Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
National News

গ্রামের পর গ্রাম যেন জাতপাত রসায়নের পরীক্ষাগার, উন্নয়নের রং ফিকে

‘উন্নয়ন নিয়ে ভাবতেই রাজি নন কেউ, শুধু জাতপাত নিয়ে ব্যস্ত!’ বলছে গোটা সান্ধ্য জমায়েতটাই।

দলিত গ্রাম সহেড়ায় কোঠেদার ওমপ্রকাশ রামকে ঘিরে থাকা এই ভিড় খোলাখুলি জানাচ্ছে, ভোট যাবে গঠবন্ধনের পক্ষে। —নিজস্ব চিত্র

দলিত গ্রাম সহেড়ায় কোঠেদার ওমপ্রকাশ রামকে ঘিরে থাকা এই ভিড় খোলাখুলি জানাচ্ছে, ভোট যাবে গঠবন্ধনের পক্ষে। —নিজস্ব চিত্র

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় ও ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়
লখনউ শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৯ ১৪:২৩
Share: Save:

মোষের দুধের মোটা চা ফুটতে ফুটতে আরও গাঢ় হচ্ছে। বারকোশে চুড়ো করে রাখা জলেবি। পাশেরটায় ঝাঁঝরি থেকে নামছে সমোসা। দোহরিঘাটে অন্ধকারও নামছে একই সঙ্গে। আর দোকানটার সামনে প্রশস্ত তক্তপোশের উপরে জমে উঠছে সান্ধ্য গুলতানি।

সেই আসর থেকেই তীক্ষ্ণ চেহারার ভূমিহার প্রবীণ ফিরে গেলেন কয়েক দশক পিছনে। সত্তরের দশকের শেষ দিক বা আশির শুরু, ঠিক মনে পড়ছে না সালটা তাঁর। কিন্তু ঘটনাটা সগৌরবে এবং সদর্পে উজ্জ্বল কল্পনাথ রায়ের স্মৃতিতে— ‘‘রাজনারায়ণ যাচ্ছিলেন এই রাস্তা দিয়ে। দোহরিঘাটে এসে থামলেন, একটা চায়ের দোকানে দাঁড়ালেন। দোকানদার যথেষ্ট খাতিরদারি করলেন রাজনারায়ণের। তার পরে এমন একটা প্রশ্ন করলেন যে, রাজনারায়ণ অবাক! জিজ্ঞাসা করলেন— এটা কোন জায়গা রে ভাই? এখানকার চা-ওয়ালার মুখেও এই রকম প্রশ্ন?’’

চোখ বুজে গল্পটা বলছিলেন কল্পনাথ। শেষ করার পরে তাকালেন। যেন অনেকগুলো দশক আগের একটা সময় থেকে নিজেকে ফিরিয়ে আনলেন ২০১৯-এ। দোহরিঘাট শুধু নয়, গোটা মউ জেলাটাই যে রাজনৈতিক ভাবে অত্যন্ত সচেতন, সে কথা বোঝানোর জন্যই মোরারজি জমানার স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা রায়বরেলীতে ইন্দিরা গাঁধীকে হারিয়ে হইচই ফেলে দেওয়া রাজনারায়ণের আখ্যানটা টেনে আনা। একই সঙ্গে এলাকার গরিমা সম্পর্কে ভিন্‌রাজ্যের অতিথিকে সচেতন করা এবং অনুচ্চারে বুঝিয়ে দেওয়া, ‘‘আপনি ঠিক জায়গাতেই এসেছেন।’’

দোহরিঘাটের একটা পৌরাণিক মাহাত্ম্যও রয়েছে। বিষ্ণু বা হরির দুই অবতার পরশুরাম এবং রামের দেখা হয়েছিল এই জনপদে। সীতার সঙ্গে বিয়ের পরে মিথিলা থেকে যখন অযোধ্যা ফিরছিলেন রাম, তখন এই জনপদেই পরশুরাম পরখ করে দেখেছিলেন যে, এই রামই সেই ব্যক্তি কি না, যিনি হরধনু ভেঙে এসেছেন মিথিলায় আয়োজিত স্বয়ম্বর সভায়। পূরাণে এমনই বর্ণিত। আর দুই হরি এখানে এসে মিলেছিলেন বলে নাম দোহরিঘাট।

আরও পডু়ন: বিরোধীদের দাবি খারিজ সুপ্রিম কোর্টে, গোনা হবে দুই শতাংশ ভিভিপ্যাটই

এলাকার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিতে গিয়ে সেই পৌরাণিক গরিমার আশ্রয় কিন্তু নিলেন না কল্পনাথরা। সে প্রসঙ্গ কারও মুখেই এল না এক বারের জন্যও। এল রাজনৈতিক গৌরবের কাহিনি। আর তার পরেই এল আক্ষেপ। ‘উন্নয়ন নিয়ে ভাবতেই রাজি নন কেউ, শুধু জাতপাত নিয়ে ব্যস্ত!’ বলছে গোটা সান্ধ্য জমায়েতটাই।

শুধু ‘গর্বের’ মউতে নয়, জাতপাত ভিত্তিক রাজনীতির এই দাপট গোটা উত্তরপ্রদেশেই সত্য এ বার। তাতেই সমস্যা বাড়ছে বিজেপির।

উত্তরপ্রদেশের প্রায় কোথাওই বিজেপি জাতপাতের নামে সমীকরণ তৈরি হতে দিতে চাইছে না এ বার। বিজেপির নেতা হন, কর্মী হন বা সাধারণ সমর্থক— প্রত্যেকেই সর্বাগ্রে ‘বিকাশ’-এর খতিয়ান তুলে ধরার চেষ্টা করছেন এখন। বিকাশ অর্থাৎ উন্নয়ন যে হয়নি, কট্টর বিজেপি বিরোধীও সে কথা জোর দিয়ে বলছেন না। কিন্তু কোথাও সে উন্নয়নের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন দলিত। কোথাও যদুবংশী বলছেন, ‘‘কী এমন মহান কাজ করেছে? উন্নয়ন করাই তো সরকারের কাজ।’’ এবং দিনের শেষে সমাজবাদীর পার্টির ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে পরিচিত যাদব ও মুসলিমরা এবং বহুজন সমাজ পার্টির অনুগামী দলিতরা বহুলাংশেই জানিয়ে দিচ্ছেন, তাঁদের ভোট যাবে বিজেপির বিরুদ্ধেই এবং তা ভাগাভাগিও হবে না, সবটা জমা হবে মহাগঠবন্ধনের খাতাতেই।

জাতপাতের সমীকরণই রাজনীতির সমীকরণ তৈরি করে উত্তরপ্রদেশে। —নিজস্ব চিত্র

আরও পড়ুন: বুথ জ্যাম, রিগিংয়ের চেনা ছবি উধাও, আরামবাগে অন্য ভোট

২০০৭ থেকে ২০১২ পর্যন্ত মায়াবতী এবং ২০১২ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত অখিলেশ ছিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। জাতীয় সড়ক তৈরির কাজ সে সময়েও বেশ কিছুটা এগিয়েছিল রাজ্যে। কিন্তু অবহেলিত ছিল জেলা ও গ্রামীণ সড়ক। ২০১৭ সালে মোদী-যোগী বিন্যাস তৈরি হওয়ার পর থেকে উত্তরপ্রদেশে সব ধরনের রাস্তাঘাট তৈরির কাজ গতি পেয়েছে। একের পর এক জাতীয় সড়ক প্রকল্পের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। কোথাও কাজ চলছে, কোথাও ইতিমধ্যেই কাজ শেষ। জেলা এবং গ্রামীণ সড়কগুলোর দ্রুত উন্নতি ঘটানো হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের প্রায় প্রত্যেকটা প্রান্তে মসৃণ ভাবে পৌঁছে যাওয়া যায় এখন। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি পেয়েছেন অনেকেই, স্বচ্ছ ভারতের লক্ষ্যে পেয়েছেন শৌচাগার। গ্রামীণ উত্তরপ্রদেশে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার কাজ এগিয়েছে বেশ দ্রুততায়।

অতএব যাদব প্রধান নন্দগঞ্জে সর্বজনীন ঠাকুরদালানের সামনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা দ্বিপ্রাহরিক জমায়েতটা একসুরে ‘ভাজপা হঠাও’-এর ডাক দিয়েও স্বীকার করছে, গত কয়েক বছরে উত্তরপ্রদেশে ‘বিকাশ’ হয়েছে। চন্দৌলি লোকসভা কেন্দ্রের প্রায় সব প্রান্তেই স্থানীয় সাংসদ তথা উত্তরপ্রদেশ বিজেপির সভাপতি মহেন্দ্রনাথ পাণ্ডের বিরুদ্ধে ক্ষোভের আঁচ টের পাওয়া গেলেও রাস্তাঘাটের উন্নতি আর ঘরে ঘরে এলপিজি সিলিন্ডার পৌঁছে যাওয়ার আখ্যান কানে আসছে। সন্ত কবীর নগরের হরিজন গ্রাম সহেড়ায় বহেনজির দলের (বিএসপি) প্রতি প্রায় ৯০ শতাংশ আনুগত্যের আঁচ মিললেও বাসিন্দারা মেনে নিচ্ছেন যে, ঘরে ঘরে শৌচাগার আর বিজলি পৌঁছে গিয়েছে। কিন্তু তার পরেও গ্রামগুলো বলছে, ভোট এ বার মহাগঠবন্ধনকেই।

মোদী বা যোগীর জমানায় উত্তরপ্রদেশের উন্নয়ন হয়েছে বলে যদি মানছেন, তা হলে ভোটটা তাঁদের বিপক্ষে কেন? আরও বেশি উন্নয়ন চেয়েছিলেন?

সহেড়ার প্রবেশমুখে দাঁড়িয়ে ভবঘুরে গোছের বৃদ্ধ শ্যামলাল বলেন, ‘‘এগুলো শৌচাগার? একটা লাথি মারুন তো দেওয়ালটায় জোরসে। নিজেই দেখে নিন দেওয়াল কতটা মজবুত।’’ শৌচাগারের জন্য টাকা এসেছে, কিন্তু স্থানীয় নেতাকে ভাগ দিয়ে যা বেঁচেছে, তাতে প্রমাণ মাপের শৌচাগার আদৌ বানানো যায় কি না, প্রশ্ন শ্যামলালের।

এসপি কর্মীদের হাতে অখিলেশের পাশাপাশি মায়বতীর ছবিও। এক বছর আগেও এই দৃশ্য কল্পনা করা যেত না উত্তরপ্রদেশে। —ফাইল চিত্র

গাজিপুরের পান দোকানির কণ্ঠস্বর আরও চড়া। ‘‘বিজেপি-কে পাঁচটা আসনের বেশি পেতে দেব না এ বার উত্তরপ্রদেশে। এ বারই শেষ। আর ফিরতে দেব না।’’ গলার শিরা ফুলিয়ে চিৎকার করছেন তিনি। আশপাশে ইতিউতি জমায়েতটার মুচকি হাসি দেখে বোঝা যায়, পান দোকানি বিজেপির নাম শুনলেই চটে যান, ওঁর ওই আগুনে মেজাজ সবারই চেনা। ছোট্ট বাজারটায় অন্য কেউই মনে করছেন না যে, বিজেপি উত্তরপ্রদেশে ৫টি আসনে নেমে আসবে। কিন্তু বিজেপি-কে ভোট দেওয়া উচিত কি না, সে প্রশ্ন এলেই তর্ক যথেষ্ট উঠছে। উন্নয়ন হয়নি? প্রশ্ন শুনেই গুমটি ছেড়ে বেরিয়ে আসেন পান বিক্রেতা। চোখ বড় বড় করে বলতে থাকেন, ‘‘হয়েছে তো, খুব উন্নয়ন হয়েছে। আমাদের গ্রামে সব ঘরে বিজলি পৌঁছে গিয়েছে। আগে ২ ঘণ্টা কারেন্ট থাকত, এখন ২২ ঘণ্টা থাকে। কিন্তু বিদ্যুতের বিল কী রকম চড়া জানেন কি? ২০ হাজার টাকা বিল এসেছে আমার ঘরে।’’

ঠিক কত দিনের বিল ২০ হাজার টাকা, বোঝার উপায় থাকে না আর। বিজেপির বিরোধী এবং সমর্থক, সকলের মধ্যেই গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়। বিদ্যুতের চড়া মূল্য চোকাতে হওয়ার যে অভিযোগটা উঠল, তাতে সামিল হয়ে যান অধিকাংশই।

বিজেপির মিছিলে মোদীর মুখোশ হাতে এক যুবক। উত্তরপ্রদেশে যুব সম্প্রদায়ের মধ্যেই মোদীর জনপ্রিয়তা বেশি। —ফাইল চিত্র

উত্তরপ্রদেশে বিজেপির উন্নয়নে তা হলে কি সুফলের চেয়ে কুফলই বেশি? রাজ্যবাসী কি ‘উন্নয়নের অত্যাচারে’ অতিষ্ঠ? ‘‘না, সব কিছুতেই আমরা অতিষ্ঠ, এমন নয়,’’—বলেন সহেড়া গ্রামের কোঠেদার (রেশন ডিলার) তথা অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী ওমপ্রকাশ রাম। দলিত গ্রামটায় তাঁর প্রভাব-প্রতিপত্তি অনেকটা মুখিয়ার মতো। ভিন্‌রাজ্যের সাংবাদিকের সামনে কোনও লুকোছাপাও নেই, আসল পরিস্থিতিটা বুঝিয়ে দেওয়ার গরজই স্পষ্ট বরং। বললেন, ‘‘বিজেপির নিচু তলার নেতাদের বিরুদ্ধে কিছু কিছু এলাকায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে ঠিকই। ইলেকট্রিক বিল বা সিলিন্ডারের দাম নিয়েও অসন্তোষ রয়েছে। কিন্তু বিজেপি-কে ভোট না দেওয়ার একমাত্র কারণ সেটা নয়।’’ তা হলে? কলাভাজার প্লেট আর চায়ের কাপটা এগিয়ে দিতে দিতে ওমপ্রকাশ বলেন, ‘‘বহেনজি এবং অখিলেশ, দু’জনেই বুঝতে পেরেছিলেন, এ বার হাত না মেলালে টিকে থাকা মুশকিল হয়ে যাবে। বিজেপি যে ভাবে প্রভাব বাড়াচ্ছিল উত্তরপ্রদেশে, তা এখনই রুখে দেওয়া না গেলে দু’দলেরই (এসপি-বিএসপি) সমস্যা হয়ে যেত। তাই দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পরস্পরের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমরাও গঠবন্ধনের পাশেই আছি। কারণ জিতুন বা হারুন, উত্তরপ্রদেশের দলিত কখনও বহেনজির সঙ্গ ছাড়বে না।’’

অর্থাৎ এসপি-বিএসপি আলাদা আলাদা লড়লে উত্তরপ্রদেশে আবার চতুর্মুখী লড়াই হত। সে লড়াইয়ে বিজেপি ফের সুবিধা পেয়ে যেত। এবং ২০১৪ ও ২০১৭-র পরে এ বারও নির্বাচনী বিপর্যয়ের মুখে পড়লে এসপি-বিএসপি অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়ে যেত। সেই পরিস্থিতি এড়াতেই হাত মিলেয়েছেন মায়া-অখিলেশ আর সাফল্যের সঙ্গে সে সিদ্ধান্তের শরিক করে নিতে পেরেছেন কর্মী-সমর্থকদেরও। মায়া অনুগামী দলিত যে ভাবে চিরাচরিত আস্থার জায়গা থেকে নড়তে চাইছেন না, যাদব এবং মুসলিমও ঠিক সে ভাবেই মুলায়ম-অখিলেশের পাশে না দাঁড়ানোর কথা ভাবতে পারছেন না। কারণ উত্তরপ্রদেশে বিএসপি-র সঙ্গে দলিতের এবং এসপির সঙ্গে যাদব-মুসলিমের গাঁটছড়া শুধু রাজনৈতিক নয়, সামাজিকও। সামাজিক ভাবেই বহেনজি বা নেতাজির নিজের নিজের সম্প্রদায় তাঁদের পাশে।

কিন্তু এসপি এবং বিএসপি-র মধ্যে গত দু’দশক ধরে প্রবল তিক্ত সম্পর্কের ইতিহাসও তো রয়েছে। শুধুমাত্র বিজেপি-কে রোখার তাগিদে সেই তিক্ততা রাতারাতি উধাও হয়ে যাবে? যাদবের ভোট মায়ার খাতায় বা দলিতের ভোট অখিলেশের ঝুলিতে জমা হবে? বহেনজির একনিষ্ঠ অনুগামী ওমপ্রকাশ বলেন, ‘‘জমা হবে। তিক্ততা এই মুহূর্তে অনেকটা কম এবং তিক্ততা কমানোয় অখিলেশ যাদবের ভূমিকা অনেকটাই।’’ কেন? কী এমন করলেন অখিলেশ? ওমপ্রকাশ বললেন, ‘‘বহেনজি যে অনেক সিনিয়র রাজনীতিক, তাঁকে যে উঁচু আসন দেওয়া উচিত, সেটা অখিলেশ বুঝেছেন। প্রকাশ্যে বহেনজির পা ছুঁয়েছেন তিনি, যে কোনও জনসভায় বহেনজির প্রতি সম্মান দেখিয়েছেন। ফলে আপাতত দু’দলের কর্মীদেরও একসঙ্গে কাজ করতে কোনও সমস্যা হচ্ছে না।’’

যাদবরা বরাবরই অত্যন্ত প্রভাবশালী উত্তরপ্রদেশে। দলিতের উপরে অত্যাচারের যে সব আখ্যানের সাক্ষী উত্তরপ্রদেশ হয়েছে বছরের পর বছর ধরে, সে সব আখ্যানে অভিযোগের আঙুল যদুবংশীদের দিকেও উঠেছে বিভিন্ন সময়ে। কিন্তু মায়াবতীর প্রতি অখিলেশের সম্মান প্রদর্শন আপাতত মুছে দিয়েছে অনেক অপমান। ফলে যাদব-মুসলিম-দলিত সমাজের সিংহভাগ দাঁড়িয়ে গিয়েছে গঠবন্ধনের ছাতার তলায়। জনসংখ্যার এত বড় একটা অংশকে একত্র করার মতো সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং উত্তরপ্রদেশের মাটিতে এর আগে কখনও জন্ম নিয়েছে কি না, তা নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।

অতএব বিজেপি বুঝে গিয়েছে, শুধু উন্নয়নের বুলিতে চিঁড়ে ভিজছে না। জাতপাতের অঙ্ক বিজেপি-কেও কষতে হচ্ছে। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, কায়স্থ, ঠাকুর, ভূমিহার, কুমার, কুর্মি, নিষাদ-সহ নানা জাতির ভোট যে বিজেপির দিকেই যাবে, সে বিষয়ে নেতারা আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু যাদব-মুসলিম-দলিতের সব ভোট এক হয়ে গেলে জনসংখ্যার বাকি অংশ কি বিজেপির আগের বারের পারফরম্যান্সের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারবে? সন্দেহ বিস্তর। তাই এসপি-বিএসপির ভোটব্যাঙ্কে ফাটল ধরানোর আপ্রাণ চেষ্টা করতে হচ্ছে যোগী আদিত্যনাথ, কেশবপ্রসাদ মৌর্য বা মহেন্দ্রনাথ পাণ্ডেকে। ‘উন্নয়নের’ নামে, ‘আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির’ নামে, ‘সুরক্ষা এবং মজবুত ভারতের’ নামে আরও একবার মোদী সরকার গড়ার ডাক দিচ্ছেন তাঁরা। সে ডাকে সাড়া দিয়ে জাতপাতের বেড়া ডিঙিয়ে কিছু ভোট মোদীর ঝুলিতে জমা হতে পারে বলে বিজেপির আশা। তবে নিশ্চয়তা একেবারেই নেই।

মোদীর জন্য আশার আলো উত্তরপ্রদেশে কিছুটা জিইয়ে রাখছেন নতুন ভোটাররাও। যাদব বা দলিতের ঘরেও তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মোদীর নামে জয়ধ্বনি শোনা যাচ্ছে কোথাও কোথাও। কিন্তু সেই সংখ্যা কি আদৌ এত বড় যে, মায়া-অখিলেশের অভূতপূর্ব সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংকে ব্যর্থ করে দেবে? বিজেপি কর্মীরাও খুব জোর দিয়ে তেমনটা বলতে পারছেন না। একটু হতোদ্যম হয়ে পড়ার আভাস দিয়েই বরং বলছেন, ‘‘এত উন্নয়নের পরেও যদি সেই জাতপাতের নামেই ভোট দেন মানুষ, তা হলে আর দেশটা এগোবে কী ভাবে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE