Advertisement
E-Paper

শাসক-বিরোধী ধুন্ধুমারে সংসদ অচলই

ব্যাকফুটে না গিয়ে বরং উড়িয়ে খেলার নীতি নিয়েই এগোচ্ছে বিজেপি। রণে ভঙ্গ দিতে রাজি নয় কংগ্রেসও। ফলে যা হওয়ার সেটাই হচ্ছে। দু’পক্ষের সংঘাতে আরও এক বার দফারফা সংসদের জরুরি সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৫ ০৩:১৬

ব্যাকফুটে না গিয়ে বরং উড়িয়ে খেলার নীতি নিয়েই এগোচ্ছে বিজেপি। রণে ভঙ্গ দিতে রাজি নয় কংগ্রেসও। ফলে যা হওয়ার সেটাই হচ্ছে। দু’পক্ষের সংঘাতে আরও এক বার দফারফা সংসদের জরুরি সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা।

বুধবার সংসদের দ্বিতীয় দিনেও ভন্ডুল হয়ে গেল অধিবেশন। পণ্য ও পরিষেবা করের রিপোর্ট পেশ কিংবা সংশোধিত জমি বিলের ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত। তবে তাতে না দমে বিজেপি এখন খুঁজে খুঁজে কংগ্রেসের ভাঁড়ারের দুর্নীতি সামনে এনে আরও আক্রমণাত্মক অবস্থান নিয়েছে। সকালে শান্তা কুমারের মতো বিদ্রোহীকে সামলে দুপুরের পর থেকে উত্তরাখণ্ডে কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী হরিশ রাওয়াত ও তার পরে অরুণাচলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী পি কে থুঙ্গনের দুর্নীতি সামনে এনে কংগ্রেসকেই পাল্টা বিপাকে ফেলার চেষ্টা করল। রাওয়াতের পদত্যাগও দাবি করেছে তারা। বিজেপি নেতৃত্ব বিলক্ষণ জানেন, সংসদ ভন্ডুল করে কংগ্রেস নেতৃত্ব আসলে নিজেদের চাঙ্গা করতে মরিয়া। ফলে তাদেরই মূল নিশানা করে বিরোধীদের ধীরে ধীরে ছত্রভঙ্গ করার কৌশল নিচ্ছে বিজেপি।

তাই বলে কী কংগ্রেসও হাত গুটিয়ে থাকবে? আজ সকালে সনিয়া ও রাহুল গাঁধীর নেতৃত্বে সংসদের গাঁধী মূর্তির পাদদেশে ধর্না দেওয়ার কথা ছিল কংগ্রেসের। কিন্তু সেটি আকস্মিক ভাবে পিছিয়ে যাওয়ায় ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু পরে কংগ্রেস নেতারা জানান, যে ভাবে জমি বিলের বিরোধিতায় সনিয়া গাঁধীর পাশে বিরোধী দলগুলি এককাট্টা হয়েছিল, এক সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রতিবাদ যাত্রায় সামিল হয়েছিল, ঠিক সে ভাবেই একলা না হেঁটে এ
বারেও বিরোধীদের সংগঠিত করতে চাইছেন সনিয়া।

কংগ্রেসের এক নেতা আজ বলেন— অরুণ জেটলিরা যতই সুষমা স্বরাজের পাশে দাঁড়ান, তাঁর ইস্তফার দাবি থেকে সরা হবে না। আদালতের চোখে এক জন পলাতককে সাহায্য করার কথা সুষমা নিজে কবুল করার একটাই অর্থ— তিনি অপরাধ করেছেন। ওই নেতার কথায়, বিজেপি এ যাত্রায় পার পেয়ে গেলে আগামী চার বছর কংগ্রেস আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। তাই দাঁতে দাঁত কামড়ে লড়ে যাচ্ছেন সনিয়া। আজও লোকসভায় রাহুল গাঁধী-সহ কংগ্রেস সাংসদরা হাতে কালো ফিতে বেঁধে আসেন। সনিয়া তা না-বাঁধলেও আজ আগাগোড়া সংসদে ছিলেন আক্রমণাত্মক। মুলতুবি প্রস্তাব স্পিকার খারিজ করার পর তিনি নিজের আসনে বসেই বিজেপির দিকে তীক্ষ্ণ প্রশ্ন ছোড়েন।

এর মধ্যেই সুষমা আজ তাঁর ট্যুইটার অ্যাকাউন্টে নিজের নাম সংশোধন করে বিদেশমন্ত্রী শব্দটি বাদ দেওয়ায় জল্পনা ছড়ায় তিনি ইস্তফা দিচ্ছেন। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠরা বলছেন, আদৌ তা নয়। আসলে সামাজিক মাধ্যমের এই হাতিয়ারটিকে তিনি রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চান, বিদেশমন্ত্রী হিসেবে যা করা যায় না। সেই কারণেই তিনি সরকারি পদের তকমাটিকে মুছে ফেলেছেন নিজের ট্যুইটার হ্যান্ডল থেকে।

তবে বিজেপি নেতৃত্ব জানেন, সুষমা, বসুন্ধরা রাজে ও শিবরাজ সিংহ চৌহান প্রসঙ্গে বিরোধী দলগুলি হট্টগোল করলেও আসলে তিনটি বিষয়ে অনেকেরই অবস্থান ভিন্ন। সপা নেতা নরেশ অগ্রবাল যেমন আজ বলেন, তাঁরা সুষমার কোনও দোষ দেখেন না, ইস্তফাও চান না। তৃণমূলও ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ কৌশল নিয়ে বিরোধিতায় নেমেছে। এক মাত্র বাম, জেডি(ইউ), এনসিপি ছাড়া পুরো দমে কংগ্রেসের পাশে তেমন কেউ নেই। তার মধ্যেই এনসিপি-র প্রফুল্ল পটেল আজ ঘনিষ্ঠ মহলে বলেন, সুষমা-বসুন্ধরাকে নিশানা করে কংগ্রেস ভুল করছে। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সঙ্গে সাধারণ মানুষের যোগাযোগ নেই। বরং ব্যপম কাণ্ডের সঙ্গে মানুষ নিজেদের জুড়তে পারে। বিজেপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, মুলায়মের দল ইতিমধ্যেই ভিন্ন সুর গাইছে। মায়াবতী আজ সোচ্চার হলেও অচিরেই কংগ্রেসের সঙ্গত্যাগ করতে পারেন। তাঁর বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ নেহাৎ কম নয়। এখন শুধু কংগ্রেসের দুর্নীতি নিয়ে সরব হচ্ছে বিজেপি। প্রয়োজনে বাকিদের
বিষয়েও হবে।

কংগ্রেস অবশ্য বুঝতে পারছে, হরিশ রাওয়াতের বিরুদ্ধে অভিযোগ এই পরিস্থিতিতে একটি ধাক্কা। তাই তড়িঘড়ি হরিশ রাওয়াতের ব্যক্তিগত সচিবকে সরিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই ভাবে ব্যপম কাণ্ডে শিবরাজের ওএসডি-র বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় কংগ্রেস এত দিন ধরে ইস্তফার দাবি তুলে আসছে। সকালে সুষমা স্বরাজ ট্যুইট করে বলেন, কয়লা দুর্নীতিতে অভিযুক্ত প্রাক্তন মন্ত্রী সন্তোষ বাগরোদিয়াকে কূটনীতিক পাসপোর্ট করানোর জন্য কংগ্রেসের এক বর্ষীয়ান নেতা তদ্বির করছেন। তিনি সংসদে তাঁর নাম বলবেন। কংগ্রেস অবশ্য এই অভিযোগকে খুব একটা আমল দিচ্ছে না।

জমি বিল নিয়ে হাল ছেড়ে দিলেও মোদী সরকারের আশা ছিল, বাদল অধিবেশনে পণ্য-পরিষেবা কর বা জিএসটি বিল পাশ করিয়ে নেওয়া যাবে। কিন্তু সংসদে যে ভাবে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, তাতে জিএসটি-র ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন উঠে গেল। আজ রাজ্যসভার সিলেক্ট কমিটি জিএসটি-র রিপোর্ট পেশ করেছে। কমিটি বিলকে সমর্থন করে সিংহ ভাগ বিষয়েই সম্মতি দিয়েছে। কংগ্রেস, এডিএমকে এবং বামেরা এর বিরোধিতা করে পাল্টা নোট দিয়েছে। কংগ্রেসের দাবি, এই জিএসটি-র সঙ্গে আদর্শ জিএসটি-র অনেক ফারাক।

এই মুহূর্তে সংসদ অচল করে দেওয়ার কৌশলকেই পাখির চোখ করেছে কংগ্রেস। তাদের বক্তব্য, সব বিরোধী দল যদি পাশে না-ও থাকে, যে ক’টি দল থাকবে— হট্টগোল করে অধিবেশন স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য তারাই যথেষ্ট। সরকার কোনও বিলও পাশ করতে পারবে না। কংগ্রেসের দুর্নীতি নিয়ে বিজেপি যতই পুস্তিকা প্রকাশ করুক, সেই সব বিষয়ে কংগ্রেসই আগ বাড়িয়ে তদন্ত চেয়েছে। রাহুল গাঁধী ফের রাজ্য সফরে বেরোচ্ছেন। এ বার গন্তব্য অন্ধ্র ও তামিলনাড়ু। সেখানে তিনি মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগবেন, সংগঠনকে গুছিয়ে তোলার চেষ্টা করবেন। আর সংসদ সামলাবেন সনিয়া। ২০১৯-এর লক্ষ্যে আপাতত এটাই রণকৌশল কংগ্রেসের।

Lok Sabha Rajya Sabha BJP Congress delhi arun jaitley
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy