Advertisement
E-Paper

‘প্রেম’ অভিধান! কুকথার তালিকা হাতে সরব মোদী

নরেন্দ্র মোদী কি মরিয়া? তা না-হলে ‘কাজটা ঠিক নয়’ জেনেও মহাভারতের স্মৃতিধন্য কুরুক্ষেত্রের সভায় প্রায় তালিকা ধরে ধরে কেন তিনি আউড়ে গেলেন— ‘‘নর্দমার কীট, পাগল কুকুর, ভস্মাসুর, দাউদ ইব্রাহিম...!’’

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৯ ০৩:১১

খোলা মঞ্চে দাঁড়িয়ে শব্দগুলো উচ্চারণ করা যে ঠিক হচ্ছে না, প্রধানমন্ত্রী বিলক্ষণ জানেন। নিজেই মানলেন সে কথা। বললেন, ‘‘স্কুল-কলেজের বাচ্চারা আমার বক্তৃতা শুনছে। ওরা যেন এই সমস্ত কথা না-শেখে, না-বলে।’’

নরেন্দ্র মোদী কি মরিয়া? তা না-হলে ‘কাজটা ঠিক নয়’ জেনেও মহাভারতের স্মৃতিধন্য কুরুক্ষেত্রের সভায় প্রায় তালিকা ধরে ধরে কেন তিনি আউড়ে গেলেন— ‘‘নর্দমার কীট, পাগল কুকুর, ভস্মাসুর, দাউদ ইব্রাহিম...!’’ দিনের শেষে প্রশ্ন উঠল, তাঁর উদ্দেশে বিরোধী শিবির থেকে কী কী কুকথা উড়ে এসেছে, সেই তালিকাটা কি বিজেপি থেকেই বানিয়ে দেওয়া হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীকে? আরও বড় প্রশ্ন, নিতান্ত অ-মোদীসুলভ
অনুযোগের সুরে কেন তাঁকে বলতে হল, ‘‘আমাকে যখন ওঁরা এই কথাগুলো বলেন, তখন তো কেউ কোনও শব্দ করে না!’’

প্রয়াত রাজীব গাঁধীকে ‘ভ্রষ্টাচারী নম্বর ওয়ান’ বলে গত ক’দিন ধরেই বিরোধী শিবির ও আমজনতার একাংশের নিন্দা কুড়িয়েছেন মোদী। সে-দিন রাজীব-পুত্র রাহুল বলেছিলেন, ‘‘আলিঙ্গন রইল।’’ গত কাল পুরুলিয়ায় এসে কংগ্রেস সভাপতি বলেছেন, ‘‘আমরা ভালবাসা দিয়েই ওঁকে হারাতে যাচ্ছি।’’ আর তার জের টেনে আজ মোদী বলেছেন, ‘‘সত্যের ভূমি কুরুক্ষেত্রে যখন এসেছি, তখন শুনে নিন ওঁদের ভালবাসার অভিধানে কী কী শব্দ আছে। আমাকে বলা হয়েছে ‘সব চেয়ে নির্বোধ প্রধানমন্ত্রী’, ‘জওয়ানদের রক্তের দালাল’।... কংগ্রেসের এক নেতা আমাকে নর্দমার কীট বলেছিলেন, এক জন বলেছিলেন পাগল কুকুর, এক প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী বাঁদরও বলেছিলেন।’’

মোদীর অভিযোগ, কুকথা থেকে রেহাই পাননি তাঁর মা-ও। ‘‘ওঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, আমার বাবা কে? মনে রাখবেন, এ সবই বলা হয়েছে এক প্রধানমন্ত্রীকে। আমাকে টুকরো টুকরো করবে বলেছে, এমন লোককেও টিকিট দিয়েছে কংগ্রেস’’— এ কথা বলার পরেই মোদী প্রশ্ন তুলেছেন, কেন এর জন্য কংগ্রেস নেতাদের কেউ কিছু বলছে না।

গত কাল পশ্চিমবঙ্গে এসে অমিত শাহ দাবি করেছিলেন, মোদীকে আলাদা আলাদা ৫১টি কটূক্তি করেছে কংগ্রেস। সেই তালিকায় আজ জুড়েছে ‘ঔরঙ্গজেব’ ও ‘জল্লাদ’। বারাণসীর বিশ্বনাথ মন্দিরে মোদীর নির্দেশে ৫৫০ টাকার টিকিট চালু হওয়ার পাশাপাশি মন্দিরে যাওয়ার করিডর তৈরির জন্য অনেক মন্দির ভাঙা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন কংগ্রেস নেতা সঞ্জয় নিরুপম। তিনি বলেন, ‘‘ঔরঙ্গজেব কাশীতে মন্দির ভেঙেছিলেন, জিজিয়া কর বসিয়েছিলেন। মোদী ঔরঙ্গজেবের আধুনিক অবতার।’’ আর বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রাবড়ী দেবীর আক্রমণ— ‘‘প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা ওঁকে ‘দুর্যোধন’ বলে ভুল করেছেন। অন্য কিছু বলা উচিত ছিল। উনি তো জল্লাদ, যিনি বিচারক আর সাংবাদিকদের হত্যা করান। এমনমানুষের মন আর আদর্শ তো ভয়ঙ্কর হবে।’’ বিজেপি এবং জেডিইউ নেতাদের ‘নর্দমার কীট’ বলেছেন রাবড়ী। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে আরজেডি-র তৈরি প্যারডি— ‘‘মোদী মোদী? হ্যাঁ পাপা / কোনও উন্নয়ন? না পাপা/ কৃষকেরা খুশি? না পাপা / মহিলারা নিরাপদে? না পাপা / ১০ কোটি চাকরি? না পাপা / (প্রতি অ্যাকাউন্টে) ১৫ লক্ষ? না পাপা / শুধু জুমলা (ভাঁওতাবাজি)? হা হা হা!’’

কংগ্রেস নেতাদের একাংশের দাবি, মোদী নিজেও চান তাঁকে কটূক্তি করা হোক। গুজরাত দাঙ্গার পরে সনিয়া গাঁধী তাঁকে ‘মওত কা সওদাগর’ বলেছিলেন। সেই মন্তব্য অস্ত্র করে ভোটে গিয়ে
মেরুকরণের ব্যাপক ফায়দা তুলেছিলেন মোদী। গুজরাতের গত বিধানসভা ভোটের আগে কংগ্রেস নেতা মণিশঙ্কর আইয়ার মোদীকে ‘নীচ’ বলেছিলেন। সেখানেও সহানুভূতি কুড়িয়েছিলেন মোদী। জোর ধাক্কা খেয়েও বিধানসভা ধরে রেখেছিল বিজেপি। কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘সে বার রাহুল পত্রপাঠ সাসপেন্ড করেছিলেন মণিশঙ্করকে। বিজেপি তাদের কোনও নেতার বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নিতে পেরেছে কি? ভোটের উত্তাপে কোনও দল শালীনতার সীমা ছাড়ালে তা কাম্য নয়। কিন্তু ভোটের চিন্তায় যিনি আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিহত একটি মানুষকে নিয়ে টানাটানি করেন, তাঁর স্ত্রীকে ‘বিধবা’ এবং ‘জার্সি গরু’ বলেন, তাঁরপুত্রকে ‘হাইব্রিড বাছুর’ বলেন— তাঁর মুখে ‘আমাকে ওরা কটূক্তি করছে’ বলে অনুযোগও শোভা পায় না!’’

Rahul Gandhi Narendra Modi Lok Sabha Election 2019
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy