ্যমন্ত্রীর আত্মীয়কে ইডি-র সমন। পাল্টা বিজেপির বিরুদ্ধে ইডি-কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কাজে লাগানোর অভিযোগ। সবাইকে জেলে পোরা হবে বলে বিজেপির হুঁশিয়ারি।

চেনা-চেনা লাগছে? নাহ্‌, পশ্চিমবঙ্গ নয়, এই সবই রাজস্থানেরও ঘটনা। রাজস্থানের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে বিজেপির প্রধান অস্ত্র— সরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে বাজারে বিক্রি করার কেলেঙ্কারি। মোট ২৭ বার রাজস্থানের সরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বাজারে বিক্রি হয়েছে বলে অভিযোগ। নয় বার পরীক্ষা বাতিল করতে হয়েছে।

অজমেরে বেড়াতে এলে এত দিন দর্শনীয় ছিল অজমের শরিফে খাজা মইনুদ্দিন চিস্তির দরগা। আর পৃথ্বীরাজ চৌহানের ঠাকুরদা আনাজি চৌহানের জমানায় খোঁড়া আনা সাগর হ্রদ। এখন অজমেরে রাস্তায় চলতে চলতে ট্যাক্সিচালকরা আঙুল তুলে ভিন্‌ রাজ্যের সাংবাদিককে দেখাচ্ছেন, ‘‘ওই যে রাজস্থান পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদর দফতর। আর ওই হল রাজস্থান স্কুল শিক্ষা পর্ষদের দফতর। ওখানেই ঘুঘুর বাসা।’ বিজেপি ইস্তাহারে বলেছে, কংগ্রেসকে সরিয়ে রাজস্থানে ক্ষমতায় এলে ‘পেপার-লিক’ দুর্নীতির তদন্তে বিশেষ তদন্তকারী দল (এসআইটি) গঠন করবে। কংগ্রেস সরকারের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত বলছেন, “রাজস্থান হাই কোর্ট বিজেপির দাবি সত্ত্বেও সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়নি। অথচ ভোটের মরসুমে পঙ্গপালের মতো ইডি নেমে পড়েছে।”

পশ্চিমবঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ হয় টেট-এর মাধ্যমে। টেট-কেলেঙ্কারিতে মূল অভিযুক্ত প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। রাজস্থানে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষার নাম ‘রীট’। আর সেই রীট-কেলেঙ্কারির মূল অভিযোগের আঙুল অশোক গহলৌত সরকারের শিক্ষামন্ত্রী গোবিন্দ সিংহ ডোটাসরার দিকে। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল নেতাদের কয়েক জনের ছেলে, পুত্রবধূ, মেয়ে সরকারি চাকরি পেয়ে গিয়েছিলেন। রাজস্থানে সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষাতেও গোবিন্দ সিংহ ডোটাসরার ছেলে, পুত্রবধূ, পুত্রবধূর ভাই, বোন চাকরি পেয়েছেন। সকলেরই পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর ৮০ শতাংশ। পার্থ ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব। গোবিন্দ সিংহ প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি। রাজ্য পুলিশ তদন্ত করছে বলে তাঁকে এখনও জেলে যেতে হয়নি। তবে ইডি তাঁর জয়পুর, সীকরের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে। তাঁর দুই ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। মুখ্যমন্ত্রীর ছেলে বৈভবকেও ইডি সমন পাঠিয়েছে।

কংগ্রেস নেতা সচিন পাইলট মুখ্যমন্ত্রী গহলৌত সরকারের বিরুদ্ধে এই নিয়োগ-দুর্নীতি নিয়েই সরব ছিলেন। প্রশ্নপত্র ফাঁসে ক্ষতিগ্রস্ত পরীক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণ ও রাজস্থানের পাবলিক সার্ভিস কমিশন ভেঙে পুনর্গঠনের দাবি নিয়ে তিনি অজমের থেকে জয়পুর পদযাত্রাও করেছিলেন। গহলৌত সরকার চাপের মুখে দাবি মেনে নিয়েছিল। রাজস্থান সরকারি চাকরি পরীক্ষা অনিয়ম প্রতিরোধ আইন তৈরি হয়েছিল। প্রথমে দুর্নীতির শাস্তি ছিল ১০ কোটি টাকা জরিমানা ও ১০ বছরের জেল। পরে তা বাড়িয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে।

সচিন মনে করছেন, যাবজ্জীবনের সাজায় দুর্নীতি করার আগে লোকে ভয় পাবে। বলেন, “পাবলিক সার্ভিস কমিশন পুনর্গঠনের কাজও শুরু হয়েছিল। কিন্তু ভোটের জন্য শেষ করা যায়নি। পরীক্ষা ব্যবস্থার একটা অংশ দুর্নীতিতে ঝাঁঝরা, তাতে সন্দেহ নেই। তাই ব্যবস্থাটাই পাল্টানো দরকার।’’ কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি গোবিন্দ সিংহের দিকেই যে দুর্নীতির অভিযোগের আঙুল। তিনি সীকর থেকে ভোটেও লড়ছেন। তাঁর কী হবে? পাইলটের উত্তর, ‘‘চাই, দোষীদের শাস্তি হোক, সে যে-ই হোক।”

গোবিন্দ সিংহ কোনও অভিযোগই মানতে নারাজ। তাঁর দাবি, “আমার পরিবারের লোকেরা চাকরি পেয়েছেন নিজের যোগ্যতায়। দুর্নীতি প্রমাণ হলে নিজের নাম পাল্টে ফেলব।” আর মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, “রাজস্থান পুলিশের ‘স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ’ প্রায় ৩৯টি এফআইআর করেছে। ৪৯৪ জনকে গ্রেফতার হয়েছে। ২ কোটি ১৭ লক্ষ টাকার টাকার নগদ-সম্পত্তি আটক করা হয়েছে। সরকার দুর্নীতিতে প্রশ্রয় দিচ্ছে না।” বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য বলছেন, এ সবে কিছুই লাভ হবে না। নিয়োগ দুর্নীতিই শাসক দলের পতনের কারণ হয়ে উঠবে। তা সে রাজস্থানই হোক বা পশ্চিমবঙ্গ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rajasthan Assembly Election 2023 Congress BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE