দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
দিল্লিতে কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘‘আসলে এই বার্তা মমতা-মায়াবতী থেকে কে চন্দ্রশেখর রাও, জগন্মোহন রেড্ডি, নবীন পট্টনায়কদের জন্যও। আমাদের হিসেব অনুযায়ী, শেষ তিন জনের সমর্থন ছাড়া বিজেপিও কোনও ভাবে সরকার গড়তে পারবে না। সে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহরা যতই বিজেপির তিনশো পারের গল্প শোনান। কর্নাটকে বড় দল হয়েও কুমারস্বামীকে মুখ্যমন্ত্রী পদে সমর্থন করেছেন রাহুল। কিন্তু সরকারের চাবিকাঠি অনেকটাই কংগ্রেসের হাতে। তেমন কোনও পরিস্থিতি কেন্দ্রে তৈরি হলে সেই অঙ্কও মানতে রাজি দল।’’ একই সুরে পি চিদম্বরমও আজ বলেন, ‘‘ছয় দফার ভোটের পর এটি স্পষ্ট, পরের সরকার তৈরি হচ্ছে অ-বিজেপি দলগুলিকে নিয়ে। যাতে কংগ্রেসও শামিল হবে।’’
কে চন্দ্রশেখর রাও ক’দিন আগে থেকেই কেন্দ্রে অ-বিজেপি ও অ-কংগ্রেসি সরকার গড়া নিয়ে ফের তৎপরতা শুরু করেছেন। আবার একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, সরকার গড়তে কংগ্রেসের সমর্থন নিতে আপত্তি নেই তাঁর। কিন্তু বিরোধী শিবিরের সকলেই জানেন, নরেন্দ্র মোদীর হাতে তামাক খাওয়ার দুর্নাম কুড়িয়ে ইতিমধ্যেই নিজের বিশ্বাসযোগ্যতা খুইয়েছেন চন্দ্রশেখর। যদিও এ বার তাঁর উপ-প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বাসনা রয়েছে। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন জগন। ফলে তাঁদের কাছে টানতে চাইছেন সনিয়া। যে ভাবে গত কাল থেকে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ জুটি ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক হয়ে মমতার পাশে দাঁড়াচ্ছে কংগ্রেস, তার পিছনেও দলের একটি কৌশল রয়েছে। যাতে মোদী-শাহ এবং কমিশনকে ‘অভিন্ন প্রতিপক্ষ’ করে বিরোধী জোটকে আরও আটোসাঁটো রাখা যায়। যাতে ২৩ তারিখে ফল প্রকাশের পরেই সব বিরোধী মিলে রাষ্ট্রপতির কাছে যেতে পারে।
কিন্তু গুলাম নবি আজাদ যা বলেছেন, সেটাই কি দলের অবস্থান? এআইসিসি-র মঞ্চ থেকে কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘দেশের জনতাই মালিক। তাঁরা যা নির্দেশ দেবেন, কংগ্রেস মাথা পেতে নেবে। ভোটের ফল পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তার পর আমাদের কাউকে ‘বিরোধী দল’ বলতে পারবেন না।’’ বিজেপি অবশ্য বলছে, এ সব তো কংগ্রেসেরই হতাশা। ২৩ মে ফল প্রকাশের পরে এই যাবতীয় তোড়জোড়ে জল পড়বে। নবীন পট্টনায়ক ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেছেন। শরদ পওয়ার বৈঠক করেছেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। প্রয়োজন হলে বাকি আঞ্চলিক দলগুলিও বিজেপিরই সঙ্গে থাকবে। তবে তার প্রয়োজন হবে না বলে প্রকাশ্যে দাবি করছেন মোদীর দলের নেতারা।
অরুণ জেটলিও আজ এক ব্লগ লিখে বিরোধী জোটকে একহাত নিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিরোধী দলগুলির মধ্যে অভিন্ন বিষয় একটাই— নেতিবাচক মনোভাব। তাদের কোনও বিষয়েই ঐকমত্য নেই। গোটাটাই ছত্রভঙ্গ অবস্থা। বৈঠকও ডাকতে পারছে না ভয়ে। পাছে সকলে না-আসে। ফল প্রকাশের পরেও এরা যে একজোট হবে, তারই বা কী নিশ্চয়তা আছে?’’ আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব যদিও আজই জানিয়ে দিয়েছেন, নতুন সরকার গড়তে জোট বাঁধবে প্রগতিশীল দলগুলি। আর তাতে কেন্দ্রীয় ভূমিকা নেবেন রাহুলই। লালু-পুত্র বলেন, ‘‘রাহুলজি দেশের প্রাচীনতম দলের সভাপতি, ১৫ বছরের সাংসদ, তাঁর নেতৃত্বে পাঁচটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কাজ করছেন। তিনি কি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর থেকে যোগ্য নন?’’