Advertisement
E-Paper

বরুণের ভরসা সেই মোদীই

পিলিভিটের রাস্তায় কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, গত পাঁচ বছরে সুলতানপুরে টিকি দেখা যায়নি বরুণের। কাজ হয়নি কিচ্ছু। সেখানে হারের ভয়েই তাই পিলিভিটের ‘নিরাপদ আসন’ ছেলেকে ছেড়ে দিয়েছেন মা। নিজে লড়তে গিয়েছেন সুলতানপুরে।

ইন্দ্রজিৎ অধিকারী

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৯ ০২:৫৬
বাড়ির সামনে শঙ্করলালের মেয়ে। পিলিভিটে। নিজস্ব চিত্র

বাড়ির সামনে শঙ্করলালের মেয়ে। পিলিভিটে। নিজস্ব চিত্র

ইনিও গাঁধী।

তবে ‘চৌকিদার চোর’ স্লোগান তোলা তো দূর, টুইটারে এঁর নামের আগে বরং চৌকিদার।

চৌকিদার বরুণ গাঁধী।

গত বারের জেতা আসন সুলতানপুর ছেড়ে এ বার পিলিভিটের প্রার্থী। ২০০৯ সালে যেখানে জিতে প্রথম সংসদে পা রেখেছিলেন তিনি। ১৯৮৯ থেকে এই আসন প্রায় নাগাড়ে তাঁর মা মেনকা গাঁধীর ‘কব্জা’য়। পরে কার্যত ‘উত্তরাধিকার সূত্রে’ বরুণের। তা নিয়ে অবশ্য বিজেপি পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ তোলেনি। পদবি গাঁধী হওয়া সত্ত্বেও!

এমনিতে হিসেব সোজা। গত বার এই আসনে ২ লক্ষ ৩৯ হাজার ভোট পেয়েছিল সমাজবাদী পার্টি। বহুজন সমাজ পার্টি ১ লক্ষ ৯৬ হাজার। মাত্র ২৯ হাজার ভোট জুটেছিল কংগ্রেসের কপালে। সেখানে ৫ লক্ষ ৪৬ হাজার ভোট পেয়েছিলেন মেনকা। ২০০৯ সালেও বরুণ এখান থেকে জিতেছিলেন এসপি, বিএসপি এবং কংগ্রেসের মোট ভোটের থেকে বেশি ব্যালট পেয়ে। ফলে সে দিক থেকে দেখলে বরুণের পিলিভিট জয় স্রেফ সময়ের অপেক্ষা হওয়া উচিত। কিন্তু রাজনীতি কবেই বা সরল পাটিগণিতের নিয়ম মেনেছে?

পিলিভিটের রাস্তায় কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, গত পাঁচ বছরে সুলতানপুরে টিকি দেখা যায়নি বরুণের। কাজ হয়নি কিচ্ছু। সেখানে হারের ভয়েই তাই পিলিভিটের ‘নিরাপদ আসন’ ছেলেকে ছেড়ে দিয়েছেন মা। নিজে লড়তে গিয়েছেন সুলতানপুরে।

প্রায় প্রতিটি জনসভায় এ কথা নিয়ম করে বলছেন এসপি-বিএসপি জোটের প্রার্থী হেমরাজ বর্মা। বরুণকে বিঁধছেন শুধু ভোট-মরসুমে পরিযায়ী পাখির মতো পিলিভিটে আসা নিয়ে। এ নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে বলেই সকাল আটটা থেকে শুরু করে অন্তত রাত ৮টা-৯টা পর্যন্ত এলাকা চষে বেড়াতে হচ্ছে বরুণকে। দিনে জনসভা ২০ থেকে ২৫টি। আর প্রায় প্রতি জায়গায় বক্তৃতার বড় অংশ বরাদ্দ করতে হচ্ছে পিলিভিটে ফেরার কারণ বলার জন্য। যেন কৈফিয়ৎ।

একে তো এ বার বিজেপিকে হারানোর পণ করে আপাতত শত্রুতা ভুলে জোট বেঁধেছে এসপি-বিএসপি। প্রার্থী দেয়নি কংগ্রেস। তার উপরে এলাকায় মেনকা ও বরুণের বিরুদ্ধে ক্ষোভ চোখে পড়ার মতো। বরুণের ঔদ্ধত্য, চড়া মেজাজ, খামখেয়ালিপনা, কথা শুনতে না-চাওয়া পছন্দ করেন না অনেক কট্টর বিজেপি সমর্থকও।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

পুরোপুরি পাশে নেই বিজেপির বিখ্যাত ভোট-মেশিনারিও। এ বার যাতে স্থানীয় কাউকে প্রার্থী করা হয়, তার জন্য দলের কাছে দরবার করেছিলেন এলাকার নেতারা। বরুণকে ফের টিকিট দেওয়া তাঁদের খুশি করেনি। স্থানীয় নেতাদের দাবি, বরুণের উপরে খুব খুশি নন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও। কারণ, গত ৫-৭ বছরে তিনি কোথায় কী করছেন, তা নিয়ে বিস্তর ধোঁয়াশা তৈরি করেছেন বরুণ নিজেই। কখনও ভারতে গ্রামের দুর্দশা নিয়ে বই লিখে দলকে অস্বস্তিতে ফেলেছেন, তো কখনও জোর জল্পনা শোনা গিয়েছে তাঁর কংগ্রেসে যোগ দেওয়া নিয়ে। বরুণ হয়তো দাবি করেছেন, বিজেপি ছাড়লে রাজনৈতিক সন্ন্যাস নেবেন তিনি। বলেছেন, যে পরিবারে তাঁর মায়ের অপমান হয়েছে, সেখানে কখনও না-ফেরার কথা। কিন্তু তাতে দল কতটা বিশ্বাস করেছে, তা বলা শক্ত। তাই এ বার তাঁর ভোট প্রচারে প্রধানমন্ত্রী তো দূর, পিলিভিটে আসেননি প্রায় কোনও বড় বিজেপি নেতাই।

প্রায় আড়াই বছর আগে প্রধানমন্ত্রীর কথা মেনে এখানকার পোন্ড্রি গ্রাম দত্তক নিয়েছিলেন মেনকা। সেখানে ঢুঁ মেরে দেখা গেল, কাজ নিয়ে ক্ষোভে ফুটছেন সাধারণ মানুষ। রামগোপাল, কিষণ কুমার, পেয়ারে লালদের অভিযোগ, হাপিত্যেশ করে থেকেও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকা তাঁরা পাননি। গ্রামের প্রধান টাকা চাওয়ায় শৌচালয় তৈরি হয়েছে বড়জোর ১০-১৫ শতাংশ বাড়িতে। সারা গ্রামে কোনও পাকা নালা নেই। বিদ্যুতের খুঁটি বসেছে। কিন্তু রাস্তার আলো জ্বলে না দেড়-দু’মাস পর থেকেই। সর্বত্র জঞ্জালের স্তূপ যেন বিদ্রুপ করছে স্বচ্ছ ভারতের স্লোগানকে। একটা জলের ট্যাঙ্ক হওয়ার কথা ছিল। তারও কাজ এগোয়নি সে ভাবে। বাড়ির মাথার উপর দিয়ে যাওয়া বিদ্যুতের তারে হাত ঠেকে মরতে মরতে বেঁচেছেন রাম বাহাদুর। সমস্যার কথা বলতে গিয়েছিলেন বরুণকে। তিনি কানে তোলেননি। কাঞ্চনলাল, রামকিশোর, দীনেশ কুমাররা বলছিলেন, ‘‘দত্তক নেওয়ার পরে সম্ভবত এক বারই এসেছেন মেনকা। তা-ও মিনিট কয়েকের জন্য। সমস্যার কথা বলব কাকে?’’

এ পর্যন্ত পড়ে মনে হতে পারে এ বার তবে পিলিভিটে ইন্দ্রপতনের পালা। আবারও গোল্লা। পথ আগলে দাঁড়িয়ে খোদ চৌকিদার। এত ক্ষণ অভিযোগ জানানো মুখগুলো মুহূর্তে বদলে যাচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর নাম শুনে। তাঁরা স্পষ্ট বলছেন, কাজ কিচ্ছু হয়নি। কষ্টের শেষ নেই। কিন্তু ভোট পদ্মেই পড়বে। কারণ হিন্দুত্ব আর মোদীর প্রতি তাঁদের অগাধ আস্থা। উমর সিংহ, প্রসাদী লালদের বক্তব্য, ‘‘সব ভুলে মোদীকেই ভোট দেব। ওঁর প্রতিটা কথা আমাদের ভাল লাগে।’’

আর একটা প্রচ্ছন্ন গর্বও চোখে পড়ল। তা হল, এত দিন ধরে মেনকা আর এখন বরুণের কেন্দ্র বলেই পিলিভিটকে এক ডাকে চেনেন অনেকে। অনেকটা রাজীব গাঁধী-রাহুল গাঁধীর অমেঠীর মতো। এই ছোট্ট জনপদের কাছে তা নেহাত কম নয়।

বহু দিন ধরে আবাস যোজনায় বাড়ি হওয়ার আশায় থেকেও টাকা আসেনি শঙ্করলালের। কিন্তু তাতে কী? পদ্মের ছবি তাঁর ভেঙে পড়তে বসা মাটির বাড়ির দেওয়ালে! বললেন, ‘‘মনে পদ্ম। দেওয়ালে পদ্ম। এর পরে ভোটের বাক্সেও।’’ তা হলে বাড়ি? উত্তর এল, ‘‘মোদীজি থাকলে হবে। চাষির অ্যাকাউন্টে টাকা আসছে তো।’’

এক দিকে দুই প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বীর জোট। অন্য দিকে চৌকিদার। এক দিকে কাজ না হওয়ার ক্ষোভ। অন্য দিকে গাঁধী পদবির মহিমা। সঙ্গে দু’পক্ষের প্রচারেই হিন্দুত্বের মিশেল, এসপির একাংশের সঙ্গে বরুণদের দীর্ঘ দিনের বোঝাপড়ার কানাঘুষো আর মূলত মুসলিম ভোট কাটতে মাঠে নামা শিবপাল যাদবের প্রগতিশীল সমাজবাদী পার্টি। সব মিলিয়ে পিলিভিটে লড়াই জমজমাট। শেষ হাসি কার? উত্তর ২৩মে।

Varun Gandhi Narendra Modi BJP Lok Sabha Election 2019
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy