Advertisement
০১ এপ্রিল ২০২৩
general-election-2019-journalist

হাতির হানা থেকে বাঁচালে তবেই ভোট!

জামশেদপুর থেকে ঘাটশিলা যাওয়ার পথে দলমা পাহাড়ের গা ঘেঁষে ছোট ছোট গ্রাম— ভিলাপাহাড়ি, টুডিয়াবেড়া, শিমুলডাঙা, ঘুটিয়ারি। গ্রামগুলো ঘুরলে মনে হবে যেন যুদ্ধবিধ্বস্ত গ্রাম।

হাতির হানার শিকার দলমার ভিলাপাহাড়ি গ্রামের একটি বাড়ি। ছবি: পার্থ চক্রবর্তী

হাতির হানার শিকার দলমার ভিলাপাহাড়ি গ্রামের একটি বাড়ি। ছবি: পার্থ চক্রবর্তী

আর্যভট্ট খান
দলমা শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:২৯
Share: Save:

হাতির আক্রমণ থেকে রক্ষা করুন। তা না হলে কেউ ভোট পাবেন না।— ভোট চাইতে এলেই ‘ভোটবাবুদের’ এই কথাটাই সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা, সোনামুখী বাগতি। সোনামুখী জানিয়ে দিচ্ছেন, হাতি তাড়ানোর অস্ত্র হিসেবে কতগুলো সুতলিবোমা দিয়ে আর তাদের ভোলানো যাবে না।

Advertisement

জামশেদপুর থেকে ঘাটশিলা যাওয়ার পথে দলমা পাহাড়ের গা ঘেঁষে ছোট ছোট গ্রাম— ভিলাপাহাড়ি, টুডিয়াবেড়া, শিমুলডাঙা, ঘুটিয়ারি। গ্রামগুলো ঘুরলে মনে হবে যেন যুদ্ধবিধ্বস্ত গ্রাম। সন্ত্রাবাদীদের বোমার আঘাতে কোনও ঘরের দেওয়াল ভেঙে গিয়েছে, কোনও ঘরের দরজা ভেঙে গিয়েছে, এমনকি, বেঁকেচুরে গিয়েছে লোহার দরজাও। ভিলাপাহাড়ির বছর পঁয়ত্রিশের গৃহবধু সরিতা চালক বলেন, ‘‘দরজা ভেঙে ঘরের ভেতরে ঢুকে পিষে মেরে দেয় ঘুমন্ত মানুষকে।’’

এই তো দু’দিন আগের কথা। ভিলাপাহাড়ির গ্রামের বাসিন্দারা বাইরের দাওয়ায় বসে হাওয়া খাচ্ছিলেন। এমন সময় জঙ্গলের ভেতর থেকে একটা শনশন শব্দ। কিছু বোঝার আগেই একেবারে সামনে চলে আসে গজরাজ। সরিতাদেবী বলেন, ‘‘কোনও রকমে পালিয়ে বাঁচি। যে খাটিয়াটায় আমরা বসেছিলাম সেই খাটিয়াকে শুঁড়ে করে পেঁচিয়ে কয়েক ফুট দূরে ছুড়ে ফেলে দিয়ে হাতিটা আমার বাড়ির দেওয়াল ভেঙে ঘরে ঢুকে পড়ে। ঘরে ধানের বস্তা রাখা ছিল। ধানের গন্ধেই এসেছিল সে।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

Advertisement

একই অভিযোগ দলমা পাহাড়ের তলায় ঘুটিয়ারি গ্রামের শান্তি সিংহের। তিনি জানান, তাঁরও ঘরে রাখা ধানের বস্তার ধানের গন্ধ পেয়ে রাত ১টায় হানা দিয়েছিল হাতি। সপ্তাহখানেক আগের কথা। তখন ঘরে চৌকিতে শুয়েছিলেন তাঁর ছোট মেয়ে ও মা। কাউকে রেয়াত করেনি হাতি। শুঁড়ে দিয়ে চৌকি উল্টে দেয়। ঘুম ভেঙেই চোখের সামনে হাতি দেখেও মাথা ঠান্ডা রেখে কোনও রকমে ঘর থেকে পালায় দু’জনে। শেষ পর্যন্ত সুতলি বোমা ফাটিয়ে হাতি তাড়ানো হয়।

হাতিই যে তাঁদের আসল মাথা ব্যথার কারণ, জামশেদপুর লোকসভা কেন্দ্রের গ্রামগুলিতে প্রচারে বেরিয়ে ভালই বুঝতে পারছেন দুই প্রধান প্রতিপক্ষ, বিজেপির বিদ্যুৎ মাহাতো ও কংগ্রেস-জেএমএম জোট প্রার্থী চম্পাই সোরেন। এক কর্মীসভায় বিদ্যুৎ মাহাতো গোলা গোলা আশ্বাস দিয়েছেন, ‘‘মোদিজীর ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’ কর্মসূচিতে হাতি হানাদারির গ্রামগুলিতে আমরা বনদফতরের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেব।’’ কিন্তু এই প্রতিশ্রুতিতে ভরসা রাখতে পারছেন না গ্রামবাসীরা।

ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার জেলা পরিষদ সদস্য পিন্টু মণ্ডল স্বীকার করছেন, ‘‘বিজেপি, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা অথবা কংগ্রেস সবারই এই ব্যাপারে গা ছাড়া মনোভাব।’’ পিন্টুবাবু নিজেই ভুক্তভোগী। হাতির হাত থেকে বাঁচতে তিনি নিজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিজেই করে নিয়েছেন। ভিলাইপাহাড়ি গ্রামে তাঁদেরই কেবল বড় পাকা বাড়ি। বাড়ির দরজায় পিন্টু সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়েছেন। তিনি জানান, দিন কয়েক আগে তাঁর বাড়ির লোহার গেট ভেঙে হাতি ঢুকে পড়েছিল বাগানে। ছাদ থেকে পটকা ফাটিয়ে হাতি তাড়িয়েছেন। আর হাতি যে গেট ভেঙে ঢুকছে তা তিনি সিসিটিভি দেখেই সতর্ক হয়ে যান।

কিন্তু সবাই তো পিন্টু মণ্ডল নন, গ্রামের সাধারণ গরিব মানুষদের কে বাঁচাবে এই হস্তি-হানা থেকে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.