চেনাব সেতু উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: এএনআই।
পাকিস্তান হামলায় যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা মোদীর। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার ঠিক করেছে, যাঁদের বেশি ক্ষতি হয়েছে, তাদের দু’লাখ টাকা দেওয়া হবে। আর যাঁদের ক্ষতির পরিমাণ কম, তাঁদের এক লাখ টাকা করে অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’’
এক মাস আগে, ৬ মে রাতে পাকিস্তানের জঙ্গিঘাঁটিগুলিতে হামলা চালায় ভারতীয় সেনা। যার পোশাকি নাম ‘অপারেশন সিঁদুর’। শুক্রবার কাশ্মীর থেকেই সেই অভিযানের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘৬ মে রাতে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদীদের উপর হামলা চলে। এখন পাকিস্তান যখনই ‘অপারেশন সিঁদুরের’ নাম শুনবে, তখন তাদের সর্বনাশের কথা মনে পড়বে। পাকিস্তান ফৌজ এবং সন্ত্রাসবাদীরা ভাবতে পারেনি ভারত পাকিস্তানে ভেতরে ঢুকে এ ভাবে হামলা করবে। ওরা যে সন্ত্রাসবাদের ইমারত তৈরি করেছিল, তা কিছু মিনিটের মধ্যে ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে। গোটা বিশ্ব দেখেছে, পাকিস্তান কী ভাবে জম্মু-কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের উপর হামলা চালিয়েছে।’’
জম্মু-কাশ্মীরের বিকাশ বন্ধ হবে না, প্রতিশ্রুতি দিলেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘এখানকার যুবসমাজের স্বপ্নপূরণে যদি কোনও বাধা আসে, তবে সেই বাধার বিরুদ্ধে মোকাবিলা করবে মোদী।’’
মোদী বলেন, ‘‘জম্মু-কাশ্মীরের যুবসমাজ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জবাব দেওয়ার জন্য তৈরি। বছরের পর বছর সন্ত্রাসবাদের কারণে জম্মু-কাশ্মীরে অনেক ক্ষতি হয়েছে। ওই সন্ত্রাসবাদের কারণে এখানকার মানুষ স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দিয়েছিল। সন্ত্রাসবাদকেই নিজেদের ভাগ্য বলে মেনে নিতে শুরু করেছিল। তবে আমরা সেটা পাল্টে দিতে পেরেছি। এখন জম্মু-কাশ্মীরের যুবসমাজ স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। শুধু তা-ই নয় তা পূরণও করছে।’’
পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয় স্থানীয় সহিস আদিল হুসেনের। কাশ্মীরের জনসভা থেকে সেই আদিলের কথাই বললেন মোদী। তাঁর কথায়, ‘‘কেউ ঘোড়া চালান, কেউ আবার গাইড— সকলকে শেষ করার ষড়যন্ত্র ছিল পাকিস্তানের। সন্ত্রাসবাদীদের সামনে রুখে দাঁড়ানো আদিলও তো ওখানে রোজগারের আশায় গিয়েছিল। পরিবারের মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দেওয়ার জন্য কাজ করত। সেই আদিলকেও মেরে দিয়েছে।’’
কাশ্মীর থেকে আবার এক বার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন মোদী। তাঁর অভিযোগ, ভারতে দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা করেছিল পাকিস্তান। মোদীর কথায়, ‘‘পাকিস্তান কাশ্মীরের পর্যটনের উপর হামলা করেছে। এই পর্যটন থেকে জম্মু-কাশ্মীরের গরিবদের সংসার চলে, সেই পর্যটনকে নিশানা করেছে পাকিস্তান।’’
মোদী বলেন, ‘‘পর্যটন থেকে রোজগার বাড়ে। পর্যটন মানুষকে জোড়ে। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের পড়শি দেশ মানবতাবিরোধী এবং পর্যটনবিরোধী। পহেলগাঁওয়ে ২২ এপ্রিল যা হয়েছে এটা তার উদাহরণ। পাকিস্তান পহেলগাঁওয়ে মানবতার উপর আঘাত করেছে।’’
আইফেল টাওয়ারের সঙ্গে চেনাব সেতুর তুলনা টানলেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘আইফেল টাওয়ার দেখতে লোকে প্যারিস যায়। আর এই সেতু আইফেল টাওয়ারের থেকেও উঁচু। এ বার লোক চেনাব সেতুর জন্য কাশ্মীরে আসবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘পর্যটন তো বাড়বেই, এ ছাড়াও অর্থনীতির অন্যান্য ক্ষেত্রও লাভবান হবে।’’ এই রেলপ্রকল্প ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে বড় সুযোগ বলেও মনে করেন মোদী। তাঁর কথায়, ‘‘কাশ্মীরি পণ্য এ বার থেকে আরও কম সময়ে এবং সহজে পৌঁছে যাবে দেশের অন্য প্রান্তে।’’
চেনাব সেতু উদ্বোধন করে মোদী বলেন, ‘‘যত ভাল কাজ রয়েছে, তা আমার জন্যই পড়ে ছিল। আমার সরকারের সৌভাগ্য যে, এই প্রকল্প আামাদের সময়কালেই গতি পেয়েছে এবং আমরা তা শেষ করে দেখিয়েছি।’’
মোদী বলেন, ‘‘ভারতের একতা এবং ভারতের ইচ্ছাশক্তির বড় উৎসব। বৈষ্ণোদেবীর আশীর্বাদে আজ কাশ্মীর ভারতের রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে জুড়ে গেল। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী জুড়ে গেল রেলপথের মাধ্যমে। কাশ্মীর নতুন গতি পেল।’’
কাশ্মীরে মোট ৪৬ হাজার কোটি টাকার উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন মোদী।
শুক্রবার কাটরার অনুষ্ঠানে এসে জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রীর গলায় মোদীর প্রশংসা করলেন। তাঁর কথায়, ‘‘কাশ্মীরের মানুষের আশা পূরণ হল এত দিনে।’’ শুধু মোদী নয়, দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর কথাও বলেন ওমর। তিনি বলেন, ‘‘আজ অটলবিহারী বাজপেয়ীর কথা না বললে ভুল হবে। তিনিই এই প্রকল্প তরান্বিত করেছিলেন।’’
বন্দে ভারত উদ্বোধনের পর কাটরার একটি জনসভায় উপস্থিত হলেন মোদী। সেই সভাতেই মোদীর সঙ্গে রয়েছেন জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রীও।
জম্মু-কাশ্মীরে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের উদ্বোধন করলেন মোদী। চেনাব সেতুর পর কাটরা স্টেশন থেকে দু’টি বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী। দেশের বাকি অংশের সঙ্গে এ বার রেলপথে জুড়ল কাশ্মীর। মাত্র তিন ঘণ্টায় কাটরা থেকে শ্রীনগর পৌঁছে যেতে পারবেন পর্যটকেরা।
বেলা ১২টা নাগাদ ‘বিশ্বের সর্বোচ্চ রেলসেতু’ অঞ্জী ব্রিজের উদ্বোধন করলেন মোদী। তাঁর সঙ্গেই ছিলেন জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রীও। জাতীয় পতাকা হাতে সেতুর উপর দিয়ে হাঁটলেনও মোদী।
উদ্বোধনের আগে কাশ্মীরের চেনাব সেতু ঘুরে দেখলেন মোদী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রীও।
গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার ঘটনায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়। তার পর পাকিস্তানে প্রত্যাঘাত করে ভারত। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় একাধিক পাক জঙ্গিঘাঁটি। প্রত্যাঘাতের সেই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘অপারেশন সিঁদুর’। এর পর টানা চার দিন ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত চলেছে। গত ১০ মে সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয় দু’পক্ষ। পহেলগাঁও হামলা এবং ‘সিঁদুর’ অভিযানের পর প্রথম বার কাশ্মীরে মোদী।
সকাল ১১টা ১৫ মিনিট নাগাদ কাশ্মীরে পৌঁছোলেন মোদী। সঙ্গে রয়েছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব এবং জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা।
মোদীর হাত ধরে উপত্যকায় নতুন দু’টি বন্দে ভারত ট্রেনেরও সূচনা হতে চলেছে। কাটরা থেকে শ্রীনগর এবং কাশ্মীর থেকে কাটরা রুটের বন্দে ভারত ট্রেন চলবে। শুক্রবার এই ট্রেনগুলির সূচনা করবেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়াও কাশ্মীরে মোট ৪৬ হাজার কোটি টাকার উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন করার কথা মোদীর। কাটরা থেকে এই প্রকল্পগুলির উদ্বোধন করা হবে।
চন্দ্রভাগা নদীর উপরে তৈরি করা হয়েছে ‘বিশ্বের সর্বোচ্চ রেলসেতু’ অঞ্জী ব্রিজ। তা উদ্বোধন করতে শুক্রবার কাশ্মীরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। চন্দ্রভাগা রেলসেতুর (চেনাব ব্রিজ) দৈর্ঘ্য ১.৩ কিলোমিটার। এই সেতু তৈরিতে খরচ হয়েছে ১৪০০ কোটি টাকা। চন্দ্রভাগা নদী থেকে এই সেতুর উচ্চতা ৩৫৯ মিটার (১১৭৭.৮২ ফুট)। ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন ছুটতে পারবে এই সেতুর উপর দিয়ে। রিখটার স্কেলে আট মাত্রার ভূমিকম্পও একে টলাতে পারবে না। এই সেতু ১২০ বছর পর্যন্ত টিকে থাকবে বলে দাবি নির্মাতাদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy