Advertisement
০৫ মে ২০২৪

পশ্চিমের ঝড়ের মুখও প্রিয়ঙ্কা 

প্রবল ধুলো-ঝড়ে পাশের জনকেই ঠিক মতো ঠাওর করা যাচ্ছে না। তার মধ্যে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার আবির্ভাব হবে কোথা থেকে?

বাজে আবহাওয়ার কারনে সহারনপুরে রাহুল গাঁধী আর প্রিয়ঙ্কা গাঁধীর সভা বাতিল। ছবি পিটিআই।

বাজে আবহাওয়ার কারনে সহারনপুরে রাহুল গাঁধী আর প্রিয়ঙ্কা গাঁধীর সভা বাতিল। ছবি পিটিআই।

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
সহারনপুর শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:২৪
Share: Save:

সকালের ঝলমলে মুখটা আচমকাই গোমড়া হয়ে গেল। সুয্যিমামা মুখ লুকোতেই দমকা হাওয়া। তার পরেই ঝড়।

মাইকে এতক্ষণ ধরে রাজনীতির ‘স্থানীয় শিল্পী’রা যে যাঁর মতো করে গলা সাধছিলেন। কখনও নরেন্দ্র মোদীকে গাল পেড়ে, কখনও বা বহেনজিকে। মধ্যসপ্তকের সা থেকে তারসপ্তকে চড়ছেন। আর ফিরছেন না। যাঁর যেমন কেরামতি। ঝড় আসতেই কোথা থেকে শুরু হল স্লোগান: ‘‘প্রিয়ঙ্কা নেহি আঁধি হ্যায়, নয়ি রোশনি লায়ি হ্যায়।’’

প্রবল ধুলো-ঝড়ে পাশের জনকেই ঠিক মতো ঠাওর করা যাচ্ছে না। তার মধ্যে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার আবির্ভাব হবে কোথা থেকে? এই প্রলয়ে নতুন ‘রোশনি’ কখন আসবে, তা-ও জানা নেই। কিন্তু প্রিয়ঙ্কাকে নিয়ে উন্মাদনা এতটাই। হাওয়ায় তখন লন্ডভন্ড হয়ে যাচ্ছে প্যান্ডেল। মঞ্চের শামিয়ানাও উড়ে যাচ্ছে। মাথার উপর যে কোনও সময় ভেঙে পড়তে পারে প্যান্ডেলের অংশ। বেশ কয়েক জন ছুট দিয়েছেন। কিন্তু ভয়-ডর না করে কিছু ‘উন্মাদ’ তখনও স্লোগানে মত্ত।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

আজ থেকেই পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে যৌথ সভা করার কথা ছিল রাহুল গাঁধী-প্রিয়ঙ্কার। সহারনপুর, শামলি, বিজনৌর। তার মধ্যে সহারনপুরেই কংগ্রেসের ওজনদার প্রার্থী। ইমরান মসুদ। গত ভোটে মোদীর প্রবল ঝড়েও যিনি বিজেপির প্রার্থী থেকে মাত্র ৬৫ হাজার ভোটে পিছিয়ে ছিলেন। এই ইমরানই মোদীকে ‘বোটি-বোটি’ করার কথা বলে কুখ্যাত। তিন দিন আগে খোদ মোদী এখানে সভা করে সে কথা স্মরণ করিয়ে গিয়েছেন।

পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের ভার রাহুল গাঁধী এমনিতে দিয়েছেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে। মধ্যপ্রদেশ থেকে তাঁকে বের করে এনে কমল নাথকে স্বস্তি দিতে চেয়েছেন। কিন্তু সকাল থেকে মাইকে একের পর এক নেতা আসছেন, রাহুল-প্রিয়ঙ্কার কথা বলছেন। বিশেষ করে প্রিয়ঙ্কার। কিন্তু এক বারের জন্য ভুলেও সিন্ধিয়ার নাম বেরোল না কারও মুখ থেকে। পূর্ব উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব থাকলেও প্রিয়ঙ্কা পশ্চিমেরও নেতা। ঝড় একটু থামতেই ফের মাইকে ঘোষণা হল, ওলটপালট হওয়া তাঁবু ফের সাজান। রাহুল-প্রিয়ঙ্কা ১৫ মিনিটের মধ্যে আসছেন। আধ ঘণ্টা পরেও অবশ্য একই ঘোষণা হল। আরও এক ঘণ্টা পরেও।

মঞ্চের পিছনে তখন টেনশনে ঘনঘন পায়চারি করছেন প্রার্থী ইমরান মসুদ। একের পর এক ফোনে যোগাযোগ করছেন দিল্লির সঙ্গে। থিকথিকে ভিড় তখন তাঁদের নেতাকে দেখতে উন্মুখ। কিন্তু আকাশ তখনও কালো। ইমরানের থেকে খোঁজ নিয়ে দলের নেতারা বলছেন, ‘‘দু’জনেই এসপিজির নিরাপত্তা পান। কী করে এই আবহাওয়ায় হেলিকপ্টার উড়বে?’’ তখনই খবর এল, পাশেই উত্তরাখণ্ডে ঝড়ের কবলে পড়েছেন দিল্লি বিজেপির সভাপতি মনোজ তিওয়ারি। ঝড়ের মধ্যেই কোনও রকমে হেলিকপ্টার নেমেছে তাঁর। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচেছেন। পশ্চিমের ঝড় কাল থেকেই দিল্লি-সমেত গোটা উত্তর ভারত দাপাচ্ছে।

মঞ্চে তখনও ১৫ মিনিটের ঘোষণা হচ্ছে। আর ফোনে ইমরানের মুখ শুকোচ্ছে। অবশেষে সামনে এসে ঘোষণা করলেন, ‘‘আবহাওয়া খারাপ, হেলিকপ্টার ওড়ার জো নেই। রাহুল গাঁধী আর প্রিয়ঙ্কা গাঁধীর সভা বাতিল। কাল প্রচারের শেষ দিন। চেষ্টা করছি প্রিয়ঙ্কাজির রোড-শো যদি করা যায়।’’ রাজনীতিতে যোগ দিয়ে লখনউতে রোড-শো করেই প্রথম ঝড়টি তুলেছিলেন প্রিয়ঙ্কা।

তা হলে কি কাল রোড-শোতেও তারই পুনরাবৃত্তি হবে? হোক না হোক, পশ্চিমের ঝড়ের মুখও কিন্তু তিনিই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE