উদ্ধারের কাজ দেখতে বেরিয়েছেন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা ইয়াসিন মালিকও। ছবি: এপি।
বাড়ির দু’টো তলা জলের তলায় চলে যাওয়ার পরে প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে সকলে মিলে তিন তলায় উঠে গিয়েছিলেন। সময় যত এগিয়েছে, গৃহবধূ মিশবার প্রতি মুহূর্তে মনে হয়েছে এ বার তিন তলাতেও জল চলে এলে শিশু সন্তানদের নিয়ে স্রেফ ভেসে যেতে হবে তাঁদের। কিন্তু সেই অন্তিম সময় পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন এক দল যুবক। না তাঁরা সেনা বাহিনীর কেউ নন। শ্রীনগর শহরের স্থানীয় বাসিন্দা। নৌকো করে এসে তাঁরাই উদ্ধার করে নিয়ে গিয়েছিলেন মিশবা-সহ পরিবারের সকলকে। “মৃত্যুকে এত কাছ থেকে দেখেছি যে সেই আতঙ্ক ভুলতে পারব না। তবে সেনাও যখন আমাদের কাছে পৌঁছতে পারেনি, তখন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন ওই যুবকরা। তাঁদের নামটুকুও হয়তো কোনও দিন জানা হবে না”, বলেছেন মিশবার স্বামী পুঞ্চের বাসিন্দা আজিজ।
জম্মু-কাশ্মীর জুড়ে এখন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে এমন অজস্র নাম না-জানা যুবকদের স্তুতি। বিভিন্ন এলাকায় জলবন্দি মানুষদের উদ্ধারে হাত বাড়িয়েছেন তাঁরা। সেনা বা প্রশাসনের সাহায্য যেখানে পৌঁছয়নি, সেখানে গিয়ে বহু মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছেন এই সব স্থানীয় যুবক। শ্রীনগর শহরেও ডুবন্ত হাউসবোট থেকে শিকারার সাহায্যে উদ্ধার করেছেন স্থানীয় যুবকরা।
বৃষ্টি কমলেও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি এখনও। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, আপাতত এক লক্ষ ২৭ হাজার মানুষকে উদ্ধার করে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জলবন্দি এখনও লাখ তিনেক মানুষ। বায়ুসেনা সূত্রে খবর, উদ্ধার কাজে আপাতত ৮৯টি বিমান ও কপ্টার কাজে লাগানো হয়েছে। মোট ৩০ হাজার সেনার নিরন্তর চেষ্টায় বহু মানুষকে সুরক্ষিত জায়গায় পৌঁছনো সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেনার মুখপাত্র। এয়ার ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকেও আজ জানানো হয়েছে, গত কয়েক দিনে শ্রীনগর ও লে থেকে প্রায় ১৩০০ জনকে উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে তারা। এঁদের মধ্যে একটা বড় অংশকেই আনা হয়েছে বিনামূল্যে। এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন টেলিকম সংস্থাও। গ্রাহকদের পাঁচ দিনের জন্য বিনামূল্যে এক ঘণ্টা করে কথা বলার সুযোগ করে দিচ্ছে তারা।
এই অবস্থায় বন্যা দুর্গতদের পুনর্বাসনের জন্য আজ ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা ঘোষণা করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। বন্যায় যাঁদের বাড়ি-ঘর ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গিয়েছে, তাঁদের প্রাথমিক ভাবে এককালীন ৭৫ হাজার টাকা দেবে সরকার। মৃতদের পরিবারপিছু দেওয়া হচ্ছে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা। আসন্ন শীতের কথা মাথায় রেখেই রাজ্য পুনর্বাসন প্রকল্প শুরু করেছে বলে আজ জানান সরকারি এক মুখপাত্র। সেই মতো আর্থিক সাহায্যও দেওয়া হচ্ছে বন্যা দুর্গতদের। সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন পুদুচেরির এডিএমকে বিধায়করা। নিজেদের এক মাসের মাইনে বন্যা ত্রাণে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। এর মধ্যেই আজ বন্যা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সর্বোচ্চ আদালতে দায়ের হওয়া একটি আবেদনের ভিত্তিতেই বিচারপতি আর এম লোঢার বেঞ্চ এ বিষয়ে রিপোর্টটি চেয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরের বন্যার এখন ‘জাতীয় সাড়ার’ প্রয়োজন বলেও এ দিন মন্তব্য করেছে সুপ্রিম কোর্ট।
তবে জম্মু-কাশ্মীরেই শেষ না। বরং শুরু। ভারতে এই ধরনের ভয়াবহ বন্যা ভবিষ্যতে আরও হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন গবেষকরা। ‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ (সিএসই) সতর্ক করে জানিয়েছে, কাশ্মীর, মুম্বই, উত্তরাখণ্ডের মতো আগামী দিনে ভারতের অন্য এলাকাতেও অতিবৃষ্টির আধিক্য দেখা যেতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy