Advertisement
E-Paper

অমিতের বিক্রমেও চিন্তা অতীত

গুলবার্গ সোসাইটি। ২০০২ সালে গুজরাতে হিংসায় উন্মত্ত জনতার মাসুল গুনেছেন এ সোসাইটির লোকজন। বেশির ভাগ ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদ এহসান জাফরিকে।

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:১১
সইদ খানের (সামনে) সঙ্গে তাঁর ছেলে ফিরোজ খান। নিজস্ব চিত্র

সইদ খানের (সামনে) সঙ্গে তাঁর ছেলে ফিরোজ খান। নিজস্ব চিত্র

একটি বন্ধ হয়ে যাওয়া সিনেমা হলের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।

আধ ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে।

ফোনে এখানেই অপেক্ষা করতে বলেছিলেন। খানিক পরে ফোন এল, “গাড়ির নম্বর কত?... ধীরে ধীরে একশো মিটার এগিয়ে আসুন….. থামুন…. গাড়ি থেকে বেরোন… উপরে তাকান... ঠিক আছে, চলে আসুন তিন তলায়।”

ভোটে লড়ছেন এক প্রার্থী। তাঁরও এমন নজর-তল্লাশি! তা-ও ভরদুপুরে। খাঁ খাঁ রোদ্দুরে।

তিন তলায় গিয়ে বুঝলাম আতঙ্কের শিকড়টি গেঁথে কত গভীরে। আমাকে ঘরে বসতে দিয়েই দরজা বন্ধ করে দিলেন বাপ-বেটা। বাবা সইদ খান, ছেলে ফিরোজ খান। বাইরে এক পুলিশ কনস্টেবল থাকেন পাহারায়। আদালতের নির্দেশে। তাতেও স্বস্তি নেই। সতেরো বছর আগের কথা মনে করলে এখনও শিউরে ওঠেন। নতুন আগন্তুককে ভরসা করতেও সময় নেন। সতেরো বছর যেন সদ্য সতেরো দিন আগের কথা।

বিড়ি ধরালেন সইদ খান। আগন্তুককে জল দিয়েই গড়গড় করে স্মৃতিতে হাঁটলেন: “আমাদের বাংলো নম্বর ছিল ১৮। আর এহসান জাফরির ১৯। ২০০২ সাল, ২৮ ফেব্রুয়ারি। সকাল দশটায় পাথর মারা শুরু হল সোসাইটিতে। দুপুর গড়াতেই ত্রিশূল, তরোয়াল হাতে…।”

গুলবার্গ সোসাইটি। ২০০২ সালে গুজরাতে হিংসায় উন্মত্ত জনতার মাসুল গুনেছেন এ সোসাইটির লোকজন। বেশির ভাগ ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদ এহসান জাফরিকে। অনেকের শরীর পাওয়া গিয়েছে, অনেকে নিখোঁজ। তাঁদেরও এখন মৃত ধরে হিংসার বলি ধরা হয় ৬৯ জন।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

নিজের পরিবারের ১৫ জন সদস্যের মধ্যে ১০ জনকে চোখের সামনে মরতে দেখেছেন সইদ। মা, স্ত্রী, দাদা, ভাইয়ের বাচ্চারাও। আগুনের ধোঁয়ায় বেহুঁশ হয়ে প্রাণে বেঁচেছেন। প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন দুই ছেলেও। ইমতিয়াজ আর ফিরোজ। ফিরোজ সে দিনই সুরাত গিয়েছিলেন এহসান জাফরির একটি চিঠি নিয়ে। দুই ছেলেই এ বারের ভোটে প্রার্থী। আর ফিরোজ লড়ছেন গাঁধীনগর আসন থেকে। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের বিরুদ্ধে।

“যখন শুনলাম লালকৃষ্ণ আডবাণী নন, অমিত শাহ ভোটে লড়বেন, আমিও ভোটে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলাম,” বলছেন ফিরোজ, “মাত্র দেড় লক্ষ টাকা হাতে নিয়ে লড়ছি। জানি, টক্কর দেওয়া যাবে না। ঘরে ঘরে গিয়ে বলছি, ভোট দিন। আমাদের সুবিচার চাই।” এহসান জাফরি হত্যা মামলায় তাঁর স্ত্রী জাকিয়া জাফরি এখনও আদালতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। নরেন্দ্র মোদী তখন ছিলেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী। ঘটনার তদন্তে নেমে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) অবশ্য মোদীকে ক্লিনচিট দিয়েছে। কিন্তু জাকিয়া তার বিরুদ্ধেও আবেদন করেছেন। আর ফিরোজের বাবা আর ভাই এ মামলায় সাক্ষীও।

গাঁধীনগরে লালকৃষ্ণ আডবাণীকে সরিয়ে প্রথম বার লোকসভা ভোটে লড়ছেন অমিত শাহ। গোটা শহরে আডবাণীর চিহ্নটুকু নেই। শুধুই মোদীর পেল্লায় পোস্টার। বহরে-আড়ম্বরে বিজেপির ধারকাছেও কেউ তেমন নেই। তবু ২০০২-এর অতীতই এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে বিজেপি সভাপতিকে। পথে-ঘাটে অমিত-বিক্রমের ছাপও স্পষ্ট। তবু ধন্ধ জাগালেন বিজেপিরই এক নেতা। তাঁর সঙ্গে অনেক দিনের পরিচয়। প্রথমেই বললেন, “নাম না ছাপলে একটি কথা বলি?” বলুন না! “কখনও ভেবে দেখেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণীর সভা কেন খালি যাচ্ছে? কেনই বা লোক হচ্ছে না বলে মুখ্যমন্ত্রীর সভা বাতিল করতে হচ্ছে?”

জমি খসছে? পাল্টা প্রশ্ন করতেই বেশ একটা রহস্যময় মুখ করে আরও একটি প্রশ্ন করে ফেললেন বিজেপি নেতাটি— “আগে লালকৃষ্ণ আডবাণী সকালে দিল্লি থেকে আসতেন, একটি রোড-শো করতেন, মনোনয়ন পেশ করে বিকালে দিল্লি ফিরে যেতেন। আসন এতটাই নিরাপদ ছিল। কখনও ভেবেছেন, অমিত শাহ, যাঁর এত প্রবল পরাক্রম, তাঁকে কেন গাঁধীনগরে বারবার রোড-শো করতে হচ্ছে? আজ প্রচারের শেষ দিনেও‌ এত খাটতে হচ্ছে? কাল গভীর রাত পর্যন্ত বিজেপি দফতরে অমিত শাহের স্ত্রী, পীযূষ গয়ালদের কেন মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে হল?”

ফিরতি পথে এই প্রশ্নই ভাবাচ্ছে। হঠাৎ চোখে পড়ল বিজেপির সারি সারি পতাকা, শামিয়ানা। তার পিছনে এক দোকানে অমিত শাহের নামে গুজরাতিতে কিছু লেখা। তা হলে কী নরেন্দ্র মোদীর মতো অমিত শাহের নামেও বিক্রি হচ্ছে পণ্য? কৌতূহল নিয়ে দোকানে ঢুকেই বুঝলাম, ভুল করেছি। এ তো রূপো, পিতলের দোকান। দোকানের মালিকের নাম অমিত শাহ। কিন্তু সে অমিত শাহের ক্ষোভও কম নয়। বললেন, “পাঁচ বছরে যদি ঠিকঠাক কাজ করতেন, তা হলে কী আর নরেন্দ্র মোদীকে ভোট চাইতে হত? করলে তো কাজই কথা বলত। আমি তো ঠিক করেছি, ‘নোটা’য় ভোট দেব।”

Lok Sabha Election 2019 Amit Shah Gujrat Riot BJP L K Advani
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy