পশ্চিমবঙ্গের দিকে দিকে বিক্ষিপ্ত অশান্তি। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
সকাল থেকে কেরলের বিভিন্ন জায়গায় বন্ধের প্রভাব পড়েছে। স্কুল-কলেজ, দোকানপাট, অফিস বন্ধ। খোলেনি ব্যাঙ্কও। বামশাসিত কেরলের রাস্তায় লোকজনের সংখ্যা হাতেগোনা। বাস, গাড়ি চলছে না।
শ্রমিক সংগঠনের ডাকা বন্ধের প্রভাব পড়ল ব্যাঙ্ক পরিষেবায়। দেশের বিভিন্ন রাষ্ট্রয়ত্ত্ব ব্যাঙ্কের দরজায় তালা ঝুলছে। ফলে ভোগান্তির শিকার গ্রাহকেরা।
বাংলা এবং বিহারে বিক্ষিপ্ত অশান্তির ঘটনা ঘটলে ভারতের অন্য রাজ্যগুলিতে বন্ধের তেমন প্রভাব পড়েনি।
বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে এখন হইচই তুঙ্গে। রোজই নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বিরোধীদের সংঘাত চলছে। এরই মধ্যে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের নেতাদের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, এর ফলে বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে তাঁদের প্রচারের আসল বিষয় থেকে নজর সরে যেতে পারে। বুধবার শ্রমিক সংগঠনের ডাকা ‘ভারত বন্ধ’-এর সঙ্গে বিহারে জুড়ে গেল নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদও। পটনায় মিছিলে এক সঙ্গে পা মেলালেন কংগ্রেস সাংসদ তথা লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী এবং আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব।
গাঙ্গুলিবাগান মোড়ে পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়ালেন বাম সমর্থকেরা। বামনেতা সৃজন ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে একটি মিছিল বার হয়। সেই মিছিল গাঙ্গুলিবাগান মোড়ে পৌঁছোনোর পরে উত্তেজনা শুরু হয়। অভিযোগ, বিক্ষোভকারীরা রাস্তার মাঝে টায়ার জ্বালানোর চেষ্টা করেন। তবে তাঁদের বাধা দেয় পুলিশ। শুধু হয় দুর্পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি।
মুর্শিদাবাদের লালগোলায় ট্রেন অবরোধ করলেন বন্ধ সমর্থকেরা।
যাদবপুর, লেকটাউন, গাঙ্গুলিবাগানে বন্ধের বিক্ষিপ্ত প্রভাব পড়ল। যাদবপুরের রাস্তায় ধর্মঘটীরা আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান। মিছিল বার হয় গাঙ্গুলিবাগানে। লেকটাউনে পথ অবরোধের চেষ্টা করেন বিক্ষোভকারীরা। তাঁদের হটাতে পুলিশ রাস্তায় নেমেছে।
ওড়িশার খুরদায় জাতীয় সড়ক অবরোধ করলেন বাম সমর্থিত শ্রমিক সংগঠন সিটুর সমর্থকেরা। পুলিশ অবরোধ চেষ্টা করছে। অবরোধের কারণে জাতীয় সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে।
বেলঘরিয়া, দুর্গাপুর রেলস্টেশনে ট্রেন আটকানোর চেষ্টা করেন বন্ধ সমর্থকেরা। বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার পর সাময়িক ভাবে ব্যাহত হয় শিয়ালদহ মেন শাখার ট্রেন চলাচল। শিয়ালদহের দক্ষিণ শাখায় যাদবপুর স্টেশনেও ধর্মঘটীরা ট্রেন আটকানোর চেষ্টা করেন। তবে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দেয়।
ডোমজুড়ে বন্ধ সমর্থকদের সঙ্গে দফায় দফায় বচসায় জড়ায় পুলিশ। লরি, বাস আটকাতে গেলে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দেয়। ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায়।
হুগলি স্টেশনে রেল অবরোধ। হাওড়াগামী ডাউন ব্যান্ডেল লোকাল ট্রেন আটকে দেন ধর্মঘট সমর্থকেরা। ঝান্ডা হাতে রেল লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েন তাঁরা। কিছু ক্ষণ ওই লাইনে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। পরে পুলিশ এসে অবরোধ সরিয়ে দেয়।
হুগলির জুটমিলগুলির ছবি অন্য দিনের তুলনায় কিছুটা ভিন্ন। ভদ্রেশ্বরের শ্যামনগর নর্থ জুটমিল গেটে শ্রমিকেরা সকাল থেকে পিকেটিং শুরু করেন। বাঁশবেড়িয়া গ্যাঞ্জেস জুটমিলে ধর্মঘটে যোগ দিয়েছেন শ্রমিকেরা। জেলার অন্য জুটমিলগুলিতে হাজিরা কম শ্রমিকদের।
বালুরঘাটে বন্ধের সমর্থনে মিছিল। —নিজস্ব চিত্র।
সকাল থেকেই বন্ধের প্রভাব পড়ল বিহারে। পটনার মানেরের ৩০ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন বন্ধ সমর্থকেরা। টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। জেহনাবাদ স্টেশনে রেল অবরোধ।
কোচবিহারের বাজার হাট এবং বিভিন্ন দোকানপাট বন্ধ। চলছে না বেসরকারি পরিবহণ। তবে পথে নামতে দেখা গেল উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার বাস। তবে সুরক্ষার্থে হেলমেট পড়ে বাস চালাতে দেখা যায়। বন্ধের সমর্থনে মিছিল বার হয় সকালেই। তবে পাল্টা বন্ধবিরোধী মিছিলও চোখে পড়ল।
হেলমেট পড়ে বাস চালাচ্ছেন চালকেরা। —নিজস্ব চিত্র।
কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের ডাকে দেশ জুড়ে সাধারণ ধর্মঘটের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সদর বালুরঘাটে। সকাল ৬টা থেকেই পথ অবরোধ শুরু হয়েছে শহরে। বালুরঘাট শহরের সরকারি বাসস্ট্যান্ডের সামনে সকাল থেকেই বামপন্থী কর্মী সমর্থকেরা রাস্তায় পিকেটিং করছেন। অবরোধ করা হয়েছে বালুরঘাট-মালদহ রাজ্য সড়ক। অবরোধের কারণে আটকে পড়ে দূরপাল্লার বাস।
বালুরঘাটে বন্ধের সমর্থনে মিছিল। —নিজস্ব চিত্র।
অবশ্য পুলিশ প্রশাসনের তাৎপরতায় পরে দূরপাল্লার বাসগুলিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ ও র্যাফ মোতায়েন করা হয়েছে। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে দফায় এই অবরোধ হবে বলে জানিয়েছেন বাম নেতৃত্ব। তবে এখনও পর্যন্ত পাইকারি বাজার স্বাভাবিক। বেসরকারি পরিবহণ পুরোপুরিভাবে বন্ধ। সকাল থেকে বালুরঘাটে চার জন বন্ধ সমর্থককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সিটু-র রাজ্য দফতর ‘শ্রমিক ভবন’ থেকে মঙ্গলবার সিটু, আইএনটিইউসি, এআইসিসিটিইউ, এআইটিইউসি, ইউটিইউসি, এআইইউটিইউসি নেতৃত্ব জানিয়েছেন, ধর্মঘটের সমর্থনে বুধবার এন্টালি মার্কেট থেকে কেন্দ্রীয় মিছিল এবং যাদবপুর, শিয়ালদহ, খিদিরপুরে মিছিল হবে।
কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা সাধারণ ধর্মঘটে জোর-জবরদস্তির চেষ্টা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানায় পুলিশ-প্রশাসন। অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় সরকার এই ধর্মঘট এড়ানোর জন্য শেষ মুহূর্তে পদক্ষেপ নিচ্ছে।
সাম্প্রতিক কালে কোনও ধর্মঘটের প্রভাবই এই রাজ্যে তেমন পড়েনি। তবে এ বার পরিবহণ-ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাম শ্রমিক সংগঠনগুলির অনুমোদিত বিভিন্ন অ্যাপ ক্যাব, হলুদ ট্যাক্সি এবং বাইক ট্যাক্সি চালক সংগঠন পরিষেবা বন্ধ রেখে ধর্মঘটে শামিল হওয়ার কথা জানিয়েছে।
উল্টো দিকে, রাজ্য পরিবহণ দফতর সরকারি পরিবহণ নিগমগুলির ক্ষেত্রে বিশেষ পরিস্থিতি ছাড়া কর্মীদের ছুটি বাতিল করেছে। পূর্ণ ক্ষমতায় রাস্তায় সরকারি বাস নামাতে বলা হয়েছে। বেসরকারি বাস যাতে রাস্তায় নামে, সে দিকে নজর রাখার জন্য আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিকদের বলা হয়েছে।
ধর্মঘটের সমর্থনে শ্রমিক সংগঠন ও সংযুক্ত কিষান মোর্চার মিছিলও রয়েছে। দশটি কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠন এই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। কলকাতা মেট্রোর শ্রমিক সংগঠন, কলকাতা মেট্রো কর্মী সংগঠন, কর্মীদের রাতের ডিউটি নিয়ে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। তাদের অভিযোগ, কর্মীদের স্বাস্থ্যের কথা না ভেবেই রাতে কাজ করানো হচ্ছে।
অন্য দিকে, ধর্মঘট রুখতে প্রশাসন প্রস্তুত এবং শ্রমিক সংগঠনগুলিও প্রতিরোধ করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
বুধবার দেশজুড়ে ২৪ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনগুলি। এই ধর্মঘটের মূল কারণ হল, শ্রমিক সংগঠনগুলির নতুন শ্রম কোড বাতিলের দাবি, দৈনিক ৬০০ টাকা মজুরি ও ২৬,০০০ টাকা ন্যূনতম মাসিক বেতনের মতো বিষয়গুলি। কলকাতা মেট্রোর শ্রমিক সংগঠনও কর্মীদের কাজের সময় নিয়ে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy