বৈশালী ইয়েডে। ছবি টুইটারের সৌজন্যে।
২৮ বছরেই হারিয়েছিলেন স্বামীকে, সঙ্গে দুটো ছোট্ট মেয়ে। প্রায় সদ্যজাত ছোট মেয়েকে নিয়ে তখন বাবা-মায়ের বাড়িতে বৈশালী ইয়েডে। অক্টোবর মাসের এক দুপুর। বৈশালীর স্বামী সুধাকর ইয়েডে তখন তুলোর খেতে অন্যমনস্ক হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কীটনাশক খেয়েছিলেন তিনি। ফসল হয়নি সেভাবে। বিস্তৃত খেতের মাঝেই পড়েছিল বৈশালীর স্বামীর নিথর দেহ। মহারাষ্ট্রের বিদর্ভের কৃষক বৈশালীর স্বামীও বেছে নিয়েছিলেন সেই আত্মহত্যার পথ। বিপুল ঋণের বোঝা, বাড়িতে স্ত্রী, ছোট দুই মেয়েকে রেখে চলে গিয়েছিলেন তিনি। প্রত্যন্ত গ্রামের বিধবা সেই বৈশালীই ঘুরে দাঁড়ালেন। শুধু তাই নয়, চলতি বছরে লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি।
একটা সময়, সাদা সোনার রাজ্য বলে পরিচিত ছিল মহারাষ্ট্র। সেই মহারাষ্ট্রের বিদর্ভেরই ইয়াভতমল-ওয়াসিম কেন্দ্র থেকে লড়াই করছেন বৈশালী। ২০১১ সালে বিদর্ভ যে কৃষকদের আত্মহত্যার কারণে শিরোনামে এসেছিল, বৈশালীর স্বামী সেই ১৪০০০ কৃষকের একজন। ২০১৫ সালেও ১২,৬০০ কৃষকের আত্মহত্যার রিপোর্ট প্রকাশিত হয়।
বৈশালীকে সাহায্য করছেন স্থানীয় এক বিধায়ক ওমপ্রকাশ বাচ্চু কাড়ু। প্রহার জনশক্তি পার্টির হয়েই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বৈশালী। ইয়াভতমলের কালাম তহসিলের রাজুর গ্রামের বাসিন্দা বৈশালী লড়াই করতে চাননি।
আরও পড়ুন: ‘যোগী আদিত্যনাথ’-এর সঙ্গে ব্রেকফাস্ট সারলেন অখিলেশ!
ওমপ্রকাশই লড়াই করতে বলেছিলেন। তবে হতদরিদ্র ঘরের বিধবা বৈশালী ভেবেছিলেন নির্বাচনে লড়তে অনেক টাকার প্রয়োজন। পরবর্তীতে রাজি হন। জমা দেন মনোনয়ন। জেদ আর আত্মবিশ্বাস নিয়েই ৬০টি জনসভা করে ফেলেছেন বৈশালী। জলের অভাব থেকে মদের নেশা, প্রতিটি ইস্যুই উঠে এসেছে তাঁর প্রচারে।
আরও পড়ুন: বিবাহিতার সঙ্গে পালালেন যুবক, গাছে বেঁধে মারধর স্বামীর
বৈশালীর মা চন্দ্রকলা ধোতে প্রতিটি বাড়ি যাচ্ছেন, মেয়ের হয়ে প্রচার চালাতে। বাবা মণিকরাও উপদেষ্টার কাজ করছেন, এটা বললে ভুল হবে না। কারণ একটা ভাঁজ করা কাগজে প্রতিটি বুথের নথিভুক্ত ভোটারদের নামও লেখা রয়েছে তাঁর কাছে।
বৈশালীর আদি বাড়ি ডোঙারখারদা গ্রামের নির্বাচিত প্রতিনিধি বলেন, ‘‘এ রকম আগে কখনও হয়নি। তাই মানুষের আবেগ কাজ করছে।’’ বৈশালীর বিরুদ্ধে লড়ছেন শিব সেনা ও কংগ্রেসের দুই প্রার্থী। নির্বাচনে জেতা হয়তো কঠিন হবে, তবুও দিনে দু’ বেলা খেতে কাজ করে রোজগার করা হতদরিদ্র স্বামীহারা ২৮ বছরের তরুণীই একটুকরো স্বপ্ন গ্রামের মানুষদের কাছে।
আরও পড়ুন: শেষ মুহূর্তে মেশিন বদলানোর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে, পাহারা দেওয়ার ডাক মমতার
বৈশালীর কথায়, ‘‘আমি মূল প্রার্থীদের থেকে ভোট বেশি টানবই। মোদী বলেছেন, উনি কাজ করেছেন, কিন্তু রাস্তা ছাড়া আর তো কিছু করতে দেখিনি’’। তিনি বলেন, ‘‘আমার জন্যই মহিলা কৃষকরা খানিকটা হলেও সাহস পাচ্ছেন। তাই হারার ভয় আমি পাইনা।’’
মরাঠি সাহিত্য সম্মেলনে প্রবীণ সাহিত্যিক নয়নতারা সেহগলের আমন্ত্রণ প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর উদ্বোধনী বক্তৃতার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এই বৈশালীকে। তার পর থেকেই প্রতিবাদের মুখ হয়ে উঠেছেন এই তরুণী।
আরও পডু়ন: বিদ্যাসাগরের পঞ্চধাতুর মূর্তি বানিয়ে দেব, বললেন মোদী, তোমারটা থোড়াই নেব! পাল্টা মমতার
কৃষক আন্দোলনের মুখ যোগেন্দ্র যাদব বলেন, দেশের কৃষকদের অবস্থা শোচনীয়। মোদী সরকারের উপর ক্ষোভ ক্রমশই বাড়ছে। সেই ক্ষোভ ভোটের বাক্সে প্রতিফলিত হবে বলেই আশা রাখি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy