Advertisement
E-Paper

রামদাসের শোকগাথাই সার, আলো পড়ে না তেলঙ্গ টাকলির মুখে

প্রশ্ন শুনে হাসেন গ্রামের মানুষ। ‘‘কী দেখলেন? রাস্তায় পিচ পড়েছে। গাড়ি চলে আসে গ্রাম পর্যন্ত। সেটা দেখেই বোঝা যায় গ্রামের উন্নয়ন হচ্ছে?’’ পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেন জিতন। গ্রামেরই যুবক তিনি।

তাপস সিংহ

শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৯ ১২:৪৬
বিদর্ভে করুণ অবস্থা চাষিদের।—ফাইল চিত্র।

বিদর্ভে করুণ অবস্থা চাষিদের।—ফাইল চিত্র।

বিদর্ভের কৃষকের শোকগাথার প্রথম পংক্তি যিনি লিখে দিয়ে গিয়েছিলেন, তেলঙ্গ টাকলি গ্রামের সেই রামদাস অম্বরওয়াড় মরে বেঁচেছেন। কিন্তু যাঁরা থেকে গিয়েছেন, অথবা আরও নির্দিষ্ট করে বললে, যাঁরা না মরে এখনও বেঁচে আছেন তাঁরা কী ভাবে আছেন?

রামদাসের পরেও এই তেলঙ্গ টাকলি গ্রামের আরও দুই কৃষক আত্মঘাতী হন। তাঁরা হলেন পউশট্টি আকুলবাড় ও মধুকর কারাউলকে। রামদাসের মতোই ঋণের বোঝা ছিল তাঁদেরও মাথায়।সকলেরই বড় সংসার। রোজগার বলতে ভরসা সেই তুলো চাষ। যে বার প্রত্যাশা মতো তুলো হয় না, সে বার মাথায় হাত পড়ে চাষির।

বিদর্ভ অঞ্চলের আরও অজস্র গ্রামের থেকে এই তেলঙ্গ টাকলিএখানেই আলাদা যে, এই গ্রামেই প্রথম ঋণের দায়ে কোনও চাষি আত্মঘাতী হয়েছিলেন। অন্তত বাইরের বিশ্ব তার আগে এই অঞ্চল থেকে এ ধরনের মৃত্যুর কথা শোনেনি। এ ছাড়া তেলঙ্গ টাকলির আলাদা কোনও বৈশিষ্ট নেই।

রামদাসের মৃত্যুর পরে কি কোনও পরিবর্তন এসেছে গ্রামে? এত ‘ভিআইপি মুভমেন্ট’-এর পরেও কি অতীত ভুলতে পেরেছে তেলঙ্গ টাকলি? বলার মতো কোনও উন্নতি হয়েছে?

প্রশ্ন শুনে হাসেন গ্রামের মানুষ। ‘‘কী দেখলেন? রাস্তায় পিচ পড়েছে। গাড়ি চলে আসে গ্রাম পর্যন্ত। সেটা দেখেই বোঝা যায় গ্রামের উন্নয়ন হচ্ছে?’’ পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেন জিতন। গ্রামেরই যুবক তিনি।

দিলীপ লেহান্দ্রে বলেন, ‘‘কৃষকের জন্য সরকার অনেক কিছু করছে শুনতে পাই। আমি নিজে কৃষক। কী পেলাম? আত্মহত্যা করলে সরকার এক লাখ টাকা দেয়। তা-ও কি সবাই পায়? পায় না। কারণ, স্থানীয় প্রশাসনের প্রবণতাই থাকে ওই সব ঘটনাকে অন্য কারণে আত্মহত্যা বলে চালানোর।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

এই অভিযোগও অবশ্য বিদর্ভের নানা প্রান্ত থেকে উঠে আসে। কৃষকের আত্মহত্যার খবর এলে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ সেটা আত্মহত্যা বলে নথিভুক্ত করে বটে, কিন্তু তার পর নানা ভাবে দেখা হয় তার সঙ্গে কৃষির যোগ আছে না নেই। চাষিদের অভিযোগ, বহু ক্ষেত্রেইপ্রমাণ করার চেষ্টা হয়, সেই আত্মহত্যা ব্যক্তিগত কারণে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন নানা কারণে। এর সঙ্গে কৃষিঋণের কোনও সম্পর্ক নেই।এই নিয়ে চলতে থাকে টানাপড়েন।

জলের খোঁজে বাসিন্দারা।—ফাইল চিত্র।

কৃষিজীবী দিলীপের তিন একর জমি আছে। তুলো চাষ হয়।গত বছর তাঁর জমিতে সব মিলিয়ে ১৭ কুইন্টাল তুলো হয়েছিল। কিন্তু তাঁর হিসাবে, প্রতি একরে সাত থকে আট কুইন্টাল তুলো না হলে ভীষণ ক্ষতি। তাঁর কথায়: ‘‘আপনিই ভাবুন, ২৪ কুইন্টালের জায়গায় ১৭ কুইন্টাল তুলো পেলে আমাদের চলবে কী করে? বৃষ্টিও ভাল হয়নি। এই লোকসান কত দিন টানা যাবে? এ জন্যই চাষি ঋণ করে। তা চাষিরা ভাল না থাকলে গ্রাম কী করে ভাল থাকবে?’’

সার কথাটা বলে দেন দিলীপ। গ্রাম ঘুরেও সে কথাই মনে হয়। সিমেন্ট বাঁধানো রাস্তার দু’ধারে আবর্জনা। পানীয় জলের সমস্যা আছে।গ্রামেরই একটি মুদি দোকানে মায়ের সঙ্গে বসেছিলেন মীনা। তাঁর বাবার দোকান। বাবা কাজে বাইরে গিয়েছেন বলে মায়ের সঙ্গে তিনিও বসেন। গ্রামের দোকান যে রকম হয়, চাল-ডাল থেকে চিপস, সস্তার বিস্কুট পর্যন্ত সবই থাকে।

আরও পড়ুন: গ্রামের বুকে বেঁচে আছেন রামদাস, কিন্তু বিদর্ভে এখনও নেভেনি জঠরের আগুন

এ বারেই প্রথম ভোট দেবেন মীনা। কলেজে বিএ প্রথম বর্ষে থাকাকালীনই বছর দু’য়েক আগে পড়া ছেড়ে দিয়েছেন। কেন? ‘‘খরচ অনেক। এই ছোট্ট দোকান চালিয়ে বাবা কী করে পড়ার খরচ জোগাবে?’’

দোকান ভাল চলে না? ভিনদেশির প্রশ্নে অবাক হতে হতেও হেসে ফেলেন মীনা। ‘‘আপনি দেখছেন না গ্রামের অবস্থা? সবাই ধুঁকছে, যেটুকু দরকার সেটুকুই কিনছে মানুষ। আর ভাল কিছু তো দোকানে রাখতে পারব না। আমাদের পুঁজি কোথায়?’’

চাকরির জন্য বাইরে যাবেন না? ‘‘কোথায় যাব? নাগপুর, পুণেতে শপিং মলের শোরুমে যে টাকা মাইনে দেবে তাতে কী হবে? বাড়িতে কী দেব? নিজের কী রাখব?’’ মীনার কথায় আপত্তির সুর। যদিওস্থানীয় বেশ কয়েক জন যুবক নানা কাজ নিয়ে ঔরঙ্গাবাদ, নাগপুর, পুণেতে গিয়েছেন বলে গ্রামের মানুষজন জানালেন।

খরার ছবি স্পষ্ট বিদর্ভে।— ফাইল চিত্র।

ভোট দিতে যাবেন তো এ বার? এটাই যখন প্রথম ভোট? কী চাইবেন ভোট প্রত্যাশীদের কাছে? এ বারের হাসিটা আরও বিষণ্ণ লাগে মীনার। ‘‘ভাবিইনি ও সব নিয়ে! ভোট নিয়ে মাথা ঘামানোর ইচ্ছা নেই। এখনও কেউ আসেনি প্রচারে। এলেও কিচ্ছু চাইব না। চাইব কার কাছে?’’

না, ভোটের প্রচার সে ভাবে শুরু হয়নি এখানে। আর হলেও কি কিছু হবে? কোনও দিন হয়েছে?

গণতন্ত্রের এত বড় পরীক্ষার আগেও ‘পড়া’য় মন নেই তেলঙ্গ টাকলির! রামদাসের উত্তরসূরিদের যে রোজই অনেক বড় পরীক্ষা দিতে হয়!

(ভারতের রাজনীতি, ভারতের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদেরদেশবিভাগে ক্লিক করুন।)

Lok Sabha Election 2019 Vidarbh TelangTakli Suicide village লোকসভা নির্বাচন ২০১৯ Maharashtra
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy