কনকদুর্গা, বিন্দু এবং (ডান দিকে) কে পি জয়সল। —নিজস্ব চিত্র।
প্রথম দর্শনে একটু যেন অচেনা! কোঝিকোড় থেকে পালাক্কাড যাওয়ার হাইওয়ের উপরে এত নরেন্দ্র মোদীর মুখ! একটি মাত্র বিধানসভা আসন ছাড়া কোনও নির্বাচনে সাম্প্রতিক কালে যে রাজ্য বিজেপিকে আশ্রয় দিতে চায়নি, সেখানেও! বিস্ময়ের চটকা ভাঙিয়ে দিলেন ট্রমা সেন্টারের কর্মীরা। দু’দিন আগে প্রধানমন্ত্রী এসেছিলেন কোয়ম্বত্তূরে। তামিলনাড়ু-কেরল সীমানা ঘেঁষা এলাকায় তাই তারই ‘ট্রমা’ রয়ে গিয়েছে! মশকরার সুরে বলছিলেন তাঁরা।
মশকরা থাক। কোঝিকোড় ট্রমা সেন্টারের সেই বিখ্যাত কর্মী কোথায়? আট মাস আগে ফুঁসে ওঠা নদীতে দুলতে থাকা নৌকোয় ত্রস্ত মহিলাদের তোলার জন্য জলে শুয়ে নিজের পিঠ পেতে দিয়েছিলেন যিনি? জল নেমে গিয়েছে অনেক দিন। জানা গেল, মৎস্যজীবীর সাধারণ জীবনেই ফিরে গিয়েছেন কে পি জয়সল। মলপ্পুরমে তাঁর আদি ঠিকানায়।
মলপ্পুরমের চাপ্পাডির সাধারণ বাসিন্দার অসাধারণ কীর্তি তাঁকে রাতারাতি খ্যাতির আলোয় নিয়ে এসে ফেলেছিল। মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন একাধিক অনুষ্ঠানে জয়সলের কাহিনি বলে এসেছেন। জয়সল জানাচ্ছেন, তাঁর সেই ‘মানবিক আচরণে’র স্বীকৃতির জন্য নতুন ঘর মিলেছে সরকারি বদান্যতায়। মৎস্যজীবীদের নতুন আবাস। জয়সলের কথায়, ‘‘সে দিনও আমি কিন্তু একা কিছু করিনি। আমাদের টিম ছিল। গোটা মৎস্যজীবী সম্প্রদায় বন্যার সময়ে যা কাজ করেছে, তার জন্যই নতুন আবাস তৈরি করে দেওয়য়া হয়েছে।’’ এখন তা হলে মাছ ধরাই কাজ? জয়সল বলছেন, রুটি-রুজি মাছ ধরাই। তবে সেই ‘ট্রমা সেন্টারে’র হয়ে ডিজাস্টার রিলিফ টিমে এখনও তিনি আছেন। ‘‘ডাক পড়লে যাই। প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ শিখেছিলাম তো।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
‘ট্রমা সেন্টারে’র কাজ করে জয়সল যখন মাথার উপরে নতুন ছাদ পেয়েছেন, এই মলপ্পুরমেরই অন্য বিন্দুতে যন্ত্রণায় শিউরে আছেন আর এক জন। তিনিও ছিলেন খবরের শিরোনামে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে হিন্দুত্ববাদী ও ‘পরম্পরাপন্থী’দের বিক্ষোভ এড়িয়ে শবরীমালা মন্দিরে প্রথম মহিলা দর্শনার্থী হিসেবে ঢুকেছিলেন কনক দুর্গা। মন্দিরে সেই ঢোকা ইস্তক নিজের ঘরে ঢোকা দুরূহ হয়ে গিয়েছে তাঁর কাছে। পরিবারের হাতেই আক্রান্ত, অসম্মানিত হয়ে বেরিয়ে আসতে হয়েছে। বিশ্বস্ত কিছু সঙ্গীদের নিয়ে অঙ্গনওয়াড়ির কাজে এখন ঘুরে বেড়ান নানা জায়গায়। সরকারের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় তাঁর সঙ্গে আছে।
তবে জীবন আর আগের মতো নেই মোটেও!
আয়াপ্পা দর্শনে কনক দুর্গার সঙ্গেই ছিলেন বিন্দু। তিনি অবশ্য সরাসরি বাম রাজনীতি করে আসা মুখ, পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার অভিজ্ঞতাও বেশি। বিন্দু থাকেন কোঝিকোড়ে। তাঁর সহায়তা ছাড়া দুর্গার হদিশ পাওয়া এ বার অসম্ভব ছিলই বলা যায়। ‘‘খুব বিপদে আছে মেয়েটা।’’ বলছিলেন বিন্দু। আপ্পাডিপুরমে দুর্গার বাড়িতে ঢুকে যেতে নিষেধ ছিল বিন্দুরই। যোগাযোগ হতে সহকারীর মাধ্যমে দুর্গা শুধু এটুকুই বললেন, ‘‘আপাতত আমি ত্রিশূরে। রাজনীতির মধ্যে আমি নেই। আপ্পাডিপুরমে কয়েক দিন পরে ফিরতে পারি। কিন্তু ওখানে কাউকে বলবেন না প্লিজ যে, আমার খোঁজে এসেছেন।’’
এক জেলার দুই ধারে দু’টো জীবন। খবরের শিরোনাম এক জনকে নতুন ঘর দিয়েছে। অন্য জনকে করে দিয়েছে ঠাঁইনাড়া। জীবন বটে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy