Advertisement
E-Paper

শুক্রবার মাদ্রাসা বন্ধ নিয়মবিরুদ্ধ, অসমের শিক্ষামন্ত্রীর মন্তব্যে বিতর্ক

শুক্রবার মাদ্রাসা বন্ধ রাখার নিয়ম নেই। এ বিষয়ে জারি হয়নি কোনও বিজ্ঞপ্তি। দেশ জুড়ে একই আইন প্রচলিত। ফলে মাদ্রাসাগুলি নিয়মবিরুদ্ধ কাজ করছে। অসমের শিক্ষামন্ত্রীর এই মন্তব্যের পর শুরু হয়েছে বিতর্ক।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ১৫:০৮

শুক্রবার মাদ্রাসা বন্ধ রাখার নিয়ম নেই। এ বিষয়ে জারি হয়নি কোনও বিজ্ঞপ্তি। দেশ জুড়ে একই আইন প্রচলিত। ফলে মাদ্রাসাগুলি নিয়মবিরুদ্ধ কাজ করছে। অসমের শিক্ষামন্ত্রীর এই মন্তব্যের পর শুরু হয়েছে বিতর্ক। যদিও নিজের মন্তব্যেই অনড় শিক্ষামন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। কিন্তু, আইনজীবী ও কংগ্রেস নেতাদের মতে, ১৯৫৫-’৫৬ সালের আইন খতিয়ে না দেখে শুধুমাত্র সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানোর জন্যই এমন মন্তব্য করছেন হিমন্তবিশ্ব।

যদিও আইনের ব্যাখ্যা করে এ দিন আনন্দবাজার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হিমন্ত বলেন, “সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত নয়, এমন মাদ্রাসায় শুক্রবার ছুটি থাকতেই পারে। কারণ, তাদের উপরে সরকারি নির্দেশ খাটে না। কিন্তু, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত মাদ্রাসার ক্ষেত্রে ওই আইন নয়, ১৯৭৯ ও ২০১১ সালের পৃথক আইন প্রযোজ্য হবে। সরকারি মাদ্রাসা মোটেই কোনও সাম্প্রদায়িক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়। সেখানে নমাজ পড়াও চলে না।”

হাইকোর্টের আইনজীবী তথা মানবাধিকারকর্মী আমান ওয়াদুদের দাবি, ‘অসম এডুকেশন রুলস অ্যান্ড অর্ডার্স ১৯৫৫-’৫৬-এর ২০(৫) ধারায় স্পষ্ট বলা রয়েছে, তিন নম্বর ধারার অধীনে স্বীকৃত কর্তৃপক্ষ সংস্কৃত কলেজ, টাইটেল মাদ্রাসা, সিনিয়র মাদ্রাসা, হাই মাদ্রাসা, মধ্য সংস্কৃত স্কুলগুলিকে শনি বা রবিবারের বদলে প্রতিপদ, অষ্টমী বা শুক্রবারে পূর্ণদিবস বা অর্ধদিবস ছুটি দিতে পারে। তাই শুক্রবার মাদ্রাসা বন্ধ রাখার আইন নেই বা মাদ্রাসাগুলি নিয়মবিরুদ্ধ, বেআইনি কাজ করছে বলে ঘোষণা করে শিক্ষামন্ত্রী ভুল ব্যাখ্যা করছেন।

ওই আইন তুলে ধরে কংগ্রেসের মুখপাত্র আব্দুল খালেক বলেন, “যদি শিক্ষামন্ত্রী মনে করেন, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রবিবার বন্ধ থাকা বাঞ্ছনীয়। তবে সকলের সঙ্গে আলোচনা করতে হত। কিন্তু, তিনি সাংবাদিক সম্মেলনে ওই ঘোষণা করে দিলেন।” খালেক জানান, ইংরেজ আমল থেকেই অসমে শুক্রবার করে মাদ্রাসাগুলি বন্ধ থাকে। ১৯৫৫-’৫৬ সালে অসম সরকার আইন এনে তাতে স্বীকৃতিও দিয়েছিল। খালেকের দাবি, “রাজ্যে অব্যবস্থা, নোট বাতিলের হাহাকার থেকে মানুষের নজর ফের সাম্প্রদায়িক দিকে ঘুরিয়ে দিতেই হিমন্তবিশ্ব মাদ্রাসার এত দিনের নিয়ম বদল করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। রাজ্যের মাদ্রাসা বন্ধ রাখা প্রসঙ্গে খামোকা তিনি পাকিস্তান-বাংলাদেশের নামও জুড়ে দিয়েছেন।” কার্যত ওই আইনের প্রতিলিপি এ দিন ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। আসতে থাকে সমালোচনা।

এ দিকে শিক্ষামন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা আনন্দবাজারকে বলেন, “যে আইন নিয়ে এত বিতর্ক তা ধর্মীয় মাদ্রাসা নিয়ে। কারণ, তখনও সরকারি মাদ্রাসা আসেনি। ধর্মীয় মাদ্রাসাগুলি এখনও ওই আইন মেনে নিজেদের ইচ্ছা মতো দিনে ছুটি দিতে পারে। কিন্তু, ১৯৭৯ সালে সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত মাদ্রাসা আসে। আসে নতুন আইন।” তিনি জানান, ২০১১ সালে সরকারিকরণ নিয়ে সংশোধিত আইন আসে। সরকারি মাদ্রাসাগুলি কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ। সেখানে সরকারি নিয়মই মানা হবে। সেখানে অন্য ধর্মের ছাত্র পড়তে পারে বা অন্য ধর্মের শিক্ষকেরাও পড়াতে পারেন। আমি যে নির্দেশ দিয়েছি তা ওই সরকারি, ধর্মনিরপেক্ষ মাদ্রাসা নিয়েই। এখনও রাজ্যে যে সহস্রাধিক বেসরকারি মাদ্রাসা আছে তারা নিজেদের নিয়মেই চলবে। তাদের ক্ষেত্রে ১৯৫৫-’৫৬ সালের আইন মানা হবে।

আরও পড়ুন

কালো টাকার খোঁজে এ বার নজর জনধন অ্যাকাউন্টে

মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, শুধু হাই মাদ্রাসাগুলিই নতুন আইনের আওতায় আসে। সিনিয়র ও টাইটেল মাদ্রাসা আগের আইনেই আছে। হাই মাদ্রাসাগুলি সরকারি নিয়মে রবিবার বন্ধ থাকে। তাদের সংখ্যাও একশোর কাছাকাছি। কিন্তু, অন্য ছ’শো সরকারি মাদ্রাসা ১৯৫৫-’৫৬ আইনের আওতায় থাকায় শুক্রবার বন্ধ থাকতে পারে। এ ছাড়াও রাজ্যে দেড় হাজারের বেশি বেসরকারি মাদ্রাসা আছে। যাদের অনেকেই তানজিন বোর্ডের অধীনে। তাদের উপরে সরকারের কোনও নিয়মই চলে না। শিক্ষামন্ত্রী রমজান মাসে মাদ্রাসা ছুটি দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু, মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের অন্য এক কর্তা জানান, মাদ্রাসাগুলি সরকারি নিয়মেই বছরে ৯৫ দিন ছুটি পায়। তারা গরমের ছুটি ১০ দিন, পুজোয় দু’দিন ছুটি দিয়ে বাকি ছুটি রমজান মাসে দেয়। তারা নিয়ম মতোই কাজ করছে। অতিরিক্ত ছুটি নেয় না।

শুক্রবারে মাদ্রাসা বন্ধ না রাখা প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার নির্দেশ ও মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করে সাংসদ তথা তানজিন বোর্ডের প্রধান বদরুদ্দিন আজমল প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছেন। তাঁর আর্জি, প্রধানমন্ত্রী যেন হিমন্তবিশ্বকে রাজ্যের মানুষের কাছে ক্ষমা চাইতে বলেন। তিনি বলেন, “ইংরেজ আমল থেকে অসম ও গোটা দেশে মাদ্রাসাগুলি শুক্রবার বন্ধ থাকে। কিন্তু, হিমন্ত সরকারি ক্ষমতা দেখিয়ে ওই প্রথা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। সে নির্দেশ না মানলে শাস্তির হুমকিও দিয়েছেন। তাঁর জানা উচিত বিহার বা উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে সরকারি মাদ্রাসাগুলিও শুক্রবার বন্ধ থাকে। মন্ত্রীর এই মনোভাব স্বৈরতান্ত্রিক, হঠকারি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও সাম্প্রদায়িক।” হিমন্তবিশ্ব সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেছিলেন, রাজ্যের মাদ্রাসাগুলি যে শুক্রবার বন্ধ ও রবিবারে খোলা থাকে, তা এতদিন তিনি জানতেন না। আজমলের কটাক্ষ, “কংগ্রেস আমল থেকে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী থাকা এক জনের পক্ষে মাদ্রাসা কবে বন্ধ থাকে তা না জানা লজ্জার ব্যাপার।”

Madrasah Friday Closure Assam Education Controversy Himanta Biswa Sharma
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy