Advertisement
E-Paper

মহাসঙ্কটে ইয়েচুরিরা, পণ্ড জোটের ভবিষ্যৎও

রাহুল স্বয়ং ওয়েনাড কেন্দ্রে প্রার্থী হওয়ায় সংখ্যালঘু ভোট মেরুকরণ হয়ে কংগ্রেসের লাভ হওয়ার সম্ভাবনা।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৯ ০২:৫৬
দলের মধ্যে বিস্তর যুদ্ধ সামলে বিজেপির মোকাবিলায় কংগ্রেসের মতো ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির সঙ্গে সমঝোতার পক্ষে সিলমোহর আদায় করেছিলেন সীতারাম ইয়েচুরি। ছবি: এপি।

দলের মধ্যে বিস্তর যুদ্ধ সামলে বিজেপির মোকাবিলায় কংগ্রেসের মতো ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির সঙ্গে সমঝোতার পক্ষে সিলমোহর আদায় করেছিলেন সীতারাম ইয়েচুরি। ছবি: এপি।

রাহুল গাঁধীর এক সিদ্ধান্তে মাথায় যেন বাজ পড়ল বাম শিবিরের!

প্রথমত, বাংলা ও ত্রিপুরায় দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পরে লোকসভা ভোটে এ বার কেরলেই ভরসা রাখছে বামেরা। গত বার সিপিএম, সিপিআই ও নির্দল মিলে কেরল থেকে ৮টি আসন জিতেছিল তারা। এখন রাহুল স্বয়ং ওয়েনাড কেন্দ্রে প্রার্থী হওয়ায় সংখ্যালঘু ভোট মেরুকরণ হয়ে কংগ্রেসের লাভ হওয়ার সম্ভাবনা। তাতে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বামেদেরই।

দ্বিতীয়ত, দলের মধ্যে বিস্তর যুদ্ধ সামলে বিজেপির মোকাবিলায় কংগ্রেসের মতো ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির সঙ্গে সমঝোতার পক্ষে সিলমোহর আদায় করেছিলেন সীতারাম ইয়েচুরি। কেরলে বাম ও কংগ্রেস যুযুধান শিবির হওয়ায় তাদের মধ্যে বোঝাপড়ার অবকাশ ছিল না। কিন্তু খোদ কংগ্রেস সভাপতি প্রার্থী হওয়ায় এ বার তাঁকেও সরাসরি আক্রমণে যেতে হচ্ছে সিপিএমকে। এবং এ সবের জেরে ভবিষ্যতে কোথাও আর বাম ও কংগ্রেসের সমঝোতা কী ভাবে হবে, সেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে সিপিএম ও বামফ্রন্টের মধ্যে থেকেই।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বিংশ বর্ষে গাঁধী বংশে

• ১৯৭৯: ইন্দিরা গাঁধী, রায়বরলী ও মেডক
• ১৯৯৯: সনিয়া গাঁধী, রায়বরেলী ও বল্লারী
• ২০১৯: রাহুল গাঁধী, অমেঠী ও ওয়েনাড

শবরীমালা-বিতর্কের সময়ে ‘পরম্পরা’র দোহাই দিয়েমন্দিরের দরজা মহিলাদের জন্য না খোলার পক্ষেই সওয়াল করেছিলেন কেরল কংগ্রেসের নেতৃত্ব। তখন থেকেই সে রাজ্যে পিনারাই বিজয়ন, কোডিয়ারি বালকৃষ্ণনেরা বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসের সুর মিলে যাওয়া নিয়ে সরব হয়েছিলেন। এখন রাহুল ওয়েনাডে প্রার্থী হওয়ায় কংগ্রেসের বিজেপি-বিরোধিতার ‘আন্তরিকতা’ নিয়ে আরও জোরালো প্রশ্ন তোলার সুযোগ পেয়ে গিয়েছে গোটা সিপিএম।

রাজনৈতিক শিবিরের বড় অংশেও প্রশ্ন, কেরলে তিরুঅনন্তপুরম আসনে শুধু লড়াইয়ে আছে বিজেপি। সাধারণ ভাবে যা পরিস্থিতি, তাতে রাজ্যের ২০টি আসনই (বাম ও কংগ্রেস যে যতগুলোই জিতুক) ইউপিএ-র ঝুলিতে যাওয়া নিশ্চিত। তা হলে সেখানে রাহুল প্রার্থী হয়ে বিজেপি-বিরোধী বোঝাপড়ায় ফাটল ধরার সুযোগ দিচ্ছেন কেন?বেঙ্গালুরুর এক অধ্যাপক মন্তব্য করেছেন, ‘‘দক্ষিণ ভারতে কংগ্রেসের হাওয়া তুলতে চাইলে রাহুল কর্নাটকে বিজেপির বিরুদ্ধে কোনও আসনে প্রার্থী হতে পারতেন। কিন্তু যেখানে বামেরা বিজেপিকে আটকে দেবে, সেখানে গিয়ে বামেদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর যুক্তি পরিষ্কার হচ্ছে না!’’

সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য প্রকাশ কারাট বলেছেন, ‘‘বিজেপিকে ঠেকানোর জন্য জাতীয় স্তরে কংগ্রেসের যে দায়বদ্ধতা, তার বিরোধী এই সিদ্ধান্ত। কেরলে বিজেপির বিরুদ্ধে মূল শক্তি হিসেবে বামেরাই তো লড়াই করছে। এখন রাহুলকে পরাস্ত করার জন্য আমাদের এলডিএফ-কে লড়াই করতে হবে।’’একই যুক্তি সিপিআইয়ের ডি রাজার। কারাটের মতো কড়া সুরে না হলেও রবিবার কেরলে পৌঁছে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরি বলেছেন, ‘‘এই নির্বাচনে আমাদের অগ্রাধিকার পরিষ্কার। অন্য দলকে ভেবে দেখতে হবে, তাদের অগ্রাধিকার কী এবং জনমানসে কোন বার্তা তারা দিচ্ছে!’’ বাংলায় আসন সমঝোতা ভেস্তে যাওয়া এবং কেরলে রাহুল নিজে প্রার্থী হওয়ার পরে ইয়েচুরির ‘কংগ্রেস-সখ্যে’র লাইন নিয়ে বাম শিবিরে ফের বিতর্ক তৈরির সম্ভাবনা।

নির্বাচন কমিশনের খাতায় জাতীয় দলের স্বীকৃতি ধরে রাখতে গেলেলোকসভার মোট আসনের দুই শতাংশ পেতে হবে বা চার রাজ্য থেকে ৬% ভোট পেতে হবে। রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, কেরলের বাতাবরণে মোদী-বিরোধিতার পাল্লা ভারী। সেখানে মুসলিম ও খ্রিস্টান ভোট বরাবর কংগ্রেস ও বামের মধ্যে ভাগ হয়। সংখ্যালঘুদের ঢালাও সমর্থন পেয়ে ২০০৪ সালে কেরলের ২০টা আসনই জিতেছিল বামেরা। এখন রাহুলকে সামনে রেখে বড় ফায়দা তুলে নিতে পারে কংগ্রেস। কেরলে বামেদের সম্ভাবনা যত কমবে, জাতীয় দলের মর্যাদা রক্ষা তত কঠিন হয়ে পড়বে।

Rahul Gandhi Wayanad Congress CPM Lok Sabha Election 2019
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy