Advertisement
E-Paper

আমি সকলের লোক, বোঝাচ্ছেন রাজনাথ

১৯৯১ থেকে ২০০৯—টানা পাঁচ বার লখনউ থেকে জিতে লোকসভায় পা রেখেছিলেন প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু সেই মুসলিমরাই এ বার ক্ষুব্ধ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর উপরে।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৯ ০৬:৩৯
রাজনাথ সিংহ। ফাইল চিত্র।

রাজনাথ সিংহ। ফাইল চিত্র।

বড়া ইমামবাড়ার আসফি মসজিদে সন্ধ্যার আজানের সুরটা কিছুক্ষণ আগে মিলিয়ে গিয়েছে। টুন্ডে কাবাবির পুরনো দোকানে গলৌটি কাবাবের কড়াইয়ে নীচে আগুনের আঁচ বেড়েছে। এক কড়াইতে পাঁঠার মাংসের কাবাব, পাশের কড়াইতে কিঞ্চিৎ সস্তার মহিষের মাংসের কাবাব। যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে ‘বিফ’ বা গোমাংস নিয়ে কড়াকড়ি থাকলেও মহিষের মাংস বা ‘বাফ’-এ এখনও নিষেধাজ্ঞা নেই। টেবিলে বসে দুই পুরনো ইয়ার নবীন শর্মা ও সলমন রিজভি। এক জনের প্লেটে মাটন কাবাব, অন্য জনের মনপসন্দ বাফ কাবাব। কিন্তু একই প্লেট থেকে পরোটা ছিঁড়ে মুখে তোলেন।

‘‘এটাই লখনউয়ের গঙ্গা-যমুনি তেহজিব। একে অন্যকে সম্মান জানিয়ে সহাবস্থান। এই তো হোলির দিন মৌলবীরা আজানের সময় পিছিয়ে দিয়েছিলেন। আর যদি বলেন নবাবদের কথা, সে তো নবাব আসফউদ্দৌলা থেকে ওয়াজিদ আলি শাহরা নিজেরাই ফুলের হোলি খেলতেন!’’ নবীনের কথার সুর ধরেই সলমন বলেন, ‘‘যোগী আদিত্যনাথ বোঝেন না। কিন্তু অটলবিহারী বাজপেয়ী লখনউের জীবনযাত্রার এই নজাকত বুঝতেন।’’

বুঝতেন বলেই পুরনো লখনউয়ের মুসলমানরাও ভোট দিতেন বাজপেয়ীকে। বিশেষত শিয়া মুসলিমরা। ১৯৯১ থেকে ২০০৯—টানা পাঁচ বার লখনউ থেকে জিতে লোকসভায় পা রেখেছিলেন প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু সেই মুসলিমরাই এ বার ক্ষুব্ধ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর উপরে। লখনউয়ের তখতে বসে গেরুয়াধারী যোগীর ‘আলি-বজরঙ্গবলী’-র মন্তব্য ভাল লাগেনি তাঁদের। যোগী বলেছেন, ‘‘এসপি, বিএসপি, কংগ্রেসের বিশ্বাস আলিতে থাকলে, আমাদের বজরঙ্গবলীতে আস্থা রয়েছে।’’ এর জন্য যোগীকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি তুলেছিলেন শিয়া ধর্মগুরু, মজলিস-ই-উলেমা-এ-হিন্দের প্রধান মৌলানা কালবে জাওয়াত নকভি।

সোমবার, ৬ মে লখনউতে ভোট। যোগী এখনও ক্ষমা চাননি। কিন্তু বাজপেয়ীর পথেই হাঁটতে চাইছেন বিজেপি প্রার্থী রাজনাথ সিংহ। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গত লোকসভা ভোটে লখনউ থেকেই ভোটে জিতেছিলেন। এ বার নিজের ঠাকুর নেতার ভাবমূর্তি ভেঙে ব্রাহ্মণ, কায়স্থর পাশাপাশি শিয়া-সুন্নি মুসলিম, খ্রিস্টানদের ভোট পেতেও উদ্যোগী তিনি।

শনিবার বিকেলে লখনউয়ে প্রচার শেষ হল। তার আগেই একে একে শিয়া, সুন্নি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন রাজনাথ। শিয়া শিক্ষাবিদ, মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের সহ-সভাপতি, অসুস্থ মৌলানা কালবে সাদিককে দেখতে গিয়েছেন। শিয়া পার্সোনাল ল’ বোর্ডের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। দেশের প্রাচীনতম মুসলিম প্রতিষ্ঠান নাদয়া-তুল-উলেমার প্রধান মৌলানা রাবে হাসান নাদয়ির সঙ্গে দেখা করেছেন। লখনউয়ের ইমাম, মৌলানা খালিদ রশিদের মতো সুন্নি নেতাদেরও বাদ দেননি।

তাৎপর্যপূর্ণ হল, কোনও বৈঠকেই রাজনাথের পাশে গোরক্ষপুরের যোগীর দেখা মেলেনি। তার বদলে রাজনাথের সঙ্গে থেকেছেন উপ-মুখ্যমন্ত্রী দীনেশ শর্মা। লখনউয়ের মেয়র থাকার সুবাদে যিনি নবাবের শহরের সংস্কৃতি বোঝেন। ছোটাছুটির ফলও মিলেছে। যে শিয়া ধর্মগুরু যোগী আদিত্যনাথকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি করেছিলেন, সেই মৌলানা কালবে জাওয়াদ রাজনাথকে কার্যত নিজের সমর্থন জানিয়েছেন।

পাঁচ বছর আগে প্রায় ২ লক্ষ ৭০ হাজার ভোটে জিতেছিলেন রাজনাথ। সে বার তাঁর বিরুদ্ধে কংগ্রেসের প্রার্থী রীতা বহুগুণা জোশী এখন বিজেপিতে। রাজনাথের বিপরীতে কংগ্রেস ও এসপি-বিএসপি, দুই শিবিরের প্রার্থীই অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রার্থী দিয়েছে। কংগ্রেস প্রার্থী করেছে আচার্য প্রমোদ কৃষ্ণমকে। ধর্মগুরু কৃষ্ণম উত্তরপ্রদেশের সম্ভালের কল্কি পীঠের পীঠাধীশ্বর। ভোটে লড়ার অভিজ্ঞতা থাকলেও পুরো সময়ের রাজনীতিক নন। মহাজোটের প্রার্থী বিজেপি ছেড়ে সদ্য কংগ্রেসে যোগ দেওয়া শত্রুঘ্ন সিনহার স্ত্রী পুনম। তাঁর হয়ে শত্রুঘ্ন, সোনাক্ষীরা প্রচার করেছেন। দু’জনের কেউই রাজনাথকে বেগ দেওয়ার অবস্থায় নেই। বিজেপি নেতাদের হিসেব, উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ-মায়া জোটের প্রভাব যা-ই হোক না কেন, লখনউতে প্রায় চার লক্ষ ভোটে জিতবেন রাজনাথ।

রাজনাথের নিজের বক্তব্য, ‘‘অটলজির লখনউয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পারা আমার সৌভাগ্য। লখনউ আমার নিজের ঘরবাড়ি। ঘরের লোক তো সঙ্গে থাকবেনই।’’

জয় নিয়ে নিশ্চিত হওয়া সত্ত্বেও তবে রাজনাথ মরিয়া হয়ে মুসলিম ভোট পেতে সক্রিয় হলেন কেন?

হজরতগঞ্জে বিজেপি দফতরে বসে দলের এক নেতা এর ব্যাখ্যা দিলেন। ভোটের পরে বিজেপি একার ক্ষমতায় সরকার গড়ার জায়গায় না থাকলে, বাইরে থেকে অন্য দলের সমর্থন প্রয়োজন হবে। সে ক্ষেত্রে এনডিএ-র সরকার হলেও, মোদীর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে বাধা আসতে পারে। তুলনায় রাজনাথ সিংহের মতো ব্যক্তি গ্রহণযোগ্য মুখ হয়ে উঠতে পারেন। রাজনাথ তাই আগেভাগেই ঘরের মাঠে নিজেকে সব সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্য বলে তুলে ধরতে চাইছেন। মুসলমান, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সঙ্গে সেতুবন্ধন করছেন তিনি। দেখাতে চাইছেন, গেরুয়ার শিবিরের হলেও তিনি সব শিবিরেই গ্রহণযোগ্য।

রাজনাথ অবশ্য মুসলিম নেতাদের সঙ্গে তাঁর বৈঠককে রাজনীতির সঙ্গে জুড়তে রাজি নন। আর প্রধানমন্ত্রীর পদের দৌড়ে তাঁর নাম ওঠা নিয়ে

মুচকি হেসে বলছেন, ‘‘এ সব কাল্পনিক কথা। বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে। নরেন্দ্রভাই মোদীই প্রধানমন্ত্রী হবেন।’’

Lok Sabha Election 2019 Election Phase 5 BJP Uttar Pradesh Rajnath Singh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy