—ফাইল চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বারবার নির্বাচনী বিধি ভাঙছেন বলে অভিযোগ করেছে কংগ্রেস। নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েও কোনও লাভ হচ্ছে না, এই অভিযোগ তুলে এ বার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হল তারা। অভিযোগ, মোদী-শাহ বারবার বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করছেন। নির্বাচন কমিশনের বারণ সত্ত্বেও সেনাবাহিনীকে রাজনীতির প্রচারে ব্যবহার করছেন। ঘটনাচক্রে এ দিনই কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, আগামিকাল এই অভিযোগ নিয়ে বৈঠকে বসবেন কমিশনের সদস্যেরা।
কংগ্রেস সাংসদ সুস্মিতা দেবের দায়ের করা এই মামলা নিয়ে মঙ্গলবার বিশদ শুনানিতে রাজি হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আজ প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বেঞ্চে সুস্মিতার কৌঁসুলি অভিষেক মনুসিঙ্ঘভি এই বিষয়টি উল্লেখ করেন। প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘‘কারা আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন?’’ মনুসিঙ্ঘভি উত্তর দেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ।’’ তা শুনে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘স্পষ্ট করে সেটা বলছেন না কেন!’’
কংগ্রেস সুপ্রিম কোর্টে মামলা করার পাশাপাশি আজও কমিশনের কাছে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ জানিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি বারাণসীতে টিভি চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে নরেন্দ্র মোদী বালাকোট অভিযানের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। ‘আমরা গিয়ে সন্ত্রাসবাদীদের মেরে এসেছি’ বলে দাবি করেছেন।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
তিন সপ্তাহ আগে নরেন্দ্র মোদী মহারাষ্ট্রের লাতুরে গিয়ে সরাসরি জওয়ানদের নামেই ভোট চেয়েছিলেন মোদী। তিনি বলেছিলেন, ‘‘ভোটারেরা যেন তাঁদের ভোট পুলওয়ামায় নিহত জওয়ান, বালাকোট অভিযানে অংশগ্রহণকারী জওয়ানদের উৎসর্গ করেন।’’ অভিযোগ পেয়ে কমিশন প্রথমে রাজ্য থেকে রিপোর্ট চেয়ে পাঠায়। সূত্রের খবর, সেই রিপোর্টে মোদী নির্বাচনী বিধি ভেঙেছেন বলেই ইঙ্গিত ছিল। এরপর কমিশন পুরো বক্তৃতার রিপোর্ট চেয়ে পাঠায়। কিন্তু চার দফা ভোটগ্রহণ হয়ে গেলেও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
আজ উপনির্বাচন কমিশনার চন্দ্রভূষণ কুমার বলেন, ‘‘কাল সকালে নরেন্দ্র মোদী, রাহুল গাঁধী ও অমিত শাহের বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধি ভাঙার যে অভিযোগ উঠেছে, তা নিয়ে বৈঠকে বসবে কমিশন।’’ কেন এত দিন ব্যবস্থা হয়নি তা নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে চন্দ্রভূষণ বলেন, ‘‘সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আইনি দিক, সংবাদমাধ্যম ও আইন-শৃঙ্খলা যাঁরা দেখেন, তাঁদের মতামত নেওয়া হয়। ৩০ এপ্রিল এই বৈঠক হবে বলে আগেই ঠিক ছিল।’’
সুস্মিতা অভিযোগ তুলেছেন, পুলওয়ামায় জওয়ানদের উপরে হামলা, বালাকোটে বায়ুসেনার প্রত্যাঘাত, পাইলট অভিনন্দনের পাকিস্তান থেকে ঘরে ফেরার মতো বিষয় ভোটের প্রচারে ব্যবহার করা যাবে না বলে নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট করে দিয়েছে। তা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী, অমিত শাহ বারবার এই ধরনের প্রসঙ্গ ভোটের প্রচারে তুলে আনছেন। গুজরাতে ২৩ এপ্রিল ভোটগ্রহণের দিন নরেন্দ্র মোদী আইন ভেঙে জনসভা করেছেন বলেও তাঁর অভিযোগ। তাঁর দাবি, সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন কমিশনকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিক। কমিশনকে চল্লিশ বার অভিযোগ জানিয়েও কোনও লাভ হচ্ছে না।
কমিশনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে সুস্মিতা বলেন, ‘‘আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে নভজ্যোত সিংহ সিধু, মায়াবতীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এমনকি উত্তরপ্রদেশের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকেও প্রচার থেকে নির্দিষ্ট সময় বিরত রাখা হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের বেলায় কমিশন চুপচাপ। এ কেমন কথা! আইনের কাছে সবাই সমান। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের কাছে দেখা যায়, মোদী-শাহের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা। তা মানা যায় না।’’
আদালতে মনুসিঙ্ঘভি যুক্তি দেন, সুপ্রিম কোর্ট আগেও নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে। এর আগে তৃণমূল কংগ্রেসের মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে মন্তব্যের জন্য বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy