—প্রতীকী চিত্র।
জেরক্সের দোকানের সামান্য আয়ে সংসার চলে কোনওরকমে। একমাত্র ছেলে বিরল রোগে আক্রান্ত জেনে তাই দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন বিশাল দাওরে। কিন্তু সেই রোগের ইঞ্জেকশন, যা কি না আমেরিকায় পাওয়া যায়, তার দাম শুনে মাথায় কার্যত আকাশ ভেঙে পড়েছিল তাঁর। বুঝে গিয়েছিলেন, ঘরবাড়ি, দোকান বেচে দিলেও, কোনও ভাবে ওই বিপুল টাকা জোগাড় করতে পারবেন না। তাই ছেলেকে হারানোর আতঙ্ক বুকে নিয়েই দিন গুনছিলেন। কিন্তু ছেলের দু’বছরের জন্মের ঠিক আগে সেই আতঙ্ক থেকে খানিকটা হলেও রেহাই পেলেন বিশাল। কারণ লটারির মাধ্যমে সুদূর আমেরিকা থেকে বিনামূল্যে ওই ইঞ্জেশন তাঁর হাতে এসে পৌঁছেছে, বাজারে যার দাম ১৬ কোটি টাকা।
মহারাষ্ট্রের নাসিকের বাসিন্দা বিশালের একমাত্র ছেলে শিবরাজ। বয়স এখনও ২ পেরোয়নি। কিন্তু জন্মের কিছু দিন পরেই বিরল রোগে আক্রান্ত হয় সে, চিকিৎসার ভাষায় যার নাম স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রফি (এসএমএ)। এসএমএ একটি জিনগত রোগ। প্রতি ১০ হাজারে ১ জন শিশু এই রোগে আক্রান্ত হয়। এতে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সচল থাকে না। ধীরে ধীরে কাজ করা বন্ধ করে দেয় পেশি। জন্মের কয়েক বছরের মধ্যেই এই রোগে আক্রান্ত শিশুর মৃত্যু হয়। তবুও আশা ছাড়েননি বিশাল। রোগ ধরা পড়ার পর ছেলেকে নিয়ে মুম্বইয়ের হিন্দুজা হাসপাতালে ছুটে যান তিনি। সেখানে স্নায়ু বিশেষজ্ঞ ব্রজেশ উড়ানির সঙ্গে পরিচয় তাঁর।
বিশালকে ওই চিকিৎসকই জানান যে, এই রোগের একমাত্র চিকিৎসা হল জিন প্রতিস্থাপন। তার জন্য জোলজেনস্মা ইঞ্জেকশন দিতে হবে শিবরাজকে। কিন্তু সমস্যা হল, এই ইঞ্জেকশন শুধুমাত্র আমেরিকায় পাওয়া যায়। দাম ১৬ কোটি টাকা। ইঞ্জেকশনের দাম শুনে যখন অথৈ জলে পড়েছেন বিশাল ও তাঁর স্ত্রী, সেই সময় ওই চিকিৎসকই জানান, যে সংস্থা ওই ইঞ্জেকসন তৈরি করেছে, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য স্বেচ্ছাসেবক খুঁজছে তারা, যার উপর সেটি নিয়ে পরীক্ষ নিরীক্ষা হবে। লটারির মাধ্যমে বিজয়ীকে বেছে নেওয়া হবে।
বিষয়টি জানামাত্রই লটারিতে নাম তোলেন বিশাল। ২০২০ সালের ২৫ ডিসেম্বর তাতে বিজয়ী ঘোষিত হয় শিবরাজ। এ বছর ১৯ জানুয়ারি হিন্দুজা হাসপাতালেই তাকে ওই ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। ইঞ্জেকশন নেওয়ার পর শিবরাজ ভালই আছে, তার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তবে এ ক্ষেত্রে ছোট্ট শিবরাজকে সৌভাগ্যবান বলেও মানছেন অনেকে। কারণ পুণের বাসিন্দা ১ বছর বয়সি বেদিকা শিন্দেরও সম্প্রতি একই রোগ ধরা পড়ে। ওই ইঞ্জেকশন নেওয়ার দুমাস পর, গত রবিবার সন্ধ্যায় মারা গিয়েছে সে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy